ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এর স্তর দিন দিন অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে দেশে পরিবেশগত সংকট বেড়েই চলেছে। ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলন কমিয়ে ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহার না বাড়ালে ভূমিধসসহ নানা সংকট বাড়বে। মূলত যথাযথ পরিকল্পনা না থাকার কারণে সারা দেশে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে এবং পানির অপচয় ঘটছে। এ অবস্থার অবসানে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বস্তুত কেবল ভূগর্ভস্থ পানিই নয়, দেশের সার্বিক পানি ব্যবস্থাপনার চিত্রই ভয়াবহ। রাজধানীতে সরবরাহ করা পানি না ফুটিয়ে পান করা যায় না। চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহকৃত পানি লবণাক্ত। রাজশাহীর পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ। খুলনায় সরবরাহ করা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পানি না ফুটিয়ে পান করা যায় না। রয়েছে লবণাক্ততাও। আর্সেনিক ও লবণাক্ততার কারণে গভীর নলকূপের পানিও নিরাপদ নয়।
দেশের শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে পানির চাহিদা মেটাতে ভূউপরিস্থ উৎসের পানির ব্যবহার বাড়াতে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও তা কেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। মিঠা পানি সমৃদ্ধ বাংলাদেশেও সুপেয় পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকার মানুষ সুপেয় পানিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে রয়েছে। খরার মৌসুমে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও নিরাপদ পানি কেন মিলছে না, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা, বাগেরহাটের মোংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি এলাকায় পানযোগ্য পানি খুবই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে।
স্বাভাবিক অবস্থায় মাটির ৬ থেকে ৭ ফুট নিচেই ভূগর্ভস্থ উৎসে পানি পাওয়ার কথা। বর্তমানে ঢাকায় পানি পেতে ৮০০ থেকে ৮৫০ ফুট বা তারও বেশি নিচে নামতে হচ্ছে। কয়েক দশক ধরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের ৪০ শতাংশেরও বেশি ইউনিয়নে পানিশূন্যতা তৈরি হয়েছে। ফলে এসব এলাকায় খাবার ও সেচের পানির মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। সারা দেশে গ্রামাঞ্চলের এ সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। মাটির নিচের পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য পানি সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানেই পানির জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ সংকটের সমাধানে মানুষকে সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে। পানির অপচয় রোধ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পানিপ্রাপ্তি আরও জটিল হয়ে উঠবে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে এই মূল্যবান সম্পদকে টেকসইভাবে পরিচালনা করতে হবে। দেশের সার্বিক পানি ব্যবস্থাপনার ত্রুটি দূর করতে নিতে হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
ঊষার আলো-এসএ