UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩ মে ১৯৭১, সোমবার

usharalodesk
মে ৩, ২০২১ ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

কি ঘটেছিল

ঊষার আলো ডেস্ক : এদিন বিকাল প্রায় ৩টায় হঠাৎ পাক হানাদার বাহিনী নাটোরের ধলা গ্রামের বনপাড়া মিশন ক্যাম্পাস ঘিরে ফেলে। সেখানে আশ্রিত পরিবারের ৮৬ জন যুবক ও মধ্যবয়সী পুরুষকে আটক করে এবং ঐ দিন সন্ধ্যায় তাদের নাটোর দত্তপাড়া সংলগ্ন ফতেঙ্গাপাড়ায় নারদ নদের সংযুক্ত খাল পাড়ে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
ঝালকাঠির কীর্তিপাশায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটির ওপর পাকহানাদার বাহিনী হামলা চালায়। এ আক্রমণে সিরাজ সিকদার তার বাহিনীকে কয়েকটিভাগে বিভক্ত করে মাদ্রা, শতদল কাঠি, আতা ও ভিমরুলী গ্রামে পৃথক পৃথক ক্যাম্প স্থাপন করেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক আবদুস সালাম মুক্তাঞ্চল থেকে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদানের জন্য প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন ও সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দানের জন্য বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের প্রতি আবেদন জানান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভার বৈদেশিক সাহায্য বিষয়ক কমিটির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা সংক্রান্ত সাব কমিটির চেয়ারম্যান কর্নেলিয়াস গ্যালাঘর কলকাতায় বলেন, “খোলা মন নিয়ে আমি এখানে এসেছিলাম। কিন্তু কয়েকজন শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলার পর আমি এখন নিশ্চিত যে, পূর্ব বাংলায় অতি সাংঘাতিক মাত্রায় ত্রাস, বর্বরতা ও গণহত্যা চলেছে। আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, পূর্ব বাংলার জনসাধারণকে ভীত সন্ত্রস্ত করা হয়েছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এটি পাকিস্তানের ঘরোয়া বিষয় ছিল। কিন্তু পাঁচ লাখ লোক যখন দেশ থেকে বিতাড়িত হলেন, তখন এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘে যেখানে আমার দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, তাদের উচিত পাকিস্তানের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে তাকে পরিস্কার বুঝিয়ে দেয়া যে, এ ধরনের পরিস্থিতি বরদাস্ত করা যায় না।
হেলসিংকিতে সোস্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিলের সম্মেলনে গৃহীত বাংলাদেশ সম্পর্কিত এক প্রস্তাবে অবিলম্বে যুদ্ধ-বিরতি ও একটি মিমাংসার জন্য আলোচনা শুরু করার অনুরোধ জানানো হয়। প্রস্তাবে শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজনৈতিক বন্দিদের অবস্থা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের জনগণের সাহায্যের লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
সিনেটর অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আবেদন জানান। তিনি বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য ভারত সরকার যে আবেদন জানিয়েছেন, তার প্রতি সাড়া দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
খ-অঞ্চলের (বাংলাদেশ) সামরিক আইন প্রশাসক সাতজন ছাত্র নেতাকে ১০মে সকাল ৮ টার মধ্যে ঢাকার উপ-সামরিক আইন প্রশাসকের সামনে হাজির হবার নির্দেশ দেয়। ছাত্র নেতারা হচ্ছে, ১. ডাকসুর সহ-সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ২. ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন, ৩. ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, ৪. ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ৫. খায়রুল আনাম খসরু, ৬. মোস্তফা মহসিন মন্টু, ৭. সেলিম মহসিন।
সামরিক কর্তৃপক্ষ এক ঘোষণায় মহাখালী রেলওয়ে লেবেল ক্রসিং থেকে পুরনো ঢাকা, ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ ডিআইটি রোডের আশপাশের বসবাসকারী সবাইকে ৫ মে’র মধ্যে বসতি ছেড়ে দেবার নির্দেশ দেয়।
পিপলস্ পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো লাহোরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দেশের একাংশে সামরিক আইন বলবৎ রেখে অপরাংশে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যেতে পারে। পশ্চিম পাকিস্তানে ক্ষমতা হস্তান্তর হলে তা দেখে পূর্ব পাকিস্তানীরা সেখানে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির গভীর প্রেরণা অনুভব করবে। সূত্র : বাঙালীয়ানা

(ঊষার আলো-এমএনএস)