মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে(আইসিসি) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি একজন আইনজীবীসহ আরও ২ জন ব্রিটিশ আইনজীবী।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম স্ট্যাটিউটের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে মামলাটি দাখিল করা হয়েছে। এই মামলাটি দায়ের করেছেন ‘৩ বোল্ট কোর্ট চেম্বার্স’-এর ব্যারিস্টার মোঃ আশরাফুল আরেফিন। এই আইনজীবীর সাথে রয়েছেন ব্যারিস্টার সারাহ ফোরে, ব্যারিস্টার এমিল লিক্সান্দ্রু।
মামলা সম্পর্কে অবগত করতে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার এম এ আরেফিন আশরাফুল ও তার সহযোগীরা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলনের সূচনা ঘটে, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে।
এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি হওয়ার পর সরকার এর জবাব দেয় অমানবিক সহিংসতার মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে সরকার পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মতো বাহিনী মোতায়েন করে। এই বাহিনী নির্বিচারে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র—যেমন বার্ডশট পেলেট এবং তাজা গুলি—ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা চালায়।
ইতিহাসের এই বর্বরতম নৃশংসতায় ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
সাবেক বাংলাদেশ সরকারের এই কঠোর ব্যবস্থার ফলে দেশে গণহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং অসংখ্য বিক্ষোভকারী নিখোঁজ হয়েছেন। এই নিষ্ঠুরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের উদাহরণ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
আইনজীবিরা বলেন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এই গুরুতর অপরাধের নিরপেক্ষ তদন্ত করতে সক্ষম হবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত থেকে রাজনৈতিক সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনার কারণে স্থানীয় আদালতে ঘোষিত কোনো দণ্ড কার্যকর হওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতায় বাধ্য হতে পারে।
এই মামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভা এবং সরকারের অন্যান্য প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। আবেদনে উল্লিখিত বিভিন্ন অপরাধের মধ্যে রয়েছে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, গোপন বন্দীশালায় নির্যাতন, চলাচল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধ।
মামলায় ভুক্তভোগীদের উপর সংঘটিত সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং ব্যাপক নিপীড়নের দলিলসহ ব্যাপক প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে সাক্ষী, ভিডিও প্রমাণ এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে। উপরন্তু, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করা হয়েছে।