UsharAlo logo
শুক্রবার, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৬ মে ১৯৭১, বৃহস্পতিবার

usharalodesk
মে ৬, ২০২১ ১১:৫৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

খুলনার গ্রামের বাড়ি থেকে ডেকে এনে ১১ জনকে হত্যা
লেখক হুমায়ূন আহমেদের পিতাসহ বেশ কয়েকজন শহিদ হন

ঊষার আলো ডেস্ক : মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লার চৌমুহনী-চন্দ্রগঞ্জ রাস্তার ফেনাকাটা পুল এলাকায় এ্যামবুশ করে। পাকবাহিনীর সৈন্য বোঝাই তিনটি ট্রাক চন্দ্রগঞ্জ থেকে চৌমুহনী যাবার পথে ফেনাকাটায় পৌঁছলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস শাহাদাৎ বরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটি ‘ফেনাকাটা পুলের সংঘর্ষ’ নামে পরিচিত।
তেলিয়াপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সদর দপ্তরের ওপর পাকবাহিনীর দুই কোম্পানির সৈন্য অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে পাকসেনারা দ্রুত পালাতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে উভয় পক্ষের ব্যাপক হতাহত হয়। সকালে পাকসেনারা পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি এলাকায় প্রবেশ করে শর্ষিনার পীরের বাড়িতে ঘাঁটি স্থাপন করে। শর্ষিনার পুল থেকে থানা পর্যন্ত এলাকার সমস্ত হিন্দু বাড়ি প্রথমে লুট ও পরে অগ্নিসংযোগ করে এবং ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। পাকসেনাদের অপর একটি দল আলঘারকাঠির দিকে যায়এবং নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়।
পিরোজপুরে পাকহানাদার বাহিনী দুর্নীতি দমন বিভাগের দারোগা হীরেন্দ্র মহাজন (চট্টগ্রাম)সহ ৫ মে বন্দিকৃত এসডিও আবদুর রাজ্জাক (কুমিল্লা), ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান(যশোর), এসডিপিও ফয়জুর রহমান (ময়মনসিংহ, লেখক হুমায়ূন আহমেদের পিতা)-কে বলেশ্বর নদীর পাড়ে একত্র করে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে তারা সবাই শহিদ হন।


সিলেটের কুলাউড়া থানায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা
সিলেটের কুলাউড়া থানায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। তাদের নির্মূল অভিযানের শিকার হয় ২শর বেশি নিরীহ মানুষ। এ থানার পৃথ্বিমপাশা নামক এলাকায়ও বর্বররা নিধনযজ্ঞ চালায়। এত শতাধিক মানুষ নিহত হয়।
সিনেটর ওয়াল্টার মন্ডেল মার্কিন সিনেটে বলেন, সাম্প্রতিক ঘূর্নিঝড়ের পর গৃহযুদ্ধ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ভয়ঙ্কর এক দুর্যোগের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ অবস্থায় একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সরকারের গৃহীত জরুরি পদক্ষেপই লাখ লাখ মানুষকে আসন্ন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো এবং নির্বাহক মি.জে.আর.বড়ুয়া জেনারেল হামিদ ও গভর্নর টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো বৌদ্ধ পূর্ণিমার পরপরই চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও পটুয়াখালি এলাকা সফর করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে সংগঠিত করবেন বলে জানান। পাকিস্তানি ঘাতকরা কুষ্টিয়ায় নেপালী শ্রমিকসহ স্থানীয় শ্রমিকদের পাইকারীভাবে হত্যা করে।
রাওয়ালপিন্ডিতে একজন সরকারি মুখপাত্র তথ্য প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ২৬ মার্চ শেষ রাতকে সশস্ত্র অভ্যুত্থান ও আনুষ্ঠানিকভাবে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণার সময় নির্ধরণ করেছিলো । তারা পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিমান ও সমুদ্র পথের সংযোগস্থল ঢাকা- চট্টগ্রাম দখলের পরিকল্পনা নিয়েছিলো। কিন্ত্র সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগের নির্ধারিত সময়ের মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে প্রেসিডেন্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সামরিক তৎপরতা শুরু করে এবং ২৫ ও ২৬ মার্চের মধ্যবর্তী মাঝ রাতের আগেই ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে দেশকে রক্ষা করে ।
মুখপাত্র আরো বলেন, এ সময় আওয়ামী লীগ বিচ্ছিন্নতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। শান্তিপূর্ণ পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রেসিডেন্ট সেনাবাহিনীকে তাদের কর্তব্য পালন ও সরকারি কর্তৃত্ব সম্পুর্ণভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান ।
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে
রুমী আগামীকাল রওনা হবে। ওর প্যান্টের কোমরের কাছে ভেতর দিকের মুড়ির সেলাই খুলে সেখানে কয়েকটা একশো টাকার নোট লম্বালম্বি ভাঁজ করে রেখে আবার মুড়ি সেলাই করে দিলাম। পকেট ওয়ালেটে শ-দুয়েকের বেশি রাখবে না, কারণ পথে খানসেনারা হাতিয়ে নিতে পারে।
কাপড়-জামা রাখার জন্য রুমী সঙ্গে নিয়েছে একটা ছোট আকারের এয়ারব্যাগ। তাতে দু’সেট কাটা কাপড়, তোয়ালে, সাবান, স্যান্ডেল আর দুটো বই- ‘জীবনানন্দের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ ও ‘সুকান্ত সমগ্র।’
যে বন্ধু দু’জনের সঙ্গে যাবে, তাদের নাম অবশেষে বলেছে রুমী- মবু আর শিরাত। সেই সঙ্গে এটাও বলেছে যে, নাম দুটো কাল্পনিক।
রাতে শোবার সময় রুমী বলল, “আম্মা আজকে একটু বেশি সময় মাথা বিলি করে দিতে হবে কিন্তু।”
জামী বলল, “মা, আজ আর আমার মাথা বিলি করার দরকার নেই। ওই সময়টাও তুমি ভাইয়াকেই দাও।”
ছোট বয়স থেকে ঘূমোবার সময় দু’ভাইয়ের মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে হয়। মাঝে-মাঝে এ নিয়ে দু’ভাইয়ে ঝগড়াঝাটিও বাধে। রুমী বলে “আম্মা তুমি জামীর কাছে বেশিক্ষণ থাকছ।” জামী বলল, “মা তুমি ভাইয়ার মাথা বেশি সময় বিলি দিচ্ছ।”
আমি রুমীর মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলাম, রুমী ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’ গানটার সুরে আস্তে আস্তে শিস দিতে লাগল।

(ঊষার আলো-এমএনএস)