ঊষার আলো রিপোর্ট : ঢাকা শহরে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের চিহ্নিত আবাসিক, বাণিজ্যিক ভবন-স্থাপনার সামনে দৃশ্যমান জায়গায় ‘সতর্কতা নোটিশ’ টাঙাতে বা প্রদর্শন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ঢাকা শহরের আবাসিক, বাণিজ্যিক ভবন-স্থাপনায় পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা, আইন-বিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা, সেজন্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন আদালত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডসহ অতীতের বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করে এ কমিটিকে চার মাসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এবং অগ্নিকাণ্ডের দায়ীদের খুঁজে বের করতে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রবিবার (৩ মার্চ) হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ও আইনজীবী ইসরাত জাহান। আদালতে রিটের পক্ষে তারা নিজেই শুনানি করেন।
আইন কর্মকর্তা অমিত দাশগুপ্ত পরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ কমিটিকে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
এ কমিটির কী কাজ, কী বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে, জানতে চাইলে অমিত দাশগুপ্ত বলেন, ‘অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩ ও বিধি অনুসারে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা, আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন-স্থাপনায় পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখবে এ কমিটি।
গত বছরের অগ্নিকাণ্ডের হিসাব জানতে চান হাইকোর্ট
এদিন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত তানজিনা নওরীনের পরিবারের সদস্যের করা আরেক রিটে আদেশ দেন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।
গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরে বহুতল ভবন, কারখানা ও স্থাপনায় কয়টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, এতে কতজন হতাহত হয়েছে, জানমালের কী কী ক্ষতি হয়েছে এবং অগ্নিকাণ্ডের দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে এ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
প্রত্যেক বহুতল ভবন, কারখানা, স্থাপনায় অগ্নি নিরাপদ কক্ষ ও সিঁড়ি নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩ ও বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড, ২০২০ এর বিধান অনুসারে প্রত্যেক বহুতল ভবন, কারখানা ও স্থাপনায় অগ্নি নিরাপদ কক্ষ ও সিঁড়ি যুক্ত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ঢাকা শহরের আবাসিক এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য চালানোর নির্বিচার অনুমতি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বরাষ্ট্র সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, রাজউক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ রিটে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন, আনীক আর হক। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
আইনজীবী সারা হোসেন পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আদালত যে প্রতিবেদন চেয়েছেন, সে প্রতিবেদন আসলে তার পরিপ্রেক্ষিতে আরো প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আদালতের কাছ থেকে পাব বলে আশা করছি।’
ঊষার আলো-এসএ