ঊষার আলো রিপোর্ট : বিগত সরকার পতনের পর নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার কাজের পাশাপাশি ষড়যন্ত্রসহ নানামুখী চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে দেশের নানা স্থানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটছে, যা দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করছে। পরিতাপের বিষয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যম সেসব খবর ভিন্ন আঙ্গিকে বিকৃত করে প্রচার করছে, যা সে দেশসহ বিশ্বের পাঠক-দর্শকদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা দিচ্ছে। শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে দেওয়া বক্তব্যের সময় এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ভারতীয় মিডিয়ার ভূমিকা দুদেশের মধ্যে সম্পর্কে সহায়ক নয়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা এবং ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেছেন, বিগত সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বাস্তবতার নিরিখে হওয়া উচিত। এ বাস্তবতার নিরিখেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বিনির্মাণ করতে হবে এবং তা কন্টিনিউ করে যেতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে নিতে হবে, ভারত অবশ্যই সেটা উপলব্ধি করবে। ইতোমধ্যে হয়তো সেটা করছেও।
ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী, তা বলাই বাহুল্য। আমরা বন্ধু বদলাতে পারি, প্রতিবেশী বদলাতে পারব না। দুদেশের মধ্যকার সুসম্পর্কও একদিনের নয়। বাণিজ্য তো আছেই, পর্যটন ও চিকিৎসার মতো নানা ক্ষেত্রেও দুদেশ একে অপরের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়ে এসেছে। তবে গত রেজিমে আমরা দেখেছি, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক ছিল না। দেশের স্বার্থকে খাটো করে দেখার প্রচেষ্টাও ছিল। ভারতের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। তবে এ ক্ষেত্রে উভয় দেশের নেতৃত্বেরই সদিচ্ছা থাকতে হবে। যেমন দীর্ঘদিন ধরে বেশকিছু বিষয় এখনো আলোচনাধীন রয়েছে। দুদেশের জনগণের প্রত্যাশা, তিস্তাচুক্তি, বাণিজ্য ঘাটতি ও সীমান্ত হত্যার মতো তিনটি বড় অমীমাংসিত বিষয়ের দ্রুত সমাধান হবে। সম্পর্কোন্নয়নের স্বার্থেই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি প্রয়োজন।
ভারত মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহযোগিতা করেছিল এবং অসংখ্য শরণার্থীর প্রতি মানবিক হাত বাড়িয়েছিল। এজন্য ভারত সরকার ও ভারতীয় জনগণের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু পরবর্তীকালে আমাদের বেশকিছু মন খারাপ করা অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা চাই, দুদেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন করে একটি সমতাভিত্তিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে। সম্পর্কের বহুমাত্রিকতায় দিন দিন সুদৃঢ় হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কোনো পক্ষের সদিচ্ছার অভাবে তা যেন নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে দুদেশের সরকারকেই সজাগ থাকতে হবে। একটি রাষ্ট্রে সরকার আসবে, সরকার যাবে; কিন্তু জনগণ সবসময় থাকবে। সম্পর্ক হবে ওই রাষ্ট্রের জনগণ এবং তাদের বৈধ প্রতিনিধিদের সঙ্গে। স্বার্থসমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সবসময় অটুট থাকবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ঊষার আলো-এসএ