UsharAlo logo
শনিবার, ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনায় কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা চাঁদাবাজি, রক্ষা পাচ্ছেন না চেম্বার সভাপতিসহ সাধারণ মানুষ

koushikkln
আগস্ট ১৩, ২০২৪ ৪:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কাজী অনিরুদ্ধ : খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি, সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা কাজি আমিনুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিসাধন না করার শর্তে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়েছে। অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপনে থাকা কাজি আমিন এ অভিযোগ করেছেন সাংবাদিকদের কাছে। শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়; চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষও। গত এক সপ্তাহ ধরে খুলনায় চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজী। দিনে ও রাতে পাহারা দিয়েও চাঁদাবাজি থামানো যাচ্ছেনা। আর এরজন্য পুলিশের নিষ্কিয়তাও অনেকাংশে দায়ি বলে মনে করছেন নগরবাসী। বিএনপির কতিপয় নেতাদের বিরুদ্ধে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

রূপসা সেতু সংলগ্ন লবণচরা বোখারি পাড়ায় বসবাস করেন ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের পরিবার। তার স্ত্রী একজন সরকারী কর্মকর্তা। গত ৫ আগষ্ট দুর্বৃত্তরা তার বাড়ীতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে। ব্যাবহৃত প্রাইভেট কারটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার আগে নগদ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। চারটি দোকান ভাংচুর কওে ভাড়াটিয়াদেও কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদাও নেয়। বর্তমানে ওই পরিবারে কাছে মোটা অংকের চাঁদা চেয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী কামাল হোসেন।

ছবি: খুলনা প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

৪ আগষ্ট খুলনার স্থানীয় দৈনিক দেশ সংযোগ অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। পরের দিন পত্রিকার সম্পাদক মাহবুবুল আলম সোহাগের অফিস কক্ষটি দখলে নেওয়া হয়। ফলে এক সপ্তাহ ধরে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ থাকে। রোববার ওই অফিস কক্ষে লাগানো তালার চাবি ফেরত দেওয়া হলে পত্রিকাটি রোববার থেকে প্রকাশনা শুরু করে। এছাড়া দখলদাররা প্রথমে ২ লাখ এবং পওে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।

ছবি: দৈনিক দেশসংযোগ পত্রিকা অফিসে আসবাবপত্র ও অন্যান্য মালামাল ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, খুলনা বড় বাজারের আড়তদার সহিদুল ও কালামের কাছ থেকে নগদ ৩ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন বিএনপির পরিচয়দানকারী কতিপয় নেতা।
ব্যবসায়ী সরোয়ার কাজী কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছে। টুটুল নামের এক দোকানদারের কাছ থেকে নিয়েছেন আরো ১ লাখ টাকা। এছাড়া শহরের নিক্সন মার্কেটের এক দোকানে ৫ লাখ টাকা চেয়ে তালা দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় আরও কয়েকটি দোকানে তালা মেওে চাঁদা পরিশোধ করে সমাধান করতে বলা হয়েছে। ঢাকার আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের খুলনার ৪ নম্বর ঘাটের গোডাউনেও তালা দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয়রা জানান, জব্বার মার্কোটে ইমারত মিয়ার ৫ টি দোকানে তালা দিয়েছে বিএনপির এক নেতা। পাশাপাশি বলে দেয়া হয়েছে তাদেরকে একটি দোকান তাকে লিখে দিতে হবে। এছাড়াও কৃষ্ণ নামের একজন খুদে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে ওই নেতা। আড়তদার তোতা মিয়ার আড়তে তালা দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম মুন্সির স্টেশন রোডের দোকানেও দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। গোপাল চন্দ্র সাহার গোডাউনে সব মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। খুলনা বড় বাজারের হিন্দু ব্যবসায়ীর এক গাড়ি চিনি লুটপাট করে বিক্রি কওে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। তবে ওই ব্যবসায়ী ভয়ে অভিযোগ করতে সাহস করছেন না। তাজুল ইসলাম নামের এক ঠিকাদারের দোকানের রড, সিমেন্ট, গাড়ি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালামাল নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সোনাডাঙ্গা থানার এক পাতি নেতা বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সুলতান হোসেন খানের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। জেলখানা ঘাট ও রুপসা ঘাটের ইজারাদার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফের  ঘেরের দুই শত মন মাছ লুট করে নিয়ে গেছে দুবৃর্ত্তরা। এছাড়া দশ লাখ টাকার চেকও জোর করে নেওয়া হয়েছে। ঘেওে থাকা টোং ঘরগুলো জ¦ালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ছবি: লবনচরায় ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের গাড়ি ও বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে খুলনার শিল্পপতি, পাট ব্যাসায়ি, আমদানী ও রপ্তানীকারক, নৌ-পরিবহন ব্যবসায়ি, সিএন্ডএফ এজেন্ট, স্বর্ণ খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্ট্রির বর্তমান ও সাবেক পরিচালক, বেসরকারি হাসপাতালসহ, বিভিন্ন মার্কেটসহ ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঢালাওভাবে মোটা অংকের চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। চাঁদা না দিলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে হামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এসব চাদাঁবাজরা ফোন করে চাদাঁদাবি করে মুহুর্ত্যের মধ্যে ফোন বন্ধ করে দিচ্ছেন। এছাড়া কিছু পাতি নেতা নিজেদেরকে একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার পরিচয় দিয়ে চাঁদা চাচ্ছেন। তারা কোমরে অস্ত্র নিয়ে একসাথে ১৫-২০ জন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে গোটা শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদেরকে ওই দলের নেতারা পর্যন্ত চেনেন না।
এছাড়া বিভিন্ন সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্বশাষিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষথেকে থানায় এখনও অভিযোগ করা হয়নি।

ছবি: খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বাসভবনে সন্ত্রাসীদের হামলা।

এদিকে প্রতিটি চাদাঁবাজীর ঘটনার সাথে বিএনপির কতিপয় নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তবে এ অভিযোগ সর্ম্পকে ‘আজকের পত্রিকার’ পক্ষথেকে খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল ইসলাম তুহিনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। শফিকুল ইসলাম তুহিন ‘আজকের পত্রিকাকে’ বলেন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী বিএনপির লোক নয়। তারা যেই হোকনা কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমার বিরুদ্ধেও যদি এ ধরণের অভিযোগ আসে তাহলে আমার বিরুদ্ধেও আপনারা রিপোর্ট করেন।

খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা বলেছেন, নগরীতে এখনো পর্যন্ত একজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। নগর বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক বদরুল আনাম খান ও মাসুদ পারভেজ বাবুর সমন্বয়ে একটি অভিযোগ সেল গঠন করা হয়েছে। তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমীর এজাজ খান ও সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, পাইকগাছায় একজন হিন্দু ব্যবসায়ীর বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। এছাড়া কারো বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, থানাগুলোতে সিমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুরাপুরি দায়িত্ব পালন করার পর নাশকতা, লুটপাটকারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।