UsharAlo logo
শনিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন: শিক্ষার্থী হত্যার মামলা বেশি রাজধানীতে

usharalodesk
সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪ ১২:৪৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট :  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে নিহতের ঘটনায় ঢাকায় দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, ট্রাক ও রিকশাচালক এবং শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৭ জন শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

জানা যায়, ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের ২৯টি থানায় ১৫৭টি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলার এজাহারনামীয় আসামির সংখ্যা ১২ হাজার ৭৩৬। মহানগরের বাইরে ঢাকা জেলার দুটি থানায় ১১টি হত্যা মামলায় আরো এক হাজার ২৪৪ জন এজাহারনামীয় আসামি রয়েছে। ৭৭ জন শিক্ষার্থী, ১০ জন ব্যবসায়ী, ছয়জন চাকরিজীবী, আটজন রিকশাচালক, তিনজন ট্রাকচালক, ৯ জন বিএনপিকর্মী, ছয়জন শ্রমিক, দুজন পথচারী ও দুজন গার্মেন্টসকর্মীকে হত্যার ঘটনায় এসব মামলা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে আরো রয়েছেন একজন দর্জি, একজন কাজের মেয়ে, একজন হকার, একজন সিএনজি অটোরিকশাচালক, একজন ভ্যানচালক, একজন সাংবাদিক, একজন ওয়ার্ড বয় ও একজন ফুল বিক্রেতা। হত্যা মামলাগুলোতে পেশা অজ্ঞাত রয়েছে—এমন নিহতের সংখ্যা আরো ৩৭।

হত্যা মামলাগুলো বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ৪২টি মামলা হয়েছে। ২০ জন শিক্ষার্থী, তিনজন ব্যবসায়ী, একজন হকার, একজন সিএনজি অটোরিকশাচালক, একজন ভ্যানচালক, একজন সাংবাদিক, দুজন বিএনপিকর্মী ও অজ্ঞাতপরিচয় ১২ আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় এসব মামলা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে আরো রয়েছেন একজন দর্জি, একজন কাজের মেয়ে, একজন হকার, একজন সিএনজি অটোরিকশাচালক, একজন ভ্যানচালক, একজন সাংবাদিক, একজন ওয়ার্ড বয় ও একজন ফুল বিক্রেতা। হত্যা মামলাগুলোতে পেশা অজ্ঞাত রয়েছে—এমন নিহতের সংখ্যা আরো ৩৭।

হত্যা মামলাগুলো বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ৪২টি মামলা হয়েছে। ২০ জন শিক্ষার্থী, তিনজন ব্যবসায়ী, একজন হকার, একজন সিএনজি অটোরিকশাচালক, একজন ভ্যানচালক, একজন সাংবাদিক, দুজন বিএনপিকর্মী ও অজ্ঞাতপরিচয় ১২ আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় এসব মামলা হয়েছে।

এসব মামলায় আসামি চার হাজার ১৩ জন। মিরপুর মডেল থানায় ২৪টি হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জন শিক্ষার্থী, একজন রিকশাচালক, একজন চাকরিজীবী, একজন পথচারী, একজন বিএনপি নেতা, একজন শ্রমিক এবং পেশা উল্লেখ নেই এমন আটজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এসব মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে এক হাজার ৯৪৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। উত্তরা পূর্ব থানায় ১০টি হত্যা মামলা হয়েছে।

ছয়জন শিক্ষার্থী, একজন রিকশাচালক, একজন দর্জি, একজন চাকরিজিবী এবং অজ্ঞাত পেশার একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এসব মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে এক হাজার চারজন আসামি করা হয়েছে। বাড্ডা থানায় দুজন শ্রমিক, পাঁচজন শিক্ষার্থী, একজন ব্যবসায়ী, একজন চাকরিজীবী, একজন রিকশাচালক ও একজন রাজনৈতিক কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় ১১টি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামি এক হাজার ২০১ জন। সাভার থানায় সাতজন শিক্ষার্থী এবং তিনজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় ১০টি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে এক হাজার ২২২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর থানায় সাতটি হত্যা মামলা হয়েছে। দুজন ট্রাকচালক, দুজন চাকরিজীবী, দুজন শিক্ষার্থী ও একজন ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার ঘটনায় এসব মামলা হয়েছে।

