UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসিনা সরকারের নজিরবিহীন লুটপাট, ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বেড়েছে ১১৭১ কোটি টাকা

ঊষার আলো রিপোর্ট
মার্চ ২৩, ২০২৫ ১১:১২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোয় (নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান) নজিরবিহীন লুটপাটের প্রভাব আরও প্রকটভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। সার্বিকভাবে তিন মাসে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। লুটপাটের কারণে গড় হিসাবে ফাইন্যান্স কোম্পানিতে কোনো মূলধন নেই। মূলধনে ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও মূলধন থেকে কোনো আয় নেই। বাড়ছে লোকসান। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ৩৫টি ফাইন্যান্স কোম্পানির মধ্যে গত সরকারের সময়ে ১১টি কোম্পানিতে বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে। ১৪টি কোম্পানিতে প্রয়োজন অনুযায়ী মূলধন রয়েছে। ১৬টি কোম্পানিতে প্রয়োজন অনুযায়ী মূলধনে ঘাটতি রয়েছে। লুটপাট ও খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ায় বাকি ৫টি কোম্পানিতে সমুদয় মূলধন ক্ষয় হয়ে গেছে। লুটপাটের কারণে কোম্পানিগুলোয় খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি, মূলধন ঘাটতি, লোকসানের মাত্রা ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ বেড়ে গেছে। কমে গেছে আয়। ফলে শোয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়ার প্রবণতাও কমে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোম্পানিগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মৌলিক মূলধন সংরক্ষণের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। এটি সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগের বিষয় হিসাবে দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে সম্পদের গুণমান এবং লাভজনকতা বেশি মাত্রায় হ্রাসের কারণে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর কর্মক্ষমতা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

গত বছরের জুনে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোয় ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ ছিল ৫৭ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮ হাজার ৩১৮ কোটি টাকায়। ওই তিন মাসে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ হাজার ১৭১ কোটি টাকা বা প্রায় ২০ শতাংশ। তবে ২০২২ সালের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ কিছুটা কমেছে। কারণ, ওই সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ আরও বেশি ছিল। ঋণের বিপরীতে প্রভিশন করায় এবং কিছু ঋণ আদায় হওয়ার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ২০২২ সালের তুলনায় কিছুটা কমেছে।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সব মিলে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ছিল ৭০ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। গত জুনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৩১৩ কোটি টাকায়। গত সেপ্টেম্বরে তা আবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। তিন মাসের হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বেড়েছে ৪৩৫ কোটি টাকা বা ১ শতাংশের কম। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোয় মূলধন ছিল ৭ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। গত মার্চে তা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে লুটপাটের ঋণ আদায় না হওয়ায় খেলাপি হতে থাকে। এর বিপরীতে চাহিদা অনুযায়ী প্রভিশন রাখতে না পারায় মূলধন ক্ষয় হয়ে যায়। এখন মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত জুনে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর মূলধন ঘাটতি ছিল ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সম্পদ থেকে কোনো আয় ছিল না। প্রতি ১০০ টাকায় লোকসান ছিল ৪০ পয়সা। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতি ১০০ টাকায় লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ২ টাকা ০২ পয়সায়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে লোকসান আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩ টাকা ০২ পয়সায়। এসব কোম্পানির প্রধান আয় হয় সম্পদ বা ঋণ বা বিনিয়োগ থেকে। এ খাতে সার্বিকভাবে আয় না হয়ে লোকসান হওয়ায় এ খাতে মন্দা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে কয়েকটি ফাইন্যান্স কোম্পানি এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মূলধন বিনিয়োগ থেকে লোকসান ছিল ৭ টাকা ৮৫ পয়সা। গত বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ৬৭ পয়সা। এরপর থেকে গড় হিসাবে মূলধন ক্ষয় হয়ে গেছে। ফলে এখন আর মূলধন নেই। যে কারণে বিনিয়োগ থেকে এখন কোনো আয়ও নেই। অথচ মোট আয়ের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আসত মূলধন বিনিয়োগ থেকে।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে খেলাপি ছিল ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। ওই সময়ে যা ছিল মোট ঋণের ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকায় দাঁড়ায়, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। লুটপাটের ঋণ এখনো খেলাপি হচ্ছে। ফলে আগামী দিনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোয় সম্পদ আরও কমেছে। গত জুনে মোট সম্পদ ছিল ১ লাখ ৭১৭ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। তিন মাসে মোট সম্পদ কমেছে ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে আলোচ্য সময়ে ক্যাশ ও লিকুইড অ্যাসেট ১৩ হাজার ৬২ কোটি টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা।

ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর সার্বিকভাবে তারল্য পরিস্থিতিও কমেছে। ব্যাংক ও অন্য ফাইন্যান্স কোম্পানি থেকে ধার নেওয়ার স্থিতি গত জুনে ছিল ২৯ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। কিছু দুর্বল কোম্পানি ধারের টাকা ফেরত দিতে না পারায় এখন অনেক প্রতিষ্ঠানই দুর্বল কোম্পানিগুলোকে ধার দিচ্ছে না। যে কারণে ধারের স্থিতি কমেছে। আমানত সামান্য বেড়ে ৪৭ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা থেকে ৪৯ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা হয়েছে। আমানত কিছুটা বাড়লেও মূলধন ঘাটতি বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। গত জুনে ঘাটতি ৪ হাজার ৭২১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অন্যান্য খাতের তারল্য ২৮ হাজার ৫২২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২৯ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। মূলধন ঘাটতি বাড়ায় মোট তারল্য কমেছে। গত জুনে মোট তারল্য ছিল ১ লাখ ৭১৭ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকায়।

ঊষার আলো-এসএ