ঊষার আলো ডেস্ক : নিত্যপণ্যের বাজারে কৃত্রিম সংকট এবং অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করায় ইউনিলিভার ও সিটি গ্রæপসহ ৪৪ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে একই প্রতিষ্ঠান এবং নাম কয়েকবার এসেছে।
কমিশন মনে করে, এসব প্রতিষ্ঠানের কারসাজির জন্যই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
কম্পানিগুলো সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়েছে। সে জন্য প্রতিযোগিতা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে।
কয়েক মাস ধরে দেশে চাল, তেল, আটা, ডিম, মুরগি, সাবান, ডিটারজেন্ট ও টুথপেস্টের বাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার তদারকির পাশাপাশি এসব পণ্যের উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সভা করেছে, যেখানে অস্বাভাবিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ ওঠে।
ভোক্তা অধিদপ্তর ডিমের বাজারে কারসাজিতে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদনও পাঠিয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায়, চালের বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতা কমিশন মামলা করেছে ১৯ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আটা-ময়দার ৮, ডিমের ৬, ব্রয়লার ৬ এবং গুঁড়া সাবান ও সুগন্ধি সাবানের ৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছে কমিশন।
চালের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করায় রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রডাক্টস, বেলকন গ্রæপ, সিটি গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড, আটা-ময়দার জন্য সিটি গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, ডিমের জন্য প্যারাগন পোলট্রি, ডিম ব্যবসায়ী-আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানউল্লাহ্, কাজী ফার্মস গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল ইসলাম, মুরগির জন্য কাজী ফার্মস গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল ইসলাম, প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেড, টয়লেট্রিজ পণ্যের জন্য ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
প্রতিযোগিতা কমিশনের সচিব মো. আবদুস সবুর বলেন, বিভিন্ন অভিযোগে চাল, আটা, মুরগির মাংস, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকারী ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ এবং ২৭ তারিখ থেকে কম্পানিগুলোকে ধারাবাহিকভাবে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত কম্পানিগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়নি।
প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের ১৫ ও ১৬ ধারা অনুযায়ী এ মামলা হয়েছে। ধারা ১৫-তে বলা হয়েছে, বাজারে প্রভাব বিস্তার করে একপক্ষীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তারা শাস্তির আওতায় আসবে। আর ধারা ১৬-তে বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের বাজারজাত বা উৎপাদনে শীর্ষে থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পণ্যের দামে কারসাজি করলে সেই অপরাধও শাস্তিযোগ্য।
চালের বাজারে সংকট সৃষ্টির জন্য কুষ্টিয়ার রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রডাক্ট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রশিদ ও নওগাঁর বেলকন গ্রুপের বেলকন প্রাইভেট লিমিটেডের সত্বাধিকারী বেলাল হোসেনের নামে মামলা করা হয়েছে। একই কারণে বাজারে চাল সরবরাহকারী আরো দুটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অন্যদিকে আটা-ময়দার বাজারেও সংকট তৈরির অভিযোগে সিটি গ্রæপের নামে পৃথক মামলা করেছে প্রতিযোগিতা কমিশন।
ডিমের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগে প্যারাগন পোল্ট্রি লিমিটেড, কাজী ফার্মস গ্রæপ ও ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানউল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
কয়েক মাস ধরে বাজারে চালের দাম বেশি। মাসখানেক আগে মোটা চালের দাম উঠেছিল প্রতি কেজি ৫৫ টাকার ওপরে। একইভাবে চিকন চালের দাম উঠেছিল প্রতি কেজি ৮৫ টাকা পর্যন্ত। বাজারে অভিযান শুরু ও চাল আমদানির কারণে তা আবার কমতে শুরু করেছে।
