ঊষার আলো রিপোর্ট : দীর্ঘদিন পর আবারো রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি। সে লক্ষ্যে শ্রমিক দিবসে ঢাকায় বড় সমাবেশ করতে চায় দলটি। এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী জেলা, মহানগর ও শিল্পাঞ্চলের নেতাকর্মীরা ‘শ্রমিক সমাবেশে’ অংশ নেবেন। বড় জমায়েতের লক্ষ্যে কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। এর আগে বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে ২৬ এপ্রিল নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
পৃথক দুটি সমাবেশেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটি ও কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে দিয়েই আবারো চাঙা হয়ে উঠবেন বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়াও নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি, সভা-সমাবেশ ও তৃণমূল পর্যায়ে কর্মিসভার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। গত শুক্রবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন সাংগঠনিক নেতারা। আজ রাতে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে নতুন কর্মসূচি ও প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে শনিবার এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ ও জাতি বড় দুঃসময় পার করছে। গণতন্ত্রকামী মানুষরা নির্যাতিত হচ্ছেন। এজন্য জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। সবাইকে এক হয়ে রাজপথে নামতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঝাঁকি দিতে হবে।
সূত্রে জানা যায়, নেতাকর্মীদের চাঙা ও সংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনায়ই নতুন করে মাঠে নামছে বিএনপি। প্রথমে ইস্যুভিত্তিক ও বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে নানামুখি কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে ক্রমান্বয়ে দলটির চলমান আন্দোলন গতি পাবে। সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এরপরেই ১ মে শ্রমিক সমাবেশ করবে শ্রমিক দল। ২ মে বড় আয়োজনে শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে সংগঠনটি। এ ছাড়া ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে মে মাসজুড়ে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, শুক্রবারের সমাবেশ নিয়ে প্রস্তুতি সভা শুরু করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। আজ যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সাংগঠনিক জোনের প্রস্তুতি সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে মহানগরের প্রত্যেক থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি ছাড়াও প্রত্যেক অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। সমাবেশের জন্য এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে যৌথ সভা করেছে শ্রমিক দল। ১ মে শ্রমিক দিবসের সমাবেশ সফল করতে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা। একই দিন প্রত্যেক জেলা, মহানগর, শিল্পাঞ্চল ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রমিক দলের ব্যানারে সমাবেশ ও র্যালি কর্মসূচি পালন করবে। এজন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রমজীবী মানুষদের ঢাকায় আনার পরিকল্পনা তাদের নেই বলে সংগঠনের নেতারা জানান। মে দিবসের কর্মসূচি ছাড়াও ২ মে শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করবে সংগঠনটি।
নেতারা জানান, শ্রমিক সমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটাতে চাইছেন তারা। মূলত, ঢাকার শ্রমজীবী মানুষকে টার্গেট করে এ সমাবেশ করার পরিকল্পনা থাকলেও ঢাকার আশপাশে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ থেকেও কিছু নেতাকর্মী আসতে পারে। ঢাকার বিভিন্ন সেক্টরের বাইরে অসংগঠিত বিভিন্ন শ্রমিক ও মেহনতি মানুষকে সংগঠিত করার পরিকল্পনা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিনা কারণে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। এই সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে তাদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এর অংশ হিসাবে আগামী শুক্রবার ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা সমাবেশ করতে চাই।
শ্রমিক দলের সমন্বয়ক ও শ্রমিক নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, মহান মে দিবস বিশ্বের শ্রমিকদের প্রতি সংহতি দিবস। এটা অধিকার ও আদর্শিক দিন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা আরও তাৎপর্যপূর্ণ। এদেশের শ্রমিকদের কোনো অধিকার নেই। সাধারণ মানুষ তাদের অধিকারে আদায়ের দাবিতে শ্রমিক সমাবেশে যোগ দেবে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আগামী ৪ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা করা হবে।
ঊষার আলো-এসএ