UsharAlo logo
শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩৬% শিশু টিকার আওতায় এসেছে

pial
সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ ৩:৩৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

খলিলুর রহমান সুমন,খুলনা : করোনা মহামারির কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের ঝরে পড়ার হার বেড়েছে। সবে মাত্র করোনা সংকট কেটেছে। এর মধ্যে ঝরে পড়া শিশুদের বেশীরভাগই এখনও বিদ্যালয়গামী করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। যারা জন্য এসব শিশুদের টিকার আওতায় আনা অনেকটাই চ্যালেঞ্জ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এদিকে শিশুদের ভয়হীন পরিবেশে টিকা দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনেকটা কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। একজন শিশুর সামনে অপর শিশুকে টিাক দেয়া যাবে না। কিন্তু টিকা কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিশুরা অভিভাবকের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা দেয়া ও কানাকাটির বিষয়টি পাশে থেকেই স্ব চোখে দেখছে। ওই প্রত্যক্ষদর্শী শিশুটি টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে আরো ভীতসন্ত্রাস্ত হয়ে পড়ছে। এতে করে ভয়হীন পরিবেশটা টিকা কেন্দ্রে খুবই সংকট। টিকা দেয়ার পরিবেশটা আনন্দদায়ক করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কঠোরভাবে নির্দেশনা দিলেও মাঠ পর্যায়ে তার বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।

তবে শিক্ষকরা এ জন্য অভিভাবকদের দায়ী করছেন। তারা বলছেন, অভিভাবকরা শিশুদের টিকা দিতে এসে অনেকটা প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ছেন। তাদের মধ্যে আগে বাড়ি ফিরে যাব- এ মানসিকতা খুবই বেশী। অভিভাবকদের সচেতনতা ছাড়া টিকা কেন্দ্রে ভয়হীন পরিবেশ করা খুবই কঠিন বলে শিক্ষকরা জানান।

৩০ আগস্ট দৌলতপুর সরকারি মুহসিন প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে টিকা কার্যক্রম হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রুমানা ইয়াসমিন জানান, তার স্কুলে ২৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী মধ্যে ১৯০জন শিশু টিকা গ্রহণ করেছে। তার স্কুলের বাকী শিশু টিকার আওতায় আসবে বলে তিনি মনে করছেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন না করা, বয়স বেশী হওয়া, নিয়মিত স্কুলে না আসা, অসুস্থ্য, শ্বাস কস্টসহ নানা কারণে এসব শিশুদের টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে না। তবে তাদের সকল কাগজপত্র পুরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে অন্য স্কুলের কেন্দ্র থেকে টিকা গ্রহন করানো হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, স্কুলে জনবল সংকটের কারণে শিশু ও অভিভাবকদের সিরিয়ালে রাখতে খুবই কস্ট হচ্ছে। সবাই আগে টিকা নিয়ে বাড়ি ফিরবে, এমনই ইচ্ছাই অনেকটা তারা প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এ জন্য টিকা কার্যক্রম শৃংখলাভাবে দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।

ওই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রুবাইয়া আক্তার টিকা গ্রহণ শেষে বাসায় ফিরছে বাবা রিপন হাওলাদারের সাথে। তিনি বলেন, খুবই বিশৃংখলার মধ্য দিয়ে টিকার কার্যক্রম চলছে। শিশুদের সামনেই অপর শিশুকে টিকা দেয়া হচ্ছে। এতে শিশুরা আগেভাগে ভীতসন্ত্রাস্ত হয়ে পড়ছে। ভয়হীন পরিবেশ বলতে স্কুলে কিছুই নেই। অভিভাবকরা ঠেলাঠেলি করে টিকা নেয়ার জন্য জটলা করছে। আর শিশুরা ভয়ে কান্নাকাটি করছে। তিনি সকাল ১০টায় মেয়েকে নিয়ে টিকা দিতে আসেন আর ১২টায় টিকা দিয়ে বাসায় ফেরেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোঃ মোসলেম উদ্দীন টিকা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে অভিভাবদের অসচেতনায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সবাইকে শৃংখলা মেনে টিকা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ অভিভাবক আগে টিকা নেব প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। যার জন্য টিকা কেন্দ্র বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। এতে ভয়হীন পরিবেশ নিশ্চিত করা কঠিন।

