সহকর্মীদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে নিজেই হয়রানি ও অযৌক্তিক শাস্তির শিকার হয়েছেন ট্রেন চালক এলএম মো: আবুল কালাম আজাদ (কবি)। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর রেলকর্মীদের রানিং ভাতা ও পেনশন নিয়ে রেলমন্ত্রণালয়ের অযৌক্তিক সিন্ধান্তের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন করেন আবুল কালাম আজাদ।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তিনি রেলকর্মীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সরব থাকায় বার বার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ দিয়ে ৬টি শাস্তিও দেওয়া হয়। ওই শাস্তির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক আদালতে জয় পেলেও প্রতিকার পাননি।
আবুল কালাম আজাদ জানান, রেলের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে রানিং স্টাফদের ডিউটির উপর ভিত্তি করে রানিং ভাতা ও চাকুরী শেষে ৭৫ শতাংশ রানিং ভাতাসহ পেনশন দেওয়া হতো। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের রানিং ভাতার ৭৫ শতাংশ যোগ করে পেনশন দেওয়া হবে না বলে সিন্ধান্ত নেয়। একই এ সময় থেকে নতুন নিয়োগকৃত রানিং স্টাফদের রানিং ভাতা (মাইলেজ) দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিন্ধান্ত বাতিলের দাবিতে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল আবুল কালাম আজাদ (কবি) বোনারপাড়া লোকোসেডে প্রতিবাদ করেন। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিন্ধান্ত বাতিল করার উদ্দেশ্যে প্রতিবাদ হিসাবে বোনারপাড়া লোকোসেডের প্রথম ট্রেন ৪৯২ ডাউন ট্রেন বন্ধ করেন। একপর্যায়ে এলএম মো: আবুল কালাম আজাদ (কবি)র উৎসাহে লালমনির হাট ডিভিশনে একসঙ্গে ১৬টি ট্রেন বন্ধ হয়। যার ফলে রানিং স্টাফদের আন্দোলন সফল হয়। পরে বোনারপাড়া লোকোসেড হইতে এলএম মোঃ আবুল কালাম আজাদ (কবি) কে সাহিত্য সম্মাননা ও সাহসিকতা সম্মাননা প্রদান করে। তবে কতিপয় রেলওয়ে কর্মকর্তা কৌশলে এল এম আবুল কালাম আজাদ (কবি)কে বোনারপাড়া লোকোসেডে হইতে খুলনা লোকোসেডে বদলী করেন। এক পর্যয়ে অযৌক্তিক এক অভিযোগের ভিত্তিতে এল এম আবুল কালাম আজাদ (কবি)কে ডিমোশনসহ একসঙ্গে ৬টি শাস্তি প্রদান করে।
এ শাস্তির প্রতিবাদে আবুল কালাম আজাদ ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট ডিএমই/লোকো/বাংলাদেশ রেলওয়ে/পাক্শী আশীষ কুমার মন্ডলসহ বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আদালত খুলনায় একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার নং-এ,টি ৬৭/২০২৩,তারিখ-০৬/০৮/২০২ খ্রিঃ।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, এল এম আবুল কালাম আজাদ (কবি) ২০২২ সালের ৩ আগস্ট ১টা ২৫ মিনিটে খুলনা জংশন স্টেশনে গিয়ে দেখেন, তার দায়িত্বরত (কেএন ০১ আপ) গার্ড ব্রেকসহ ৩০ ওয়াগণ বিশিষ্ট ৩০/৫৯ লোডের ট্রেনে মাত্র ৩টি ব্রেকিং স্টক সংযুক্ত করা হয়েছে। সংযুক্ত ৩টি ব্রেকিং স্টকের মধ্যে আবার ১টি ব্রেকিং স্টক অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। যা নিরাপদ ট্রেন যাত্রার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যে কারণে এল এম আবুল কালাম আজাদ (কবি) বিষয়টি পিএনএল (পাওয়ার কন্ট্রোলার) পাক্শীকে জানান। অতপর ব্রেকিং স্টক কার্যকর করা না হলে ট্রেন ওয়ার্ক করবে না বলে জানান।
