# সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিসহ সংস্কার কমিশনের কাছে জন-আকাঙ্খাভিত্তিক ৭৯টি সুপারিশমালা প্রণয়নের দাবি #
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী শাসনের অবসানের পর একটি অন্তর্র্ব্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এই সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের পর একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা।
জন-আকাঙখাক্ষা অনুযায়ী দেশ এখন সংস্কারের পথে যাত্রা শুরু করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ড. বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন এবং পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে এবং ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য-সমন্বয়ে কমিশনগুলো কার্যক্রমও শুরু করেছে।
এদিকে গত ১৭ অক্টোবরে আরও ৪টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেগুলো হলো স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। দেশের অগ্রগতির জন্য স্থানীয় সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলেও প্রথমদিকে এবিষয়ে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
তবে আশার কথা গত ৩১ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠনেরও ঘোষণা দিয়েছেন। কেননা আমরা যদি আমাদের উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে চাই, তবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। সংস্কার কমিশনসমূহের কাছে সুজনের প্রত্যাশা, তাদের ৭৯টি সুপারিশমালা যেন জন-আকাংক্ষাগুলো গুরুত্ব পায়।
বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলিপ কুমার সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা সুপারিশমালাগুলো হলো, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে নিটক ১২টি সুপারিশ, সংবিধান সংস্কার কমিশনের নিকট ৭টি সুপারিশ, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের নিকট ৬টি সুপারিশ, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের নিকট ৫টি সুপারিশ, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের নিকট ৬টি সুপারিশ, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের নিকট ১০টি সুপারিশ, স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের নিকট ৭টি সুপারিশ, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের নিকট ৬টি সুপারিশ,
শ্রমিকঅধিকার বিষয়ক সংস্কার কমিশনের নিকট ১০টি সুপারিশ, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের নিকট ৬টি সুপারিশ, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের নিকট ৯টি সুপারিশ। সুজন বলেছে, যত ধরনের সংস্কারের পথেই হাটি না কেন, যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো পরিবর্তন না আনতে পারি, তবে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না। তাই, সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমুখী করতে হবে।
নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে উগ্রবাদ, সা¤প্রদায়িকতা, নারীর প্রতি বৈষম্য, পরিচয়ভিত্তিক বিদ্বেষ ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার পরিহার ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটাতে হবে।
দেশের রাজনীতিতে বিদ্যমান ‘উইনার-টেক-অল’ বা বিজয়ীদের সবকিছু করায়ত্ত করার ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। বিরোধীদের দমনপীড়নের সংস্কৃতির অবসান হওয়াও জরুরি। পাশাপাশি পার¯পরিক বিরোধিতার পরিবর্তে, পার¯পরিক সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আশাকরি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ রাষ্ট্র-সংস্কারের বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হবে।