UsharAlo logo
শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রিজার্ভ সামাল দিতে ব্যস্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক

usharalodesk
মার্চ ২৭, ২০২৪ ১:৩১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণ করাসহ ভবিষ্যতে আমদানির গতি স্বাভাবিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্ভব সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বলা যায়, রিজার্ভ সামাল দিতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারক মহলসহ সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু একদিকে রয়েছে দেনা পরিশোধের প্রবল চাপ এবং অপরদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর বড় চ্যালেঞ্জ তো আছেই। আবার আমদানি ব্যয় তথা আমদানির জন্য এলসি খুলতে বিপুল অঙ্কের ডলারের চাহিদা লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনেক বিষয় সামনে রেখে বেশ সাবধানে এগোতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ আপাতত ২ হাজার কোটি ডলারের আশপাশে ধরে রাখতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে নিট রিজার্ভ এ অঙ্কের কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বকেয়া রপ্তানি আয় দেশে আনা ও বেশি দামে হলেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ বাড়ানোর তাগিদও দিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে যাতে আমদানি ব্যয় বেশি না বাড়ে সেজন্য আমদানিতে জোরেশোরে লাগাম টানা হয়েছে। অন্যান্য খাতেও ডলার সাশ্রয় করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।এমনটি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

সূত্র জানায়, আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী গত বছরের জুনে নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ডলার। ওই সময় নানামুখী চেষ্টা করেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রিজার্ভ রাখতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের জুনে নিট রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৯৫৬ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশ কম। রিজার্ভ নিম্নমুখী হওয়াতে আইএমএফ তা কমিয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। সে অনুযায়ী জুনে গ্রস রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ডলার। নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৯৬৮ কোটি ডলার। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুই খাতেই রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ছিল। গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫২৫ কোটি ডলার এবং নিট রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৯৯৯ কোটি ডলার। রিজার্ভ এখন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও জুনের আগে আরও তিনটি বড় দেনা পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনার দুটি কিস্তি এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ধার করা ডলার পরিশোধ করতে হবে। মার্চ ও এপ্রিলের আকুর দেনা পরিশোধ করতে হবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে। মে ও জুনের দেনা শোধ করতে হবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে। এই দুই খাতের দেনা বাবদ প্রায় ২৫০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দেনা বাবদ শোধ করা হয়েছে ১২৯ কোটি ডলার। ফলে আমদানি যেহেতু বাড়ছে, সেহেতু দেনা শোধের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। এছাড়া ব্যাংকগুলো থেকে ডলার ধার নিয়ে রিজার্ভ বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এগুলো ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধ করতে হবে। চলতি মাসেই শোধ করতে হবে সাড়ে ৬ কোটি ডলার। ফলে এসব দেনা শোধ করার পর রিজার্ভ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তবে এর মধ্যে রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসের প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। ঈদ ও রোজার কারণে মার্চ ও এপ্রিলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার আশা করা হচ্ছে। কুরবানির ঈদের কারণে জুনে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি মাসেই ৫০০ কোটি ডলারের ওপরে রপ্তানি আয় এসেছে। যদিও এসব আয়ের বড় অংশই আগের বকেয়া।

এদিকে আমদানির এলসি খোলায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে প্রতি মাসে গড়ে ৫০০ কোটি ডলারে নেমে আসে। কিন্তু জানুয়ারিতে তা বেড়ে ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। আমদানির দায় পরিশোধও বাড়ছে। এতে আগামীতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা আগে যেখানে ৩০ শতাংশ কমেছিল, এখন তা বাড়তে শুরু করেছে। তবে এ খাতের আমদানি এখনও কমছে। ফলে তৈরি পোশাকে রপ্তানি আয় কমে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও এমন আশঙ্কা করা হয়েছে।

এছাড়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি, চিকিৎসা উপকরণসহ নানা খাতে আমদানিতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এসব খাতে আমদানি বাড়াতে হচ্ছে। এসব কারণে রিজার্ভ বাড়ানোটা চ্যালেঞ্জিং।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমেছে। তবে ডলারের দামে এখনও বিশৃঙ্খলা রয়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত দর হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১০ টাকা। কিন্তু এই দামে বেশিরভাগ ব্যাংকেই ডলার মিলছে না। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব ডলারের জোগান দিচ্ছে শুধু সেগুলোই ১১০ টাকা করে কিনতে পারছেন আমদানিকারকরা। এর বাইরে অন্য কোনো ডলার এই দামে পাওয়া যাচ্ছে না। রপ্তানিকারকরা যেসব ডলার আনছেন সেগুলো তারা নিজেরাই খরচ করছেন। ফলে সরকারি ও অন্য বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের ভরসা রেমিট্যান্সের ডলার। এসব ডলার ব্যাংকগুলো কিনছে ১১৬ থেকে ১২৪ টাকা দরে। ফলে আমদানি সংশ্লিষ্ট ডলার আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ খাতে নমনীয়তা দেখাচ্ছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মৌখিকভাবে বলা হচ্ছে বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনতে।

কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে ব্যাংকগুলো বেশি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি দামে কিনবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে। ফলে এ খাতে ব্যাংকগুলোর বড় লোকসান হচ্ছে। তবে টাকার বিনিময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধার নিলে এ সমস্যা হচ্ছে না। কারণ ব্যাংকগুলো সময়মতো সমপরিমাণ ডলার ফেরত পাচ্ছে।

এদিকে রিজার্ভ কমে যাওয়া নিয়ে আইএমএফ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। তাদের শর্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুনে নিট রিজার্ভ রাখতে হবে ২ হাজার ৫৯৩ কোটি ডলার। গ্রস রাখতে হবে ৩ হাজার ১৩ কোটি ডলার। ২০২৬ সালের জুনে নিট রিজার্ভ ৩ হাজার ৪৫৩ কোটি ডলার ও গ্রস রিজার্ভ ৩ হাজার ৮৭৩ কোটি ডলার রাখতে হবে।

আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের রিজার্ভ কমপক্ষে ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান থাকলে তাকে নিরাপদ ধরা হয়। তবে অর্থনৈতিক মন্দা বা খাদ্য আমদানি করতে হলে রিজার্ভ আরও বেশি রাখতে হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ বৈশ্বিক ও দৈশীয় অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এই মন্দা মোকাবিলা করে খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। এ কারণে রিজার্ভ ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের বেশি রাখতে হবে।

সংস্থাটির প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের জুনে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৮ মাসের আমদানির সমান। আগামী জুনে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রিজার্ভ রাখতে পারলে তা আরও কমে ২ দশমিক ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান হবে। ২০২৫ সালের জুনে নিট রিজার্ভ বাড়লেও আমদানি ব্যয়ও বাড়বে। তখন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নিট রিজার্ভ বাড়াতে পারলে তা হবে ২ দশমিক ৮ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান। ২০২৬ সালের জুনে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নিট রিজার্ভ বাড়াতে পারলে তা হবে ৩ দশমিক ৪ মাসের আমদানির সমান।

অর্থাৎ রিজার্ভ বাড়ার ফলে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ কমবে। তখন আমদানিও বাড়বে। কিন্তু রিজার্ভ নিরাপদ মাত্রায় পৌঁছবে না। মূলত রিজার্ভ নিরাপদ স্কোরে নিতে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

ঊষার আলো-এসএ