UsharAlo logo
রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুসলিম লীগকে ঘায়েল করে আওয়ামী লীগকে প্রথম ক্ষমতায় এনেছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায় : কাজল দেবনাথ

koushikkln
মে ২৬, ২০২৩ ৯:২১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট: ১৯৫৪ সালে প্রথমবারের মত মুসলিম লীগকে ঘায়েল করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ওই সময়ে ৭২টি আসন ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। এই ৭২টি আসন ছিল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। তখন এই সুযোগ আমরা না দিলে আওয়ামী লীগেরই জন্ম হতো না। বঙ্গবন্ধু একক সংখ্যাগরিষ্ট সমর্থনও পেতো না এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধও হতো না। ১৯৫৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যতগুলো ভোট হয়েছে আমরা আওয়ামী লীগের বাইরে ভোট দেইনি। তাই আমাদের সকল দাবী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেনে নিতে হবে।
শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে নগরীর শহীদ হাদিসপার্কে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের ৩০৯টি সংসদীয় আসনের ৭২টি ছিল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। যুক্তফ্রন্টের ওই নির্বাচনে ৭২টি আসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারতো। তখন সিনিয়র নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নিলেন ৭২টি আসন ছেড়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা মুল দলে যাবো। তখন প্রথম বারের মতো মুসলীম লীগকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগকে জিতিয়ে ক্ষমতায় আনা হয়েছিল। এরপর ১৯৭০ সালেও আমাদের একশভাগ ভোট আওয়ামী লীগকে দিয়েছিলাম। ফলে পূর্বপাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে বঙ্গবন্ধুর বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল।’ ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাকিস্তানে প্রথম বাংলাভাষার বিলটি সংসদে আনেন ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, তাকে মাত্র তিন জন বাঙ্গালী সমর্থন দিয়েছিলেন। আর সেই তিনজনই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের। তিনি জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ প্রসঙ্গে বলেন, আসল সর্বনাশ করেছিল জিয়াউর রহমান ৫ম সংশোধনী করে। এতে ৭২ সালের সংবিধানকে ইউটার্ন করে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এরপর এরশাদ রাষ্ট্রিয় ধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। যে কারণে আজ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মত সংগঠনের আবির্ভাব হয়েছে। তিনি সরকারের প্রতি দাবী জানিয়ে আরও বলেন, ‘দেশে যেমন সংখ্যাগরিষ্টদের জন্য মডেল মসিজিদ নির্মাণ করা হয়েছে তেমনি আমাদের জন্য মন্দির, প্যাগোডা ও গীর্জা নির্মাণ করতে হবে। কারণ এগুলো নির্মাণে আমাদেরও দেয়া ট্যাক্সের টাকা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা দেশের টাকা লুট করে বেগমপাড়ায় যায়, মালয়েশিয়ায় যায়, লন্ডনে যায় তারা আরাম আয়েশ করতে যায়। আর যারা ভারতে যায় তারা নির্যাতিত হয়ে যায়, জীবন বাঁচাবার জন্য যায়।’ তিনি হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, আওয়ামী লীগ বা যে দলই হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে গিয়ে ধর্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ট্রা করতে চাইলে আমরা মেনে নেব না, প্রতিবাদ করব।’
এর আগে সকাল ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও। মহানগর সভাপতি বীরেন্দ্র নাথ ঘোষের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তৃতা করেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র আলহাজ¦ তালুকাদর আব্দুল খালেক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী, সংগঠনের সহ-সভাপতি বিজয় কুমার ঘোষ, সহ-সভাপতি ও সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ ও এ্যাড. তাপস পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপ্না রাণী বিশ্বাস বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি হেমন্ত কৈরাশী, ভারত-বাংলাদেশ সম্প্রীতি পরিষদ খুলনা চ্যাপ্টারের চেয়ারপার্সন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. এম এম মুজিবুর রহমান, জাতীয় মহিলা সংস্থা খুলনার চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুনু ইকবাল বিথার, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল হালদার, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণপদ দাস, ঐক্য পরিষদ জেলা কমিটির সভাপতি বিমান বিহারী রায় অমিত, মহানগর সহ-সভাপতি সমর কুন্ডু পূজা পরিষদ জেলা সাধারণ সম্পাদক বিমান সাহা। অনুষ্ঠানে যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক ডাঃ অধ্যাপক শ্যামল দাস ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা। সম্মেলনে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি রবার্ট নিক্সন ঘোষ, ঐক্য পরিষদ মহানগর মহিলা সম্পাদিকা মুক্তি রায়, ঐক্য পরিষদ রূপসা থানা সভাপতি গণেশ চন্দ্র পাল, হরিণটানা থানা সভাপতি অভিজিৎ রায় অভি, পাইকগাছা থানা সাধারণ সম্পাদক দিপ্তি রঞ্জন সেন, খালিশপুর থানা সাধারণ সম্পাদক সমির সরকার, যুব ঐক্য পরিষদ জেলা সভাপতি স্বপন কুমার রায়, ছাত্র ঐক্য পরিষদ জেলা সদস্য সচিব অভিজিৎ সরকার রাহুল।
এরপর খুলনা প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় অধিবেশনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় পুনরায় বীরেন্দ্র নাথ ঘোষকে মহানগর কমিটির সভাপতি এবং গোপাল চন্দ্র সাহাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অপর দুই প্রার্থী থাকলেও তাদের সমর্থনে সঠিক প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী না থাকায় পুনরায় বিমান বিহারী রায় অমিতকে সভাপতি ও অধ্যাপক ডাঃ শ্যামল দাসকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এছাড়াও জন জন বুলেট ঘোষকে মহানগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক, জেলার প্রতিদ্বন্দ্বি দুই প্রার্থী নব কুমার চক্রবর্তিকে জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও মৃনাল কান্তি বিশ্বাসকে যুগ্ম সম্পাদক ঘোষণা করেন কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ।

ঊআ-বিএস