মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, এনডিসি, মহাপরিচালক ( গ্রেড-১) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, মাদক বিরোধী অভিযানে গডফাদারদেরও ছাড় হবে না। দেশে যে সব মাদকের গডফাদাররা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা দেয়া হবে। ৫ আগস্টের পর দেশে ১৩ জন মাদকের গডফাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ( ১৭ ডিসেম্বর) খুলনা জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কক্ষে ‘মাদক অপব্যবহার প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথি এনডিসি, মহাপরিচালক ( গ্রেড-১) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান পুলিশ প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যখন অভিযানে যাবেন, তখন অডিওি ও ভিডিও রের্কড করবেন। কোন মাদকের গডফাদারকে আটক করেন তাহলে সে যে হোক তাদেরকে ছাড় দেবেন না। কেউ সুপারিশ করলেও না। কেউ যদি আপনাদের ওপর চাপ সৃস্টি করলে আমাকে সরাসরি ফোন দেবেন। আমি এর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: শেখ কামাল হোসেন, খুলনা পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন, খুলনা বিভাগীয় কমিশানর মো: ফিরোজ সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিএম নূরুজ্জামান ( বিপিএম), খুলনা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব রাফিউল ইসলাম টুটুল। উক্ত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মিজানুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতি: পরিচালক মো: আহসানুর রহমান। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক উফতেষার মোহাম্মদ উমায়ের। এ সময় খুলনার উপজেলার নির্বাহী অফিসার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীরা, মসজিদের ইমাম, মাদক নিরাময় কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা ও স্থানীয় ইলেকট্রি ও প্রিন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিতি ছিলেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ছাত্র যুবকরা স্মার্ট ফোন এর মাধ্যমে বিকল্প এর বিনোদনের জগত বেছে নিচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন অসক্তি মহামারিরুপে বৃদ্ধি পেয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইন জুয়া, পর্ণগ্রাফি, মাদক ব্যবসা পরিচালনা, মাদক প্রাপ্তির তথ্যদি। ছাত্র যুবক মাদক সেবী গ্রুপের অনলাইনে আড্ডায় জীবনের সোনালী সময় পার করে দিচ্ছে অবলীলাক্রমে। খারাপ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।
এ জন্য প্রত্যেক মা-বাবাদের উচিত ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কি করছে, কাদের সাথে আড্ডা মারছে, কখন বাসায় ফিরছেন এসব প্রতি খেয়াল রাখা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো: আহসানুর রহমান বলেন, খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক ২০২২ সালে ৩৬৭ জন আসামীর বিরুদ্ধে ৩৫৩টি মাদক মামলা, ২০২৩ সালে ৩৮১ জন আসামীর বিরুদ্ধে ৩৭৬টি মাদক মামলা, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ২৭৮ জন আসামীর বিরুদ্ধে ২৬৩টি মাদক মামলা রুজু করা হয়েছে।
দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রুজুকৃত মামলায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২০২২২ সালে ১৫ হাজার ১৭০ টি মামলায় ১৫ হাজার ২২১ জন আসামীকে. ২০২৩ সালে ১৯ হাজার ২৩৮টি মামলায় ১৯ হাজার ২৫৩ জন আসামীকে এবং ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১৩ হাজার ৯৯টি মামলায় ১৩ হাজার ১০১ জনকে আসামীকে তাৎক্ষনিক সাজা প্রদান করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক রূজুকৃত ৮৪ হাজার ৪২৯টি মাদক মামলা বিজ্ঞ আদালতে বর্তমানে বিচারধীন রয়েছে।
খুলনা জেলায় এর সংখ্যা রয়েছে ১ হাজার ১০২ টি। বাংলাদেশে সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তৃক ২০২২ সালে ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৫৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে ১ লাখ ৩২১টি মাদক মামলা, ২০২৩ সালে ১ লাখ ২০ হাজার ২৮৭ জন আসামীর বিরুদ্ধে ৯৭ হাজার ২৪১টি মাদক মামলা এবং ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৩৭৬ জন আসামীর বিরুদ্ধে ৫৬ হাজার ১২৭টি মাদক মামলা রুজু করা হয়েছে।
ঊ/আ-এইচআর