ঊষার আলো রিপোর্ট : তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতিকে সরাসরি দায়ী করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, এসএমএস-এর মাধ্যমে সারা দেশে ডিমের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। কারা করে, কীভাবে করে, সব তথ্য আমার কাছে আছে। এই সমিতি ভেঙে দিলে বাংলাদেশে ডিমের বাজার ঠিক হয়ে যাবে।
এ সময় সফিকুজ্জামান মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে ডিমের বাজারদর ঠিক করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেন। ডিম ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রতিটি ডিমের সর্বোচ্চ উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮৮ পয়সা। তাহলে ডিম ১৫ টাকা করে কেন বিক্রি হবে? এটা সম্পূর্ণ বিপণনের সমস্যা। আমাদের অভিযানে উঠে এসেছে, ডিমের দাম বেড়েছে বাজারে ট্রাকে বসে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে কেউ যদি এক লাখ ডিম বাজারে বসে বিক্রি করে, তার এক রাতেই লাভ হচ্ছে এক লাখ টাকা। গ্যাম্বলিংয়েও মনে হয় এত লাভ নেই।
এদিকে গত সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে ডিমের বাজার হঠাৎ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। দাম বেড়ে প্রতিটি ১৫ টাকায় দাঁড়ায়। ঢাকার বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়। ডজন হিসাবে ডিমের দাম উঠেছে ১৬৫-১৭০ টাকায়। এমন প্রেক্ষাপটে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ভোক্তা অধিদপ্তর। সভায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতিকে এসএমএস-এর মাধ্যমে ডিমের দাম বাড়ানোর হোতা হিসাবে উল্লেখ করে এর জবাব চান।
এ সময় তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানউল্লাহ বলেন, ‘জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি সভা করার কথা বলেছিল। এজন্য আমরা ওই সভা করেছি। আমাদের এনএসআই বলেছে, এজন্য আমরা এই সভা করেছি।’
অন্যদিকে ডিমের দাম বাড়ানোর কারসাজিতে যে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির হাত রয়েছে, সেই তথ্য এক সপ্তাহ আগেই দিয়েছিলেন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার। এই সমিতির হাতেই ‘ডিমের বাজারের নিয়ন্ত্রণ’ মন্তব্য করে সুমন বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীদের তারা শুধু জানিয়ে দেয় আজ এত টাকা, কাল এত টাকা। এখানের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা দিনে ও রাতে বাজার বসায়। দিনের বাজার ঠিক আছে। ঘোষণা অনুযায়ী ডিম বেচাকেনা হয়। কিন্তু রাতের বাজারে খামারির কাছ থেকে আনা ডিমের দাম তারা বসিয়ে দেয়।’
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির কাছ থেকে ডিমের দামের এসএমএস পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার একজন খামারিও। নুরুল ইসলাম নামের ওই খামারি বলেন, ‘তেজগাঁও ডিম সমিতি থেকে প্রতিদিন মোবাইল ফোনে মেসেজ আসে যে আজ এত টাকা করে ডিমের দাম। আজ বাড়ছে বা কমছে। সেই মেসেজ অনুযায়ী সরবরাহকারীরা আমদের ডিম কেনে। মানে তারাই মেসেজ দেয়, তারাই কেনে।’
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে তেজগাঁও ডিম সমিতির সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া বলেন, ‘আমরা কখনো ডিমের দাম নির্ধারণ করি না। এই দাম ক্রেতারা নির্ধারণ করে। কেনাবেচার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।’
সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান আরও বলেন, অভিযোগ এসেছে ফিডের দাম বেশি। মুরগির ফিড পার কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেশিতে বিক্রি করা হচ্ছে। সমস্যাটা হলো, বাচ্চার দাম করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যে হারে নির্ধারণ করে দিচ্ছে, এর থেকে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে ওনারা একটা প্যাকেজ দিচ্ছেন যে, বাচ্চা কিনলে ৬ মাস পর্যন্ত ফিডও তাদের থেকে কিনতে হবে। এটা বাধ্য করার কথা না। এ জায়গাটায় আমরা কাজ করছি।
ঊষার আলো-এসএ