এ ঘটনায় ডিএমই (লোকো) আশীষ কুমার মন্ডলসহ ট্রেনের কর্মরত গার্ড বিশ্বজিৎ ও কর্মরত আরএন বি স্টাফ সিপাহী গৌতম এলএম আবুল কালাম আজাদ (কবি)র প্রতি ক্ষুব্ধ হন। এক পর্যায়ে আরএনবি স্টাফ সিপাহী গৌতম এসআই/আরএনবি/আইবি/খুলনার কাছে ওই দিন চেঙ্গুটিয়া স্টেশন পার হওয়ার পর চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিন থেকে ৩/৪ টি সাদা বস্তা মুখ বন্ধ অবস্থায় ফেলতে দেখেছেন বলে অভিযোগ দেন। অথচ এদিন এলএম আবুল কালাম আজাদ (কবি)র দায়িত্বরত ইঞ্জিন থেকে গার্ড ব্রেকের দুরত্ব ছিল ২৯ টি বিটিও+১ টি গার্ড ব্রেক=৩০ ওয়াগন (প্রায় এক কিলোমিটার) এবং চেঙ্গুটিয়া স্টেশন পার হওয়ার পর সিঙ্গিয়া স্টেশন অভিমুখে প্রায় ১০ কিলোমিটার রেল লাইন ছিল স্ট্রেইট। প্রকৃতপক্ষে স্ট্রেইট লাইন এর ক্ষেত্রে ৩০ ওয়াগন পিছনের গার্ড ব্রেকে অবস্থান করে (স্বাভাবিক দৃষ্টিতে) চলন্ত অবস্থায় সামনের ইঞ্জিন থেকে কোন কিছু ফেলার দৃশ্য দেখা কোন ভাবেই সম্ভব না। তারপরও এ অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৩ আগস্ট এল এম আবুল কালাম আজাদ (কবি)র বিরুদ্ধে এস আই/আর এন বি/আইবি/খুলনা কর্তৃক একটি লিখিত অভিযোগ কমান্ডেন্ট/আর এন বি/সদর/রাজশাহীতে পাঠানো হয়।
ওই অভিযোগে এল এম আবুল কালাম আজাদ (কবি)র বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ আনা হয়নি। এমনকি কর্মরত গার্ড বিশ্বজিৎ কর্তৃক দায়িত্বরত গার্ড রিপোর্টে ও এল এম আবুল কালাম আজাদ (কবি)র বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। তারপরও তদন্ত কর্মকর্তাগণদের তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী/ওপিএন্ডএফ/বাংলাদেশ রেলওয়ে,পাক্শী মোঃ আব্দুল জলিল এলএম আবুল কালাম আজাদ (কবি)র অনুকুলে গত ১৭ আগস্ট ২০২২ তারিখ রেলওয়ে চাকুরী বিধি ১৯৬১ সনের ৩ এর ‘এ’, ‘বি’, এবং ‘সি’, ধারা অনুযায়ী কেন শাস্তিমূুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানো নোটিশ ফরম “এ” প্রদান করেন।
নোটিশ ফরম “এ” তে প্রথমত কার্য শেষে ঈশ্বরদী লোকোসেডে পৌঁছালে জ্বালানি তেলের পরিমাপ বরাদ্দ অপেক্ষা ৩০ লিটার অতিরিক্ত পাওয়া যায় অর্থাৎ এল এম আবুল কালাম আজাদ (কবি)র অনুকুলে যা বরাদ্দ ছিল তাহার চেয়ে ৩০ লিটার অতিরিক্ত পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করা হয়। পরে একই নোটিশ ফরম এ’ প্রদাকারী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল জলিল একই নোটিশ এ’তে ৩০ লিটার জ্বালানি তেল ঘাটতির কথা উল্লেখ করেন। প্রকৃতপক্ষে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট এলএম আবুল কালাম আজাদ (কবি) রেলওয়ের কোন তেল পাচার করেননি। বরং ওইদিন তিনি রেলওয়ের ১৬ লিটার জ্বালানি তেল সঞ্চয় দেন। সমন্বয় হিসাবে আগস্ট আবুল কালাম আজাদ রেলওয়েতে ৩০ লিটার জ্বালানি তেল সাশ্রয় করেন। তারপরও তদন্ত কর্মকর্তা মোহাঃ গোলাম মোস্তফা এসএসএই/এল আই/বাংলাদেশ রেলওয়ে/পার্বতীপুর, তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রউফ এসএসএই/এফআই/বাংলাদেশ রেলওয়ে/পাক্শী ও তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম সি আই/আর এন বি/বাংলাদেশ রেলওয়ে/পার্বতীপুর গণ ‘কার্যকালীন সময় এলএম আবুল কালাম আজাদ (কবি)র অনুকূলে ৩০ লিটার অতিরিক্ত খরচ পাওয়া যায়’ উল্লেখ করে আবুল কালামকে দোষী সাব্যস্ত করেন। যাহা ন্যায়সঙ্গত হয় নাই। ভুক্তভোগী বিষয়গুলো বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী/লোকো/বাংলাদেশ রেলওয়ে,পাক্শী আশীষ কুমার মন্ডলকে অবগত করান। কিন্তু আশীষ কুমার মন্ডল সবকিছু জেনে নিজ ক্ষমতা বলে আবুল কালাম আজাদ (কবি)কে সাময়িক বরখাস্তসহ এক সঙ্গে ছয় টি শাস্তি প্রদান করেন। এরমধ্যে আবুল কালাম আজাদকে ১২১ দিন সাময়িকভাবে বরখাস্ত, বরখাস্তকালীন সময় তার নিজ দপ্তরে সকাল-বিকাল দিনে দু’বার হাজিরা প্রদান, আগামী বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ৪ বছরের জন্য স্থগিত, কেএলএম গ্রেড-২ থেকে এএলএম গ্রেড-১ পদে পদাবন, বেতন ১৩ তম গ্রেড থেকে ১৬ তম গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া ও তাকে খুলনা লোকোসেড থেকে পার্বতীপুর লোকোসেডে বদলী করে দেন।
ঊআ-বিএস