ঊষার আলো ডেস্ক : আজকাল শিশু–কিশোরদের চোখের স্বাস্থ্য যে দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। আর তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। এত চশমাধারী বাচ্চা কিন্তু আমরা বছর দশেক আগেও আমাদের চারপাশে তেমন দেখিনী। আজকাল উচ্চ ও মধ্যবিত্ত এমন পরিবার খুব কমই আছে, যেখানে চশমাধারী শিশু বা কিশোর নেই। কাজে আমরা সাধারণ বোধবুদ্ধি থেকেই বুঝতে পারছি যে, শিশু–কিশোরদের চোখের অবস্থা তেমন ভালো নয়।
এবার গবেষণার আলোকেই সেই আশঙ্কার সত্যতা দিলেন ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা। হাসপাতালের শিশু চক্ষুরোগ ও স্কুইন্ট (ট্যারা) বিভাগের প্রধান মো. মোস্তফার নেতৃত্বে চক্ষু বিশেষজ্ঞ দলটি ঢাকার ১৯টি স্কুলের মোট ৬ হাজার ৪০১ শিক্ষার্থীর চোখ পরীক্ষা করেন। যার মধ্যে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি শিশুর চোখেই ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়। তাদের সকলকে চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এসকল শিশুরা নার্সারি থেকে দশম শ্রেণিতে পড়ে। শতকরা হিসাবে এ হারকে প্রকাশ করলে বলা যায়, রাজধানীতে প্রতি ১০০ জন ছাত্রের মধ্যে প্রায় ৪০ জনেরই চোখের ত্রুটি রয়েছে।
ফলে স্বীকার করতেই হবে যে এ চিত্র কোনও ভাবেই স্বাভাবিক নয়। তবে ঢাকার তুলনায় সারা দেশের চিত্র বেশ ভালো। তাই বলে দেশের অনান্যা অঞ্চলেও যে এই সমস্যা নেই তা কিন্তু নয়। আশার কথা এই, বরিশাল, নওগাঁ এবং জামালপুরের বিভিন্ন স্কুলের ২৬ হাজার ৩৪৭টি শিশুর চোখ পরীক্ষা করে মাত্র ১৪ শতাংশের চোখে ত্রুটি পাওয়া যায়।
গবেষণায় দেখা যায় গ্রামের তুলনায় শহরের শিশুদের চোখে ত্রুটি বেশি পাওয়া গেছে। আর শহরের তুলনায় রাজধানীতে এ ত্রুটি প্রায় ৩ গুণ। কিন্তু দেখার বিষয় গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষ বেশি সচ্ছল, আর শহরের তুলনায় ঢাকার মানুষ। পুষ্টির অভাব তো আর তাদের হওয়ার কথা নয়। আসল কারণ হল এই শহুরে শিশুদের দীর্ঘ সময় ধরে মুঠোফোন ও কম্পিউটারের মতো ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকে। এসব নিয়ে সঠিক গবেষণা হওয়া দরকার ও তারপর প্রয়োজন সেই অনুযায়ী প্রতিবিধান। একটা পুরো প্রজন্মের এভাবে দৃষ্টিক্ষীণতা বা কোনও প্রকারের ত্রুটি নিয়ে বড় হওয়াটা জাতির জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়।
তবে এসব ত্রুটির অধিকাংশই কিন্তু সময়মতো শনাক্ত করা গেলে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব কিংবা অন্তত ত্রুটিটাকে সেখানেই আটকে দেওয়া যায়। কিন্তু নির্দিষ্ট একটা সময় পর তা আর সম্ভব হবে না। অথচ এসব নিয়ে আমরা বড়ই উদাসীন। উন্নত বিশ্বে স্কুলে গিয়ে গিয়ে শিশুদের চোখ পরীক্ষা করা হয়। আমাদের দেশেও এটা শুরু করতে হবে। তা না হলে দিন দিন এ সমস্যা বেড়েই চলবে।
(ঊষার আলো-এফএসপি)