কক্সবাজারের উখিয়ায় শুক্রবার এক অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন সেখানকার মানুষ। বিশেষ করে সেখানে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে অবশ্যই। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে এদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বিশ্বের দুই বরেণ্য ব্যক্তি প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে করেছেন ইফতারও। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের অবস্থা নিজ চোখে দেখেছেন।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের ভারে ন্যুব্জ। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে আগেই। দেশটিতে বর্তমানে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জটিলতা বেড়েছে। বস্তুত বিষয়টি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুর গুরুত্ব কমে গেছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে সেই শঙ্কা উড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টা খোদ জাতিসংঘ মহাসচিবকেই শরণার্থী শিবিরে আমন্ত্রণ জানিয়ে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করলেন। মহাসচিবের মুখ থেকেই মিলল রোহিঙ্গাদের জন্য ক্রমেই হ্রাসমান তহবিল বৃদ্ধির আশ্বাসও।
বস্তুত যত দ্রুত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের নিজভূমে ফিরতে পারবে, ততই দুপক্ষের জন্য ভালো। কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি সেখানে নানা আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা যেমন সৃষ্টি করেছে, তেমনি সৃষ্টি করেছে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যাও। রোহিঙ্গাদের মধ্যেও অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মাদক ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার-উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে বহু সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে উঠেছে। সংঘটিত হচ্ছে নানা অপরাধ, এমনকি হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত। শুধু ক্যাম্পের ভেতরে নয়, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের শূন্যরেখা এবং আশপাশের দ্বীপে অপরাধীদের ঘাঁটি গড়ে ওঠার তথ্যও রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
শুধু রোহিঙ্গাদের জন্যই নয়, জাতিসংঘ মহাসচিবের এ সফর এদেশের মানুষের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। ঢাকা সফরকালে তিনি দেশে চলমান সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানিয়ে স্পষ্টতই বলেছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সংস্কার ও রূপান্তরের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটি টেকসই ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বদা পাশে থাকবে জাতিসংঘ। দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার মতো সংস্কার প্রচেষ্টায় তার এ আশ্বাস যে বড় প্রাপ্তি, তা বলাই বাহুল্য। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাও জানিয়েছেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিক অবস্থানের কথা। দেশের সংস্কার প্রক্রিয়া এবং রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের সহযোগিতার আশ্বাস বাস্তবে রূপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
ঊষার আলো-এসএ