UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুশীল, কোন চেতনায় আওয়ামী সরকারের অনুরাগী ছিলেন

usharalodesk
সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪ ৫:২১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : আমি করপোরেট গভর্নেন্সের মানুষ। গত কিছু দিন যাবত চারপাশ থেকে জোর করে চোখ বন্ধ করে কেবল দেশের করপোরেট সেক্টর আর বৈদেশিক বিনিয়োগের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম, যা তথ্য-উপাত্ত পাচ্ছি, তাতে বিস্ময়ের সীমা ছাড়াচ্ছে! একেক সময় হতাশায় কুকড়ে পড়ছি। রাগ ক্ষোভ দুঃখ সব কিছু মিলিয়ে অস্থির একটা অবস্থা। বিগত সরকার দেশ থেকে যে কেবল সম্পদ লুট করে নিয়েছে তা না, একটা দেশের পুরা সিস্টেমকে লুট করে নিয়ে গেছে… সারা বিশ্বে এরকম কাঠামোগত বা সিস্টেমেটিক দুর্নীতির নজির বিশ্বে আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই।

আমি বোধহয় এই পর্যায়ে ভাষায় বোঝাতে অক্ষম যে আক্ষরিক অর্থে এ ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কতটুকু…। কারণ আর্থিক ক্ষতি হয়তোবা মেপে নেওয়া যাবে কিন্তু একটা দেশের গভর্নেন্সের যে চারটা মূল পিলার আছে— অ্যাকাউন্টেবিলিটি, ট্রান্সপারেসি, ফেয়ারনেস আর ইন্ডিপেন্ডেন্স; এর প্রত্যেকটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে কি জঘন্যভাবে ‘অভিনব’ কায়দায় ম্যানিপুলেট করেছে, সেই ক্ষতি মাপবো কি করে? আর্থিক ক্ষতি থেকে আজ না হলেও কাল ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াবে। অনেকটা সময় লাগবে, কিন্তু উঠে দাঁড়াবেই ইনশাআল্লাহ। তবে এই যে পুরো ব্যবস্থার যে ধ্বংস, যে নৈতিক অবক্ষয় তা পুষাবে কীভাবে?

কাঠামোগত দুর্নীতি বলতে কি বোঝাচ্ছি, তা বলব আরেকদিন। এখন কেবল না হয় প্রশ্ন করি তথাকথিত ‘সুশীল’ সমাজের প্রতি। আচ্ছা এই যে এতকাল ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ’ বলে যে বুক টান টান করে চেতনার আস্ফালন করেছিলেন, কোথায় ছিল আপনাদের দেশপ্রেম এসব অনিয়মের জালে অথবা লুটতরাজের ত্রাসে? না প্লিজ বলবেন না যে, এসব আপনারা আগে জানতেন না! বিগত সরকারের ১৫ বছরের নৈরাজ্য একদিনে হয়নি! একজন কে দিয়ে হয়নি! যথেষ্ট ভয়ভীতি দেখানোর পরও দেশি-বিদেশি প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইন জার্নালিস্টরা কিন্তু আওয়াজ তুলছিল… আর সেই আওয়াজেরই বা অপেক্ষায় থাকতে হবে কেন? আমরা তো এ দেশেরই নাগরিক, এ দেশেরই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। এ দেশের সব মানুষ আপনাদের মতো ব্যক্তিস্বার্থের চেতনায় এ নৈরাজ্যকে বাহবা দিয়ে যায়নি… তারা দেশপ্রেম এরই অংশ হিসেবে তার অনুভূতি অফিসে চায়ের টেবিলে কিংবা চলতে পথে আপনাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়েছিল।

আপনি ছিলেন নিশ্চুপ। যে দেখেও না দেখতে চায়; বলেন তো তার চোখের জ্যোতি ফেরাবে কার সাধ্যি? শুধু জানতে ইচ্ছে হয় কোন চেতনায় আপনি এতটা অন্ধত্ব বরণ করে নির্লজ্জভাবে এ সরকারের অনুরাগী ছিলেন? কোন চেতনায় রাজপথ না হোক নিজের বিবেকের কাছে একবার প্রশ্ন তোলেননি— এ দেশটাকে যারা তিল তিল করে দিচ্ছে, তার দোসর আমি কীভাবে হই? শুধু তো দোসর না আপনারা তার গুনগানও গাইতেন। গাইতে গাইতে মুখে ফেনা তুলে ফেলতেন… ফেনা তুলতে তুলতে যাকে তাকে রাজাকার গালি দিয়ে, ‘বিকল্প কে?’ বুলি তুলে ডাকাত সরকারকে নিষ্কণ্টক পথ করে দিয়েছিলেন আরও একটু বেশি লুটতরাজ করার! এসব আস্ফালনে কবে আপনার লজ্জা সীমা হারাল, বিবেকবোধ ভূলুণ্ঠিত হলো টেরও পেলেন না… মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নেওয়া ভোট ডাকাতের সঙ্গে একসঙ্গে বসে পোলাও মাংস খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন ‘চেতনার’ আবেগে। এই আবেগে আপনি নিজেও যে একজন ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছেন, সেটা বোধহয় উপলব্ধি করেননি।

ভেবে দেখেছেন আপনার সন্তানদের সামনে মুখ দেখাবেন কি করে?  শুধু দোয়া করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আল্লাহতালা আপনাদের মতো ‘দেশপ্রেমিক’ না করুক, যার কাছে দেশ নয় নিজ স্বার্থ বড়!

ঊষার আলো-এসএ