UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় ঈদ আনন্দ নেই সীমিত আয়ের মানুষের, হতাশার ঘোর

usharalodesk
মে ৬, ২০২১ ৯:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো প্রতিবেদক : দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার পর কে না চায় ঈদের আনন্দঘন মুহুর্তটি তার পরিবার-পরিজনের সাথে উপভোগ করতে। হোক সে তৃনমূল পর্যায়ের নিন্মশ্রেনীর সাধারণ কোন মানুষ। যার বছরের প্রতিটি দিনই কাটে অভাব আর অনাটনে। মাসের প্রতিটি দিন কখনো খেয়ে বা না খেয়ে দিন পার করে। সারা বছরই ধরতে গেলে গায়ে একই রঙ্গের জামা বা পরণে একই রঙ্গের লুঙ্গি। তারপরও সারা বছর কষ্টে কাটলেও ঈদে পরিববারের ছোট্ট ছোট্ট ছেলে-মেয়েকে অভিজাত কোন মার্কেট পোশাক বা জুতা কিনে দিতে না পারলেও ফুটপাতে ঝুলানো দু’ থেকে তিনশ’ টাকার মধ্যে জামা, একই দামের মধ্যে একটি নতুন জুতা আর স্ত্রীর জন্য দোকান হতে মোটা কাপড়ের একটি নতুন শাড়ি দিতে চায় নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। আর ঈদের দিন অন্য বাড়ির মতো হরেক রকম সেমাই, ফিন্নি, পায়েস, নানা রকম মিষ্টান্ন আর গ্যাসের চুলায় বসানো বাতাসে ভেসে আসা সুঘ্রানের বাসমতি চাউলের পোলাও বা বিরানীর গন্ধের স্বপ্ন না দেখলেও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো একটি দিনের জন্য, একটি বেলার জন্য পরিবারের সদস্যদের একটু পোলাও এর ঘ্রান আর মাংস যোগাড় করবেই, তাতে যত কষ্ট হোক না কেন। তবে প্রতি বছরের ন্যায় এ আয়োজনের যোগানে হিমশিম খাচ্ছে নগরীর দৌলতপুর ছোট্ট উপশহরটির নিন্ম আয়ের সাধারণ মানুষ। তাদের তালিকায় রয়েছে শ্রমিক, দিনমজুর আর রাস্তায় খেটে খাওয়া মানুষ তথা রিক্সা-ভ্যান চালক। দেশের চলমান করোনা ভাইরাসে প্রকোপ আর দীর্ঘ লকডাউনে অনেকটাই জীবন্ত মৃত্যু ঘটাচ্ছে এ সকল নিম্ন আয়ের মানুষদের। আর যার প্রভাবে ঈদের আনন্দ বিলীন হতে চলেছে এই মানুষগুলোর।
নগরীর দৌলতপুর মুহসীন মোড় হতে রেলিগেট নগরঘাট পর্যন্ত রয়েছে বেশ কয়েকটি মালিকানাধীন ও স্বায়িত্বশাসিত পাটকল। দীর্ঘদিন ধরে কোন কোন প্রতিষ্ঠান চলছে ধীর গতিতে আর কোন কোন প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ। যে কারণে এ সকল প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা এখন অন্যপেশায় যুক্ত। যার বেশির ভাগই শ্রমিক এখন রিক্সা চালক বা সস্তার দিনমজুুর। অনেকেই ভিন্ন স্থানে চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন কাজে লিপ্ত ছিল। কিন্তু করোনা আর দীর্ঘ লকডাউনের কারণে এ সকল নিন্ম আয়ের মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বর্তমানে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাই তারা দিন নিপাতিত করছে কষ্টে। আর সামনে ঈদকে ঘীরে তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তায়।
দৌলতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের বিলের শেষ মাথায় বাস করছেন লেবার আতিয়ার। তিনি জানান, করোনার কারণে বর্তমানে কোন কাজ নেই। বাড়ীতে ছেলে-মেয়ে আর আছে। যাদের ঈদে তো নতুন কাপড় দিতেই পারবো না বাজার করে ভালো বন্ধ খাওয়ার কথা তো বাদই দিলাম। ঈদ গরীবের জন্য নয়।
দৌলতপুর পাবলার রিক্সাচালক মোস্তফা জানান, আর কয়েকদিন পরে ঈদ। প্রতিদিন পাশের বাসার কেউ না কেউ মার্কেটে যাচ্ছে। আমার ছোট বাচ্চাগুলোর জন্য এখনো নতুন কাপড় কিনতে পারিনা। বাড়ীতে গেলেই বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাহানা ধরে। করোনা আর লকডাউনের কারণে প্রশাসনের লোক বেশি রাত পর্যন্ত রিক্সা চালাতে দেয় না। তারপর আবার মাঝে-মােঝ থানায় রিক্সা নিয়ে সাতদিনের জন্য আটকে রেখেছিল। তাছাড়া ইজিবাইকের জন্য যাত্রী কমে যাওয়ার দরুন আয় কমে গেছে।
গাইকুড়ের রাজমিস্ত্রির হেলপার মহিদুল জানান, করোনার কারণে কেউ বাড়ীর তৈরী বা মেরামতের কাজ করাচ্ছে না। প্রায় ২০ দিনের মতো সম্পূর্ন বেকার বসে আছি। সামনে ঈদ ঘরে বউ ছেলে-মেয়ে, বাবা-মা আছে। চিন্তায় রাতে ঘুম হচ্ছে না কিভাবে ঈদে এদের গায়ে নতুন কাপড় আর মুখে সুস্বাদু খাবার তুলে দেব।
দৌলতপুর আমতলার কাঠ মিস্ত্রি লিটন, করোনা শুরু হতে ধরতে গেলে সম্পূর্ন বেকার। তারপর আবার ঘাড়ের উপর সমিতির কিস্তির ভারী বোঝা। তার দোকান খোলা নামে মাত্র। দোকানে অসার হয়ে বসে থাকা মাত্র। কোন ক্রেতা নেই। নেই কোন কাজের অর্ডার। তিনি জানান, অন্য সময় ধার দেনা করে দিন পার করে দেয়। কিন্তু ঈদে সমগ্র এলাকা জুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। বাড়ীতে স্ত্রী, মা আর ছোট ভাই আছে। ঈদে মনে হয়না তাদের জন্য কোন নতুন পোশাক কিনতে পারবো। করোনা আমাদের জীবনকে একেবারে জীবন্ত পঙ্গু করে দিল। দৌলতপুরে এ রকম হাজারো লিটন রয়েছে যারা পারছেনা লজ্জায় কারো কাছে হাতপাততে বা আর্থিক সহযোগীতা চাইতে। করোনা মহামারী আর দীর্ঘ লকডাউনের প্রভাব এ সকল সাধারণ নিন্ম আয়ের মানুষের জীবনে ঈদ আনন্দ না হয়ে বর্তমানে অসহনীয় যন্ত্রনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

(ঊষার আলো-এমএনএস)