UsharAlo logo
শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ৫ হাজার ২৯১ কোটি টাকা

usharalodesk
জুন ১৮, ২০২১ ১১:১৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের বিষয়টি এখন সবারই জানা। তবে বিতর্ক হয় কীভাবে এবং কারা বেশি অর্থ পাচার করেন এ নিয়ে। কেউ অর্থ পাচার করছেন আন্ডার-ইনভয়েসিং (দাম কম দেখিয়ে পণ্য রপ্তানি) এবং ওভার-ইনভয়েসিংয়ের (আমদানিতে দাম বেশি দেখিয়ে) নামে। কেউ পাচার করেন অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে। দেশ থেকে অর্থপাচার নিয়ে সংসদের ভেতর ও বাইরে এখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশেরও দাবি উঠেছে সংসদে। এ অবস্থার মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) সুইজারল্যান্ডের সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশটির ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের ৫ হাজার ২৯১ কোটি টাকা জমা রয়েছে, যার সিংহভাগই দেশ থেকে পাচার হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। তবে বাংলাদেশি কাদের অর্থ সুইস ব্যাংকে জমা রয়েছে, সেই তালিকা প্রতিবেদনে প্রকাশ করেনি সুইস ব্যাংক।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পাহাড় জমেছে। ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী সুইস ব্যাংকে জমা অর্থের পরিমাণ ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্র্যাংক, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৯৪ টাকা হিসাবে)। আগের বছরের চেয়ে এই আমানত ৩৭৭ কোটি টাকা কমেছে। অর্থাৎ ওই বছর ২০১৯ সালে ছিল ৫ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সুইস ব্যাংক মূলত তাদের প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা বিদেশিদের আমানতের তথ্য প্রকাশ করে। অবশ্য বাংলাদেশি আইনে কোনো নাগরিকের বিদেশি ব্যাংকে আমানত রাখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত কাউকে বিদেশে অর্থ জমা রাখার বিশেষ অনুমোদনও দেয়া হয়নি। এ ছাড়া কোনো প্রবাসীও সরকারকে জানাননি যে তিনি সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা রেখেছেন। ফলে সুইস ব্যাংকে জমা পুরো অর্থই দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
এ বিষয়ে বুধবার ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাশেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘দেশে একটি গ্রুপ আছে যারা লোভে পড়ে দেশ থেকে অর্থ পাচার করছে। আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। এজন্য বিদ্যমান আইনের কিছু ক্ষেত্রে সংশোধন করা হচ্ছে। কিছু নতুন আইনও করা হচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে পাচারকারীদের ধরা সহজ হবে এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া যাবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান জানান, এই টাকার পুরোটা পাচার নয়। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডে যারা কাজ করছে তাদের আমানত রয়েছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে নতুন তথ্য প্রকাশের পর পরই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমার ডিপার্টমেন্টের লোকজনকে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছি। তার তথ্য দিলে আমি বিস্তারিত জানাতে পারব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে কাউকে অর্থ নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশিদের আমানত : ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের স্থিতি ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্র্যাংক, আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে যা ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৮ সালে ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৭ সালে ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৬ সালে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৫ সালে ৫৫ কোটি ৮ লাখ ফ্র্যাংক, ২০১৪ সালে যা ছিল ৫০ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৩ সালে ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যাংক, স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১১ সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ ফ্র্যাংক। স্বর্ণালঙ্কার, শিল্পকর্ম এবং অন্য মূল্যবান জিনিসপত্র জমা রাখলে তার আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে আমানতে যোগ হয় না।
মোট আমানত: প্রতিবেদন অনুসারে আলোচ্য সময়ে বিশ্বের সব দেশের আমানত বেড়েছে। আলোচ্য বছরে সুইজারল্যান্ডের ২৫৬টি ব্যাংকে আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এ হিসাবে এক বছরে আমানত বেড়েছে ৬ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এ ছাড়া ২০১৮ সালে যা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১৭ সালে ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি ফ্র্যাংক।
এ ছাড়া ২০১৬ সালে ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি। ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকে বিদেশিদের মোট আমানত ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১৪ সালে ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১৩ সালে ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি, ২০১২ সালে ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এ ছাড়া ২০১১ সালে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি, ২০১০ সালে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি এবং ২০০৯ সালে ছিল ১ হাজার ৩৩ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোরও আমানত কমেছে। আলোচ্য সময়ে উন্নয়নশীল দেশের আমানতের স্থিতি ছিল ১৬ হাজার ৪৬০ কোটি ফ্র্যাংক, আগের বছর যা ছিল ১৬ হাজার ৯৮৬ কোটি ফ্র্যাংক।
সূত্র বলছে, দুর্নীতি ও চোরাচালানের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। ওইসব টাকায় দুর্নীতিবাজরা বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলছেন, জমা রাখছেন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এর বাইরে আরও অনেক ব্যাংকে বাংলাদেশের পাচারকারীদের অর্থ রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে মালয়েশিয়ার সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিদেশির জন্য মালয়েশিয়ান সরকারের সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী।
দেশ থেকে বিদেশে কোনো অর্থ নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। কিন্তু এ পর্যন্ত কাউকে ব্যাংক থেকে এই ধরনের অনুমোদন দেয়া হয়নি। তার পরও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় কীভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ হলো। কানাডায় রয়েছে বাংলাদেশি অধ্যুষিত অঞ্চল বেগমপাড়া। এ ছাড়া ব্রিটেন, হংকং, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাংকেও বাংলাদেশিদের অর্থ রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
(ঊষার আলো-এমএনএস)