ঊষার আলো রিপোর্ট : অবৈধ অর্থ ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে স্থানান্তর করার এক সর্বদিকবিস্তৃত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে চলেছে। এ প্রচেষ্টায় সাফল্য কতটা আসবে, সে প্রশ্নের চেয়ে বড় হলো, সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হাত দিয়েছে, যা আমাদের সার্বিক অর্থনীতির উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির সাবেক পরিচালক, যারা ঋণখেলাপি হয়েছেন, তাদের শেয়ার বিক্রি করে ঋণের টাকা আদায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে যদি পুরো টাকা আদায় না হয়, দেশে তাদের নামে যে সম্পদ রয়েছে, সেগুলো অধিগ্রহণ করা হবে। এতেও সম্পূর্ণ টাকা আদায় না হলে সংশ্লিষ্ট সাবেক পরিচালকদের ঋণ পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হবে। তারা যদি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে জেল-জরিমানার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া যারা ঋণের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন, বিদেশে থাকা তাদের অর্থ ও সম্পদ অনুসন্ধান করে তা দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হবে। ওদিকে ব্যাংকগুলোর ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা ঋণ পরিশোধ করেনি, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ঘোষণা করে তাদের ব্যবসার সুযোগ সংকুচিত করে ফেলা হবে। এসব কাজের উদ্দেশ্য পরিষ্কার-খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো এবং খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানোই লক্ষ্য।
নির্দ্বিধায় বলা যায়, সরকার কর্তৃক গৃহীত এসব পরিকল্পনা সুচিন্তাপ্রসূত। আমরা সবাই জানি, গত রেজিমে আমাদের অর্থনীতির জগৎ ছিল দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন। ছোট-মাঝারি-বড়-মেগা দুর্নীতির এমন সব চিত্র এরই মধ্যে উঠে এসেছে যে, কখনো কখনো চোখ কপালে উঠে যায়। এস আলম গ্রুপ, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, এনবিআরের মতিউর-এসব নাম এখন মুখে মুখে ফেরে। এছাড়া ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির অজস্র টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন অসংখ্য দুর্নীতিবাজ। বিশেষত ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালকরা ধরাকে সরা জ্ঞান করে যা খুশি তা-ই করেছেন। এসব অপকর্ম যে জবাবদিহির আওতায় আনা হলো, এটা এক বড় সুসংবাদ।
বলতেই হবে, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া জটিল হলেও দেশে থাকা অবৈধ টাকা ও সম্পদ চিহ্নিত করে তা আদায় করা কোনো কঠিন কাজ নয়। মূল কথা হলো, সরকার এ ব্যাপারে কতটা আন্তরিক। এমনও হতে পারে, দুর্নীতিবাজরা বর্তমান সরকার বা সরকারের ঘনিষ্ঠজনদের আনুকূল্যে পার পেয়ে যাবেন। তেমনটা যেন না হয়, সেদিকে সরকারের উচ্চ মহলকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশকে সত্যি সত্যি দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার। তা না হলে দুর্নীতিপ্রবণরা ভবিষ্যতেও দুর্নীতির মতো মারাত্মক অপকর্মে লিপ্ত হতে পারে। গত রেজিম দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি করে গেছে, তা এক কথায় ভয়াবহ। বলা যায়, দুর্নীতির একটা কুসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল এবং এ দুর্নীতির বেশিরভাগই হয়েছে ব্যাংক সেক্টরে। এ সেক্টরকে পরিশুদ্ধ করা এখন খুবই জরুরি একটা কাজ।
ঊষার আলো-এসএ