ঊষার আলো রিপোর্ট : অতীতে সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে শুরু করত। কিন্তু গত বছর এ ধারায় পরিবর্তন এসেছে-নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এবার নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসেও এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রকোপ ঊর্ধ্বমুখী। ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে দৈনিক গড়ে হাজারখানেক রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এ তথ্য থেকেই স্পষ্ট পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, দেশে মশক নিধন কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ কম। ফলে ডেঙ্গু ভাইরাস বছরব্যাপী ভোগাচ্ছে। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। এ বছর ডেঙ্গুতে মোট প্রাণহানি হয়েছে ৪৮৫ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি আছেন ৩ হাজারেরও বেশি রোগী।
জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বছরজুড়ে বিস্তৃত হয়েছে। মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার আচরণে পরিবর্তন এসেছে। এ মশা এখন শুধু পরিষ্কার পানিতেই নয়, দূষিত পানিতেও বংশবিস্তার করতে সক্ষম। প্রতিকূল অবস্থায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মশা তার আবাসনের পরিবর্তন ঘটায়। এ মশা গাছের ভেতরে জমে থাকা পানিতেও বংশবিস্তার করে। সামান্য পরিমাণ জমা পানিতেও এডিস মশা ডিম পাড়ে এবং সেখানে লার্ভা জন্ম নেয়। এমন কিছু জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, যেখানে বৃষ্টির পানির সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে রয়েছে বহুতল ভবনের পার্কিং, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স। শীতকালে বৃষ্টি না থাকলেও রাস্তাঘাট বা উন্মুক্ত স্থানে ছোট-বড় পাত্র পড়ে থাকলে সেগুলোতেও মশা ডিম পাড়তে পারে। কাজেই মশার বংশবিস্তারের সব উৎসস্থল ধ্বংস করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
বস্তুত এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটি কঠিন। সবাই দায়িত্বশীল না হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা থেকেই যায়। ডেঙ্গুর নতুন উপসর্গগুলোর সঙ্গে মানুষ পরিচিত নয়। এ কারণে এ রোগে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। কাজেই কারও জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রোগটি ইতোমধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই এডিস মশা নিধনে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা পেতে বছরব্যাপী মশক নিধন ও অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
ঊষার আলো-এসএ