শিপমেন্টে এখন যেহেতু বেশি দেরি হবে, বায়ার আমাদের উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে বাধ্য করবে। এতে আমাদের খরচ বাড়বে। এই সমস্যা আগামীতে আমাদের ভোগাবে।- বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান
কোটা সংস্কার আন্দোলন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারা দেশে কারফিউ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। বন্ধ রাখা হয় ইন্টারনেট। দেশে-বিদেশে ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের যোগাযোগে নামে স্থবিরতা। কার্যত অচল হয়ে পড়ে দেশ। উৎপাদন ব্যাহত হয় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে। শঙ্কায় রয়েছে কার্যাদেশ ও শিপমেন্ট।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, কারখানা বন্ধ ও পোর্ট জটিলতায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। শিপমেন্টেও তাদের বাড়তি খরচ করতে হবে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় কার্যাদেশ ধরার ক্ষেত্রে দেখা দেবে জটিলতা।
আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ছয়দিনের অচলাবস্থার পর কারফিউ শিথিল করায় ফের উৎপাদনে ফিরছে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প।
বুধবার (২৪ জুলাই) রাজধানী ও গাজীপুরসহ অন্য জেলার কারখানাগুলো খুলে যায়। কারফিউ চললেও পোশাকখাতের কর্মীরা কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে শ্রমিক, মিড লেভেল ব্যবস্থাপনা কর্মী এবং ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে কারখানার পরিচয়পত্রই কারফিউ পাস হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
এর আগে এ খাতের শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতারা মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেন।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, সংঘাতময় পরিস্থিতে কারখানা দুর্ঘটনার স্বীকার না হলেও বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অর্ডার হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে পোর্টে জটিলতা আরও বাড়বে। এতে রপ্তানিকারকরা মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার দাবি উদ্যোক্তাদের।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি আবদুল্লাহিল রাকিব বলেন, ‘সাধারণ ছুটি ঘোষণার কারণে আমরা পাঁচ কর্মদিবস হারিয়েছি। এটা আমাদের বড় ক্ষতি। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় যথাসময়ে শিপমেন্ট করতে পারবো না। এয়ার শিপমেন্টের কারণে আর্থিক ক্ষতি হবে। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত পোর্টকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করে আটকে পড়া আমদানি-রপ্তানি পণ্য দ্রুত খালাস করার ব্যবস্থা করা।’
স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম খালেদ বলেন, ‘চারদিন আমাদের উৎপাদন বন্ধ ছিল। এটা আমাদের পিক সিজন। এখন যেটা প্রোডাকশন হচ্ছে সেটা সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রপ্তানি করবো। সে সময় শীতের পোশাকের চাহিদা থাকে। যেটা আমরা উৎপাদন করতে পারলাম না সেটা আবার রিশিডিউল করতে হবে। এটা একটু কঠিন কাজ। এই জায়গায় আমাদের সাফার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কাজ আজ থেকে কেবল শুরু হয়েছে। আমরা বায়ারদের সঙ্গে কথা বলছি। আজ থেকে ইন্টারনেট সচল হয়েছে। অর্ডার নেগোসিয়েশন কীভাবে হবে, বায়ার আমাদের কী শাস্তি দেবে, আমাদের কতটুকু করতে হবে, এটা বুঝতেও আমাদের এক সপ্তাহ লাগবে।’
পুরাতন বায়াররা এত সহজে ভীত হবে না উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই পিক সিজন বায়ারদের ধরতে হবে। সর্বোচ্চ উৎপাদন করে এই ক্ষতি কত দ্রুত কাটিয়ে নেওয়া যায় সেটা নিয়ে কাজ করছি।’
পোর্টে পণ্য খালাসে ১০-১২ দিন সময় লাগে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই চারদিনের অচলায়তনের কারণে এখন পণ্য খালাস প্রায় ১৫-২০ দিন গিয়ে ঠেকবে। আমাদের ব্যবসার রেপুটেশন, ইমেজ সব কিছু খারাপ হয়ে গেলো। প্রোডাকশন লস, শিপমেন্ট ডিলে- কোনো কিছুই আর বাকি নেই। পোর্টের মালামালগুলো দ্রুত খালাস করা গেলে আমরা কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।’
বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘ইন্টারনেট না থাকায় আমরা অনেক ডকুমেন্টস পাঠাতে পারিনি। সময় মতো টাকা পাবো কি না জানি না। স্যাম্পল পাঠাতে অনেক দেরি হবে। এজন্য অনেক ব্যবসায়ী অর্ডার হারাবে। দেখা যাবে বাংলাদেশের স্যাম্পল সময় মতো পৌঁছাবে না। ভারত বা চায়নার পৌঁছাবে। বায়ার তখন বাধ্য হয়ে অন্যদেরটাই নেবে। এগুলো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা।’
ব্যবসায় সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে এই পোশাক ব্যবসায়ী বলেন, ‘শিপমেন্টে পণ্য পাঠানো সহজ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে পোর্টের অনিয়ম। আগামী ১-২ মাস ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে এ খাত আগের গতিতে ফিরবে।’