UsharAlo logo
সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনাসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ

usharalodesk
অক্টোবর ২২, ২০২৪ ১২:২১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৬ নেতার গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছে তাদের পরিবার। সোমবার চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগটি দাখিল করা হয়। বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের আইন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ও আইনজীবী আমানুল্লাহ আদিব। ছয়জন নেতাকর্মী হলেন-শাহ মো. ওয়ালিউল্লাহ, মো. মোকাদ্দেস আলী, হাফেজ জাকির হোসেন, মো. জয়নাল আবেদীন, রেজোয়ান হোসাইন ও মু. কামরুজ্জামান।

ছয় নেতার বিষয়ে বলা হয়, ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিগত কাজ শেষে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী হানিফ এন্টারপ্রাইজের গাড়িতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রশিবিরের সাবেক অর্থ সম্পাদক মো. ওয়ালীউল্লাহ এবং ফিকাহ বিভাগের ছাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল মুকাদ্দাস রওয়ানা দেন। যাওয়ার পথে মধ্যরাতে তাদের আশুলিয়ার নবীনগর থেকে র‌্যাবের পোশাক পরিহিত ব্যক্তিরা গ্রেফতার করেন। ওয়ালি উল্লাহর বাড়ি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায়। মোকাদ্দেসের বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলায়।

২০১৩ সালের ২ এপ্রিল দিবাগত রাত ৪টায় র‌্যাব পরিচয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঢাকা ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজির ছাত্র শ্যামলী রিং রোডের ১৯/৬ টিক্কাপাড়া বাসা থেকে হাফেজ জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তিনি শিবিরের থানা সভাপতি ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায়।

২০১৭ সালের ১৮ জুন বান্দরবান সদরের লেমুঝিনি গর্জনিয়া মসজিদের কক্ষ থেকে বান্দরবান ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ও শিবিরের থানা সেক্রেটারি মো. জয়নাল আবেদীনকে র‌্যাব পরিচয়ে উঠিয়ে নেওয়া হয়। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট দুপুর ১২টায় বেনাপোল পোর্টসংলগ্ন দুর্গাপুর বাজার থেকে বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই নূর আলমের উপস্থিতিতে র‌্যাব পরিচয়ে গ্রেফতার করা হয় বাগাছড়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ও ছাত্রশিবিরের থানা সেক্রেটারি রেজোয়ান হোসাইনকে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে।

২০১৭ সালের ৭ মে ঝিনাইদহের সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা ছাত্রশিবিরের কর্মী কামরুজ্জামানকে ঝিনাইদহ সদরের লেবুতলা থেকে ডিবি পরিচয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বাড়ি ঝিনাইদহ সদরে। এদের আর সন্ধান মেলেনি।

উল্লেখিত সব ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ এনে হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যবসায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে ওই ব্যবসায়ীর পক্ষে অ্যাডভোকেট আমানুল্লাহ আদিব এ আবেদন দায়ের করেন। এছাড়া আসামির তালিকায় রয়েছেন-সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ আইনৃঙ্খলা বাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা। পরে হুমায়ূন কবির জানান, ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর তাকে তুলে নিয়ে ১১ দিন ‘আয়না ঘরে’ বন্দি করে রাখা হয়। এসময় তাকে ইলেকট্রিক শক, হাত-পা, চোখ বেঁধে উলটো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়।

ট্রাইব্যুনালে ড. জাহিদের অভিযোগ : গুম করে চারদিন আয়নাঘরে রেখে নির্যাতন করার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সোমবার ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর আইনজীবী ড. জাহিদুল হক এ অভিযোগ করেন। অভিযোগে জাহিদুল হক বলেন, আমি আইনে পিএইচডি করা একজন আইনজীবী। বাংলাদেশের সুশাসন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলি।

বিশেষ করে দেশে এবং ইন্টারন্যাশনাল ফোরামে লেখালেখি করি। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ডিজিএফআই আমাকে দিয়াবাড়ী তুরাগ থেকে হাত ও চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। আমাকে অত্যন্ত নির্মম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে এবং চোখ, হাত বেঁধে রাখে। মাথা থেকে গলা পর্যন্ত টুপির মতো একটি কাভার দিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল আটকে রাখে।

অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার পর ডিজিএফআই সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা খসরু চৌধুরী, আইপিডিসি ফাইন্যান্সের এমদাদুল রশিদ, জুয়েল ভূইয়া, শাহিনুজ্জামান, শেখ ফারসাদ, মাজেদ হোসেন, মারুফ হোসেন, জহিরুল হক, এমএম মুশফিকুর রশিদ, শফিকুল ইসলাম ও সহযোগীরা আমাকে ক্রসফায়ার দিয়ে মরদেহ গুম করে দেওয়ার হুমকি দেয়।

এ সময় আমার মালিকানায় থাকা আশুলিয়ার একটি পাঁচতলা বাড়ি আইপিডির কাছে মর্টগেজ দলিলে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয় এবং ব্লাঙ্ক নন-জুডিসিয়াল খালি স্ট্যাম্পে ও আইপিডিসির লোগো প্রিন্টটেড কাগজে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। ডিজিএফআই এবং অন্যান্য আসামিরা যোগসাজশ করে আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাকে গুম করে রাখে।

আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করা সব কাগজপত্র ও মর্টগেজ দলিল ব্যবহার করে আইপিডিসির সব আসামি খসরু চৌধুরীর ঢাকা ব্যাংকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক কোটি বিশ লাখ টাকা ট্রান্সফার করে নিয়ে যায়। যার দায়ভার আমার ওপর চাপিয়ে দেয়। ডিজিএফআই বলে এটি আয়না ঘর, এখানে যে একবার আসে মৃত্যু ছাড়া বের হতে পারে না। আমি আমার জীবন বাঁচাতে তাদের কথামতো সব কাগজপত্রে স্বাক্ষর করি। পরবর্তী সময়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি আমাকে কাঞ্চন ব্রিজের কাছে রাত ৮টার দিকে একটি গাড়ি থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় রেখে যায়।

ঊষার আলো-এসএ