তিনি বলেন, খুলনা বিভাগে ২১ লাখ শিশুকে টিকার আওতায় আনা হবে। আর ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনতে তারা কাজ করছেন। প্রয়োজনে শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝরে পড়া ও বাদ পড়া শিশুদের স্কুলে এনে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে বলে তিনি জানান। পিটিআই মোড় সুলতানা হামিদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের ৩১ আগস্ট টিকা দেয়া হয়। ৭৫ জন শিশুর মধ্যে ওই দিন দেয়া হয় ৪৩ জন শিশুকে টিকা। বাকী ৫৬ জন শিশু নানা কারণে অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানান ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মোসাম্মদ মাহমুদা খাতুন। তিনি বলেন, টিকা দেয়ার সময় শিশুরা কান্নাকাটি করেছে। তবে অভিভাবকরা সাথে ছিল বলে তেমন কিছু হয়নি। তার স্কুলে ঝরে পড়া শিশু রয়েছে। তবে সংখ্যা কত তা তিনি বলতে পারেননি।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাস থেকে দেশবাসীকে রক্ষার জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাঁর সময়োপযোগী কর্মসূচি সফল হওয়ায় দেশের জনগণ করোনা সংক্রমণের হাত থেকে সহজে রক্ষা পেয়েছেন। এ কর্মপ্রচেষ্ঠার ধারাবাহিকতায় পাঁচ থেকে এগারো বছর বয়সী শিশুদের কোভিড ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে। সিটি মেয়র ২৭ আগস্ট সকালে কেসিসি পরিচালিত খালিশপুর কলেজিয়েট গার্লস স্কুলে খুলনা মহানগরী এলাকায় ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের কোভিড-১৯ (পেডিয়াট্রিক ফাইজার বায়োএনটেক কমিরনেটি) ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনের (১ম ডোজ) উদ্বোধন করেন। শিশুদের সুরক্ষায় ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য তিনি শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান। দৌলতপুর সরকারি মুহসিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জিব কুমার সরকার বলেন, তার স্কুলে ২৮ আগস্ট টিকা দিয়েছে। ২০০জন শিশুর মধ্যে ১৭০ জন টিকার আওতায় এসেছে। তবে টিকা দেয়ার সময় ছোট শিশুরা কান্নাকাটি করেছে। পরের দিন স্কুলে আসে মাত্র ৮৫ জন শিক্ষার্থী।

কেসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমাল হালদার জানান, কেসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় মহানগরীতে ২৫ আগস্ট থেকে শিশুদের কোভিড ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্যাম্পেইনে মহানগরীর ৪৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮৮ হাজার ৬’শত ৮২জন শিশুকে ভ্যাকসিন প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে ৭’শ ৪৪ জন টিকাদার ও ভলেন্টিয়ার নিয়োজিত রয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩১ হাজার ৯শ’৪০ জন শিশুকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। টিকা গ্রহণের হার ৩৬%। ধারাবাহিকভাবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নগরীতে শিশুদের টিকা দেয়া হবে। তবে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত স্কুলগামী শিশুদের টিকা দেয়া হবে। এরপরে বাদ পড়া ও ঝরে পড়া শিশুদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু ১২ সেপ্টেম্বরের পর বাকী তিন দিন (১৩,১৪,১৫ সেপ্টেম্বর) কমিউনিটিতে টিকা দেয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি ওয়ার্ডের নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র(আরবান), লাল হাসপাতাল,তালতলা হাসপাতাল, নগর স্বাস্থ্য ভবন। কমিউনিটিতে টিকা কার্যক্রম শুরুর আগে কেসিসির উদ্যোগে টিকা গ্রহণের ব্যাপারে নগরীতে প্রচারণামূলক মাইকিং করা হবে। তবে টিকাদান কর্মসূচী শতভাগ অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো তাগিদ রয়েছে। সেভাবে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী ইপিআই-এর হিসেব মতে, নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা ২০ সহস্রাধীক। খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সিরাজুদ্দোহা বলেন, খুলনা নগরীতে ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর দু’শতাধিক বেসরকারি, কিন্ডার গার্টেন, মাদ্রাসা রয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৭৯৫জন শিশুর মধ্যে ২৪২৯জন টিকার আওতায় এসেছে। বাদ পড়েছে ৩৬৬ জন। ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪১১৯ জন শিশুর মধ্যে ২৮২৫ জন শিশু টিকার আওতায় এসেছে। বাদ পড়েছে ১২৯৪ জন। সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয় মিলে মোট ২৭টি স্কুলে বাদ পড়া শিশুর সংখ্যা ১৬৬০ জন। তিনি বলেন, নগরীতে চার শতাধিক ঝরে পড়া শিশু রয়েছে। তাদের ব্যাপারে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে এই শিক্ষা কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, স্কুলে শিশুদের টিকা দেয়ার ব্যাপারে ভয়হীন পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যাপারে বলা হয়েছে। তা বাস্তবায়নের জন্য মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। কেসিসির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা এসকেএম তাছাদুজ্জামান বলেন, প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে ভয়হীন পরিবেশ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবে এ পরিবেশটা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এখন চলছে নগরীর জুড়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণ। তাদের দেয়ার পর বাদ পড়া শিশুদের টিকা দেয়া হবে। এর পর ঝরে পড়া শিশুদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবেন বলে তিনি জানান।

(ঊষার আলো-এফএসপি)