ঊষার আলো ডেস্ক : মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যান ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বন্ধের দাবিতে বরিশালে চলছে পরিবহন ধর্মঘট। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) ভোর থেকে দুই দিনের এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘটে সারা দেশের সঙ্গে বরিশালের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাস, লঞ্চ, স্পিডবোট, মাইক্রোবাস এমনকি তিন চাকার অটোরিকশারও দেখা মিলছে না সড়কে। বন্ধ রয়েছে খেয়া পারাপারও। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে বরিশাল নগরীর ফাঁকা সড়ক এখন রয়েছে রিকশার দখলে। জরুরি প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের একমাত্র ভরসা এই রিকশা। আর এ সুযোগে রিকশাচালকরা কয়েক গুণ বেশি ভাড়া হাঁকাচ্ছেন। শনিবার (০৫) নভেম্বর বিভাগীয় শহরটিতে বিএনপির সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, চৌমাথা থেকে সদর রোড পর্যন্ত আসতে রিকশা ভাড়া দিতে হয়েছে ৮০ টাকা। আবার ওখান থেকে চৌমাথা পৌঁছতে আরেক রিকশাচালককে ভাড়া দিতে হয়েছে ৯০ টাকা। এভাবে তার আসা-যাওয়ায় রিকশাভাড়া গুণতে হয়েছে ১৭০ টাকা। অথচ অন্যান্য সময় তার খরচ হতো সর্বোচ্চ ৭০ টাকা।
রূপাতলী হাউজিং থেকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ বোনকে দেখতে যান সোহেলী পারভীন। তিনি জানান, আর কোনো যানবাহন না থাকায় রিকশাই ছিল ভরসা। তবে এ জন্য তাকে ভাড়া গুণতে হয়েছে ১৫০ টাকা। অথচ অন্যান্য সময় আসা-যাওয়ায় রিকশাভাড়া ৫০-৬০ টাকা খরচ হতো।
এদিকে বৃহস্পতিবার পূর্বঘোষণা ছাড়াই বরিশাল-ভোলা রুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরআগে গত ৩০ অক্টোবর বাসমালিক-শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধসহ ৫ দফা দাবিতে ৪ ও ৫ নভেম্বর সব ধরনের তিন চাকার যানের ধর্মঘট ডাকে বরিশাল জেলা মিশুক, বেবিট্যাক্সি, টেক্সিকার ও সিএনজি চালক শ্রমিক ইউনিয়ন। তারও আগে মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যান ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বন্ধের দাবিতে ৪-৫ নভেম্বর অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় বরিশাল বিভাগীয় বাস-মালিক শ্রমিক ফেডারেশন।
ধর্মঘটের কারণে বরিশাল থেকে কোনও রুটে বাস ছাড়ছে না। বাস ছাড়াও ভোলা থেকে বরিশাল রুটে স্পিডবোট ও লঞ্চ চলাচলও বন্ধ থাকায় সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বরিশালের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সকালে বরিশালের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সব কাউন্টার বন্ধ; বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। টার্মিনাল এলাকায় অন্য সময় মাহেন্দ্র-অটোরিকশা চালকদের হাঁকডাক থাকলেও শুক্রবার পরিবেশ ছিলো শান্ত।
টার্মিনালে আসা মো. মাইদুল ইসলাম নামে এক যাত্রীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, জরুরি প্রয়োজনে তার ঢাকা যাওয়া দরকার। কিন্তু কাউন্টারে এসে তিনি জানতে পারেন যে বাস চলাচল বন্ধ। এখন বিকল্প উপায়ে ঢাকা যাওয়ার পথ খুঁজছেন তিনি।
বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মহাসড়কে অবৈধ কোন যানবাহন চলতে পারবে না। কিন্তু ওই নির্দেশ অমান্য করে অবৈধ যানবাহন চলছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল দফতরে আবেদন করেও কোন সাড়া মেলেনি। তাই নথুল্লাহবাদ থেকে বাস ও মাইক্রোবাস বন্ধ রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে বরিশাল নৌ-বন্দর থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। যদিও লঞ্চ বন্ধের বিষয়ে মালিক বা শ্রমিক সমিতির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
একইভাবে বন্ধ রয়েছে বরিশাল-ভোলা, সদর উপজেলার তালতলী বাজার-পাতারহাট রুটের স্পিডবোট। নগরীর কীর্তনখোলা নদীর বেলতলা, চরকাউয়া ও চাঁদমারী ঘাট থেকে খেয়া পারাপারও বন্ধ।
শনিবার (৫ নভেম্বর) বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের কারণেই বাস, মাইক্রোবাস, লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা।
তারা বলছেন, গণসমাবেশে যেন মানুষ আসতে না পারে, সেজন্যই সরকারের চাপে পরিবহন মালিকরা ধর্মঘট ডেকেছে। বিএনপির এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা। তারা বলছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির সঙ্গে ধর্মঘটের কোনো যোগসূত্র নেই।
বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, ৫ নভেম্বরের গণসমাবেশে মানুষ যেন আসতে না পারে সেজন্যই এই পরিবহন ধর্মঘট। তবে বাধা দেওয়ার যত চেষ্টাই করুক না কেন, আমাদের গণসমাবেশ সফল হবে।