UsharAlo logo
রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের বদলী-দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের দাবি

usharalodesk
জুন ২০, ২০২১ ৮:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের বদলী-দৈনিক ভিত্তিক ও নামের ভুলে বঞ্চিত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের দাবিতে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে রবিবার (২০ জুন) দুপুর ১টায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ইউসুপ আলী স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। পরিষদের আহবায়ক এ্যাড. কুদরত-ই-খুদা ও সদস্য সচিব এস এ রশীদ স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ২০২০ সালের ২ জুলাই ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাটকল বন্ধের এই সিদ্ধান্তে স্থায়ী, বদলী ও দৈনিকভিত্তিকসহ প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক চাকরিচ্যূত হয়েছে। গত এক বছর তারা চরম অমানবিক জীবন-যাপন করছে। শুধু পাটকল শ্রমিকেরাই নয়, পাটশিল্প সংশ্লিষ্ট প্রায় ৩ কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর নেমে এসেছে এর কালো ছায়া। সরকার ৩ মাসের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের ঘোষণা দিলেও এখনো তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। প্রায় ৯০ শতাংশ স্থায়ী শ্রমিক দীর্ঘদিন পর পাওনা পরিশোধের আওতায় এলেও প্রায় ১৮ হাজার ২ শত বদলী শ্রমিক, ৭ হাজার দৈনিকভিত্তিক শ্রমিক ও ১০ শতাংশ স্থায়ী শ্রমিক মিল বন্ধের ১ বছর পূর্ণ হতে চললেও এখনও তাদের পাওনা পায়নি। তাদের প্রাপ্য এরিয়ারের বাইরেও ২০১৯ সালের ৬ সপ্তাহের মজুরী, ২০২০ সালের ঈদুল আজহার বোনাস-সহ বিগত ৫ বছরের উৎসব বোনাসের ডিফারেন্স, ২০২০ সালের জুলাই মাসের প্রথম ২ দিনের ইনক্রিমেন্টসহ মজুরী এখনও বকেয়া। এই বকেয়া পাওনা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার, সরকারের দয়া বা করুণা নয়। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠোর পরিশ্রম করেছে, সেই শ্রমের ন্যায্য পারিশ্রমিকই এখন তাদের পাওনা। মিলের কলোনীতে বসবাসকৃত অসহায় এই শ্রমিকদের শ্রম আইন ভঙ্গ করে অর্থ পরিশোধের আগেই আবাসন থেকে উৎখাত করা হয়েছে। বর্তমানে করোনা মহামারীকালে কর্মহীন হয়ে এই শ্রমিকরা নিজেদের পরিবারের ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। তাদের খাদ্য, চিকিৎসা ও রক্ষণাবেক্ষণ অক্ষম হয়ে পড়েছে এই বেকার শ্রমিকরা। পাটকল লোকসানের দায় শ্রমিকের উপর দিয়ে বলা হচ্ছে, পাটকলগুলো খোলা থাকলে প্রতিবছর ২৪০ কোটি টাকা লোকসান হয়। অথচ বর্তমান সরকারের আমলে ৪৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণ মওকুফ করা হয়েছে। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র বসিয়ে রেখে গত ৭ বছরে ৬২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। মূলত বিজেএমসি, অর্থ ও পাট মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও ভ্রান্তনীতির কারণে লোকসান হয়েছে পাটকলগুলোর। শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) দেখিয়েছে মাত্র ১২শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল লাভজনক করা সম্ভব। কিন্তু সে প্রস্তাবনা বিবেচনায় না নিয়ে পাটকলসমূহ লীজ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তা সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে ধ্বংস করবে। ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিল্প রক্ষা ও পাটকল শ্রমিকদের স্বার্থে কোন অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। এই বাজেটে আমলা, ধনী ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। খুলনাসহ সারাদেশে বন্ধকৃত রাষ্ট্রীয় পাটকল ও চিনিকল পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ এই বাজেটে অনুপস্থিত। দীর্ঘমেয়াদী করোনা ভাইরাসের আঘাত মোকাবিলায় বাজেটে উল্লেখযোগ্য কোন দিকনির্দেশনা নেই। কোন বরাদ্দও নেই। ধনী তোষণ, কর্পোরেট কর কমানো, কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়াসহ আমলা-ধনীদের খুশি করার দিকেই বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

স্মারকলিপিতে দাবী করা হয় (১) বন্ধকৃত সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু করতে হবে। (২) ২০১৩ সালের জুলাই হতে অবসরপ্রাপ্ত, কর্মরত, অস্থায়ী, বদলী শ্রমিকদের বকেয়া প্রদান ও ক্ষতিপূরণ এককালীন পরিশোধ, ২০১৯ সালের ৬ সপ্তাহের বকেয়া মজুরী ও ২০২০ সালের ঈদুল আযহার বোনাস-সহ পূর্ববর্তী ৫ বছরের উৎসব বোনসের ডিফারেন্স এবং জুলাই/২০এর ইনক্রিমেন্টসহ ২ দিনের মজুরী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। (৩) পাট ও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিজেএমসির কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-ভ্রান্তনীতি-লুটপাট বিচার ও মাথাভারি প্রশাসন পোষা বন্ধ করতে হবে। (৪) স্কপের প্রস্তাবনা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ সাপেক্ষে পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেনÑসিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এ্যাড. আ ফ ম মহসীন, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ খুলনা জেলা সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা জেলা সভাপতি মোজাম্মেল হক খান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) খুলনা মহানগর সভাপতি এইচ এম শাহাদাৎ, খুলনা বিভাগীয় আয়কর আইনজীবী ফেডারেশনের সভাপতি এস এম শাহ নওয়াজ আলী, সিপিবি নেতা মিজানুর রহমান বাবু, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট খুলনা জেলা সভাপতি আব্দুল করীম, গণসংহতি আন্দোলন ফুলতলা উপজেলা আহবায়ক মোঃ অলিয়ার রহমান, শ্রমিকনেতা শামসেদ আলম শমসের, আবদুর রাজ্জাক তালুকদার, শামস শারফিন শ্যামন, জামাল মোল্লা, আফজাল হোসেন, সুজন হোসেন, মোঃ নওশের আলী, নাসিম উদ্দিন জয়, আব্দুস সালাম প্রমুখ।
(ঊষার আলো-এমএনএস)