ঊষার আলো রিপোর্ট : বর্তমানে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের বাজার করা আর্থিক ও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদের আলুভর্তা ও ডিম-ডাল দিয়ে কোনোভাবে দুবেলা চলত, তারাও এখন প্রায় নিরুপায়। দামের কারণে পুষ্টির চিন্তা দূরে থাক, ডাল-ভাত জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, মসলাসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
বাকি থাকে সবজি; বাজার সিন্ডিকেটের প্রভাবে এতেও এখন হাত দেওয়া কঠিন। অনেকে বলছেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে ‘আগুনে হাত পুড়ে’ যাওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে। অথচ বাজার ঘুরলে কোনো পণ্যেরই অভাব চোখে পড়বে না। দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর খুচরা বাজার সব ধরনের সবজিতে ভরপুর। তবুও দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে।
খাদ্যপণ্য কৃষক থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে চার থেকে পাঁচবার হাতবদল হয়। এতেই দুই থেকে চারগুণ দাম বেড়ে যায়। বস্তুত ফড়িয়া তথা মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, আড়ত এবং সড়কে চাঁদাবাজি দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। খুচরা বাজারে পণ্যের দাম বাড়লেও কৃষক নায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তারা অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ক্রটিপূর্ণ বাজারব্যবস্থার কারণেই মূলত মধ্যস্বত্বভোগী লাভবান হলেও মাঠে কৃষক ও বাজারে ভোক্তারা ঠকছেন। তাদের মতে, দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দালাল-ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য এবং পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধের কোনো বিকল্প নেই। তবে বছরের পর বছর এমন চিত্র দেখা গেলেও সংশ্লিষ্টরা প্রায় নির্বিকার।
এটা ঠিক, করোনা মহামারির রেশ কাটতে না কাটতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এদেশে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী যেভাবে অতিমুনাফার লোভে সবজি, মাছ-মাংসসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, তা সাধারণ মানুষের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। ভোক্তার পকেট কাটতে গিয়ে সিন্ডিকেট চক্র নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রাকেই ফেলেছে হুমকির মুখে।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বাজারে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দূরে থাক, তাদের খুঁজে বের করতেও দেখছি না আমরা। অবৈধ মুনাফা-লাভের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা সমাজের যত প্রভাবশালীই হোক, অবিলম্বে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা না হলে বাজার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।
আমদানিনির্ভর পণ্য ছাড়াও দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য কেন বাড়ছে, এর পেছনে কারা জড়িত, অতিমুনাফার অর্থ কোথায় যাচ্ছে-এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। বাজারে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে, তার রাশ টানতে কর্তৃপক্ষ কঠোর মনিটরিংয়ের পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগীদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবে, এটাই প্রত্যাশা।
ঊষার আলো-এসএ