ঊষার আলো রিপোর্ট : আজ ২০২৫ সালের প্রথম দিন। অসীমের পানে মহাকালের যে যাত্রা, সেখানে সূচিত হলো আরেকটি মাইলফলক। এই যে মহাকালের যাত্রা, সেখানে একেকটি বছর আসে নতুন উদ্দীপনা ও প্রেরণার বার্তা নিয়ে। আমরা মুছে ফেলি গত হয়ে যাওয়া বছরের গ্লানি, উৎসাহ খুঁজে পাই সুখকর ঘটনাগুলো থেকে; তারপর এগিয়ে যাই অগ্রগতির দিকে। কেমন কেটেছে আমাদের বিদায়ি বছরটি? ২০২৪ সাল ছিল দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি ঘটনাবহুল বছর। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা চ্যালেঞ্জ ও উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়ে থাকবে বছরটি। গত বছর জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসানে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে দেশবাসী। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ সর্বক্ষেত্রে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, এর সদ্ব্যবহার করতে সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
২০২৪ সালে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধে বহু মানুষের প্রাণ ঝরেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধের পরিধি বেড়েছে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নির্মম গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব প্রতিবাদমুখর হলেও ইসরাইলি হামলা বন্ধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ। ইসরাইলের নির্মমতা বন্ধে নতুন বছর বিশ্ব একটি স্থায়ী পদক্ষেপ নেবে-এ প্রত্যাশা আমাদের। এদিকে সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে পতন হয়েছে একনায়ক বাশার আল-আসাদের। মিয়ানমারে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্য দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে আমাদের। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। বিশ্বে এর কী প্রভাব পড়ে, তা দেখার অপেক্ষায় থাকব আমরা।
বিদায়ি বছরে অনেক বিশিষ্টজনকে হারিয়েছি আমরা। সম্প্রতি হারিয়েছি অন্তর্বর্তী সরকারের বিমান ও পর্যটন এবং ভূমি উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফকে। ২০২৪ সালে মারা গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরী ও মতিয়া চৌধুরী। সম্প্রতি হারিয়েছি কবি হেলাল হাফিজকে। ২০২৪ সালে আরও হারিয়েছি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ, পাপিয়া সারোয়ার, ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ, অভিনয়শিল্পী জামালউদ্দিন হোসেন, অভিনেতা মাসুদ আলী খান, গীতিকার-সুরকার আবু জাফর, প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রফেসর ড. গোলাম মুরশিদ, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, ভাষাবিজ্ঞানী ড. মনিরুজ্জামান, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু এবং শিশুসাহিত্যিক আশরাফুল আলম পিনটুকে। এছাড়া আমরা হারিয়েছি আরও অনেক বিশিষ্টজনকে। তাদের সবার প্রতি রইল আমাদের অশেষ শ্রদ্ধা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেসব বিশিষ্টজন মারা গেছেন, তাদের অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। মারা গেছেন এ উপমহাদেশের বিশিষ্টজন তবলার জাদুকর ওস্তাদ জাকির হোসেন।
বিদায়ি বছরে দেশে অনেক দুর্যোগ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফেনী, কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় স্মরণকালের নজিরবিহীন বন্যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সারা দেশের মানুষ বন্যাদুর্গতদের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছিল, সে বিষয়টিও প্রশংসার দাবি রাখে। সবার প্রচেষ্টায় দুর্যোগে প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে।
নতুন বছরে আমরা আশা করব, দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনের সব সংকট কেটে যাাবে। মূল্যস্ফীতির জাঁতাকল থেকে রক্ষা পাবে দেশবাসী। মানুষের জীবনে ফিরে আসবে স্বস্তি। আমরা বিশ্বাস করি, মানুষের কর্মস্পৃহা ও উদ্ভাবনী শক্তির কাছে অচিরেই হার মানবে সব ধরনের প্রতিকূলতা। জনগণ, সরকার, রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নতুন বছরটিকে শান্তি-সমৃদ্ধময় ও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলবেন। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
ঊষার আলো-এসএ