ঊষার আলো রিপোর্ট : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েইে চলেছে। জানা যায়, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নে তৎপরতা চালালেও এগুলো বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এর অন্যতম হচ্ছে অসহযোগিতা। অসাধু ব্যবসায়ীদের বেশি মুনাফার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। বিভিন্ন স্তরে চাঁদাবাজিও চলছে। এসব কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ সমস্যাগুলো বিগত সরকারের আমলে সৃষ্টি হলেও তা বর্তমান সরকারকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রধানত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো হলো-টাকার প্রবাহ হ্রাস, শুল্ক কমানো, সুদের হার বৃদ্ধি এবং বাজার তদারকি জোরদার। এছাড়া আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও কেন কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। বস্তুত সরকারকে এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থায়। এজন্য শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে যাতে কোনো সংকট না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদন খাতে অর্থের জোগান বাড়াতে হবে। সরবরাহব্যবস্থায় সব ধরনের বাধা দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। কেউ যাতে বাজারে কারসাজি করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এক জরিপে দেখা যায়, পণ্য উৎপাদন খরচের ক্রমাগত উচ্চমূল্য, অদক্ষ বাজারব্যবস্থা, পণ্য পরিবহণের উচ্চহার, বাজার আধিপত্য ও উৎপাদনকারীদের খুচরা বাজারে প্রবেশে সীমিত সুযোগ প্রভৃতি কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। গবেষণা তথ্য থেকে আরও জানা যায়, নিত্যপণ্যের দাম ৯ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধির মূল কারণ কম সরবরাহ, অদক্ষ বাজারব্যবস্থা, উচ্চ পরিবহণ খরচ প্রভৃতি। দেশে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের গড় উৎপাদন ব্যয় ৪৯ টাকা ৬০ পয়সা। অথচ গত সপ্তাহে দেশের কোনো কেনো বাজারে তা ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। লক্ষ করা যাচ্ছে, অভিযান চালিয়েও তেমন সুফল পাওয়া যায় না; বরং উলটো বাজারে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বাজারে পণ্যের ঘাটতি থাকলে অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুত করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। সে সুযোগ যাতে তারা না পায়, তা নিশ্চিত করতে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে। দেশবাসী প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যকর ভূমিকা দেখতে চায়। বাজারে কোথায় ও কীভাবে একচেটিয়া প্রভাব তৈরি হচ্ছে, তা চিহ্নিত করে আইনি উদ্যোগ নিতে হবে কমিশনকে। প্রয়োজনে এ কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যাগ নিতে হবে।
বাজার সিন্ডিকেটের সদস্যরা যাতে পার পেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিত্যপণ্যের আমদানিনির্ভরতা কাটাতে নিতে হবে পদক্ষেপ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বাড়তে পারে। সেসব বিবেচনায় নিয়ে আগাম করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার অনেক দেশেই কমেছে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশে কেন কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখে সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা থাকলে বহু পদক্ষেপ নেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব সমস্যার সমাধানে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কাজেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে সমন্বিত পদক্ষেপ।
ঊষার আলো-এসএ