ঊষার আলো রিপোর্ট:কিছু সরকারি অফিস ডিজিটাইজ করলেও এখনো ঘুস-দুর্নীতির প্রবণতা রয়ে গেছে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় বাধা। ব্যবসা সহজীকরণে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও ব্যবসার পুরো প্রক্রিয়া সহজ করা যায়নি। একটি উদ্যোগের শুরু করতে অনেক লাইসেন্স নিতে হয়, যেগুলোর হয়তো কোনো প্রয়োজনই নেই। কিন্তু সেই সব লাইসেন্স নিতে ব্যবসায়ীদের সরকারি অফিসে ঘুরতে হয়। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং জার্মান সহযোগী সংস্থা জিআইজেড আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি রাজধানীর একটি হোটেলে রোববার অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের চারটি খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরু করতে কী কী লাইসেন্স লাগবে এবং সেগুলো কীভাবে পাওয়া যাবে তার বিস্তারিত তথ্য সংবলিত একটি ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জিআইজেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাইকেল ক্লোড। আরও বক্তব্য দেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম।
আলোচকের বক্তব্যে এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, এখনো ব্যবসা করার পরিবেশ সহজ নয়। যেমন ভবন নির্মাণের সময় রাজউকে অ্যামোনিয়া শিট ড্রয়িং জমা দিতে হয়। অ্যামোনিয়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ডিজিটাল বাংলাদেশে অ্যামোনিয়া শিট কেন দরকার? এ রকম আরও শত শত উদাহরণ আছে, যেগুলো কোনো দরকার নেই। এসব শুধু ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতাই তৈরি করছে। ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের যেসব অফিসে যেতে হয় সবাই মেমোরেন্ডাম চায়। রাজউক, তিতাস, বিইআরসি এবং পরিবেশ অধিদপ্তর সবার কেন মেমোরেন্ডাম দরকার? এক জায়গায় মেমোরেন্ডাম দিলে সবাই দেখতে পারবে সে পদ্ধতির প্রচলন দরকার। ব্যবসা সহজীকরণ করতে অ্যানালগ প্রক্রিয়া ডিজিটাল করে দিলেই সব কিছুর সমাধান হবে না। পুরো ব্যবসা প্রক্রিয়াকেই ঢেলে সাজাতে হবে।
বিকেএমইএ’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম উদাহরণ দিয়ে বলেন, নারায়ণগঞ্জ বিসিকের একজন উদ্যোক্তার একটি সনদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুস চাওয়া হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন দিলে তিনি কাজটি করে দেন। কিন্তু সনদ আনতে গেলে নিচের দিকের কর্মকর্তারা বলেন, পরিচালক তার ভাগের টাকা না নিলেও তাদের ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত ওই ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ওই কাজটি করাতে হয়।
বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কাস্টমসে একটা এইচএস কোড ভুল হলে ১০ দিন বন্দরে পণ্য আটকে থাকে। কর্মকর্তারা আতশি কাচ দিয়ে দেখেন, কোথায় ভুল ধরা যায়। কারণ দেরি করাতে পারলে কী হয়, তা আর বলতে চাই না। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজেলের ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে ৪-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। কিন্তু শিল্পকারখানায় জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগের চেয়ে বেশি ডিজেল আমদানি করতে হচ্ছে।
এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোয়াজ্জেম বলেন, শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুস, দুর্নীতি ও হয়রানির কারণে বছরের পর বছর কেটে যায় একটা কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে। তারপরও দেশ এত দূর এগিয়েছে শুধু ব্যবসায়ীদের সাহসের কারণে। এ দেশের ব্যবসায়ীরা এত কষ্ট করে ব্যবসা করছে, তা পৃথিবীতে বিরল।
ঊষার আলো-এসএ