ঊষার আলো রিপোর্ট : ভোট দেওয়ার চেয়ে কীভাবে ভোট হচ্ছে, সেদিকেই এখন আগ্রহ বেড়েছে অনেকের। বিগত কয়েক বছর থেকে উপনির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বেশকিছু নির্বাচনে ভোট পড়ার হার উদ্বেগজনক হারে কমতে দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়ার হার ১১.৫১ শতাংশে নেমে আসে। এর আগে চট্টগ্রাম-৮ আসনে ভোট পড়ার এ হার ছিল ১৪.৫৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোটারদের আস্থাহীনতা এর অন্যতম কারণ। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে এবং রাজনীতির মাঠে প্রবল শক্তিধর দুই প্রধান দল অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ভোটের মাঠের এমন দৈন্যদশা আর থাকবে না। যাহোক, কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখতা লক্ষ করা গেছে। প্রার্থীদের ঘামঝরানো প্রচারণার পরও কেন ভোটাররা কেন্দ্রে আসছেন না, তা রাজনৈতিকসহ নানা মহলকেই ভাবাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে এর কারণ কমিশনকেই খুঁজে বের করতে হবে। গত বছর এ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়। তা সত্ত্বেও ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হয়নি। মূলত নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ তার জনপ্রতিনিধি বেছে নেয়। ফলে নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কী কী করা প্রয়োজন, ইসিকে তা নিয়ে কাজ করতে হবে।
গেল বছর জার্মানিতে নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ ক্রমেই কমতে থাকায় দেশটির সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে কারণ খোঁজার চেষ্টা করে। ভোটার এবং বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য থেকে উঠে আসে, সে দেশে ভোটারদের অনাগ্রহের মূল কারণ তারা মনে করে রাজনীতিবিদরা জনগণকে সত্য কথা বলেন না। নিজেদের স্বার্থরক্ষাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি করোনা মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতিতে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাওয়া জনগণ ভোটদানের সময় ও সুযোগ পান না। এ অবস্থায় নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে বেশকিছু উপায় বাতলে দেন সে দেশের বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে নয় বরং ভোটকেন্দ্রটিকেই ভোটারদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। সে ক্ষেত্রে পোস্টাল ও ডিজিটাল ভোট একটি ভালো উপায় হতে পারে। পাশাপাশি ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ করে দিলেও অংশগ্রহণের হার বাড়বে বলে তারা মত দেন। একই সঙ্গে নির্বাচনি ব্যয় কমাতে জাতীয় এবং আঞ্চলিক নির্বাচন একইসঙ্গে করার পরামর্শও দেন অনেকে। এত গেল জার্মানির কথা। আমাদের দেশে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনগুলোয় ভোটারদের কীভাবে বুথমুখী করা যায়, তা সার্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশনকেই ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোরও সহনশীল রাজনীতি করতে হবে। ভোটারদের মন থেকে সন্দেহ, সংশয় ও অবিশ্বাস দূর করতে হবে। সব পক্ষ যদি নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের কাছে নির্বাচনকে একটা ভোট উৎসব হিসাবে তুলে ধরতে পারে, সে ক্ষেত্রে আবারও হয়তো ভোটারদের দীর্ঘ লাইনের দেখা মিলবে।
ঊষার আলো-এসএ