মামলাগুলোতে শেখ হাসিনাসহ ৩৮২ জনকে আসামি করা হয়েছে। কদমতলী থানায় একজন বিএনপিকর্মী, একজন শাটার মিস্ত্রি ও অজ্ঞাত পেশার তিন ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় পাঁচটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৭৭১ জনকে। পল্টন থানায় দুজন রিকশাচালক, একজন শিক্ষার্থী ও একজন যুবদল নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় চারটি হত্যা মামলা হয়েছে। নিউ মার্কেট থানায় চারটি হত্যা মামলা হয়েছে দুজন শিক্ষার্থী ও দুজন ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার ঘটনায়। এই চারটি মামলার মধ্যে দুটি মামলায় আসামি অজ্ঞাত এবং অন্য দুটি মামলায় আসামি ১৩৭ জন।

রামপুরা থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। একজন ব্যবসায়ী, একজন শিশু ও অজ্ঞাত পেশার তিন ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় এসব মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে আসামি দেড় শতাধিক। ধানমণ্ডি থানায় একজন ওয়ার্ড বয়, একজন ফুল বিক্রেতা, একজন শিক্ষার্থী ও একজন ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার ঘটনায় চারটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় একটিতে অজ্ঞাত এবং অন্য তিনটি মামলায় ২৫৮ জন নামীয় আসামি।

আদাবর থানায় একজন গার্মেন্টসকর্মী, একজন এম্ব্রয়ডারি কর্মী, একজন বিএনপি কর্মী ও একজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় চারটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩১৫ জনকে। খিলগাঁও থানায় একজন বিএনপিকর্মী, একজন ব্যবসায়ী ও একজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৯২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

হাজারীবাগ থানায় একজন শিক্ষার্থী ও একজন রিকশাচালক নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। একটি মামলায় আসামি অজ্ঞাত এবং অন্য মামলায় ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। হাতিরঝিল থানায় একজন গাড়িচালক ও দুজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনটি হত্যা মামলায় ২৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। ভাটারা থানায় একজন শিক্ষার্থী ও একজন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি হত্যা মামলায় ৯৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সূত্রাপুর থানায় তিনজন শিক্ষার্থী ও একজন চাকরিজীবী নিহত হওয়ার ঘটনায় চারটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৬১ জনকে আসামি করা হয়েছে। লালবাগ থানায় দুই শিক্ষার্থীকে হত্যায় মামলা হয়েছে। এতে মোট ১২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। বংশাল থানায় একজন শিক্ষার্থী ও দুজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে।

এসব মামলায় ২০৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানায় চার শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগে পৃথক চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৬০৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। শেরেবাংলানগর থানায় একজন রিকশাচালক ও একজন কাঠমিস্ত্রি নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তেজগাঁও থানায় দুজন শিক্ষার্থী ও একজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৮২ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিমানবন্দর থানায় এক শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগে ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পল্লবী থানার একজন পথচারী ও একজন শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।

এসব মামলায় ৮৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। বনানী থানায় একজন রিকশাচালক হত্যার অভিযোগে ৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শাহবাগ থানায় এক শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রমনা মডেল থানায় একজন কাজের মেয়েকে হত্যার অভিযোগে ১৭৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কোতোয়ালি থানায় একজন রিকশাচালককে হত্যার অভিযোগে ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রূপনগর থানার একজন শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগে ১৬৮ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। আশুলিয়া থানায় এক শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগে ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গুলশান থানায় একজন শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগে ৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এসব মামলা সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিটি হত্যা মামলা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রথমে তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার বাদী ও সাক্ষীর কাছে থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করবেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন। নিয়মমাফিকভাবেই তদন্ত কার্যক্রম চলবে।

ঊষার আলো-এসএ