UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার প্রত্যয়

usharalodesk
ডিসেম্বর ১২, ২০২৪ ১০:২০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট :  ভারতীয় আগ্রাসনের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মধ্য দিয়ে আধিপত্যের ‘শকুন’কে প্রতিহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নেতারা। বুধবার যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের লংমার্চ থেকে এমন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। নেতারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কোনো দেশের প্রভুত্ব মেনে নেয়নি, আগামী দিনেও মেনে নেবে না। দেশ নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র হলে জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা আপসহীন।

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকার অবমাননা ও ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচারের প্রতিবাদে এদিন আগরতলা অভিমুখে ঢাকা-আখাউড়া লংমার্চ করে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এতে লাখো নেতাকর্মীর ঢল নামে। পরে ভারতের সীমান্ত লাগোয়া আখাউড়া স্থলবন্দরের ট্রাক স্ট্যান্ডে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়ে ৫টায় শেষ হয়।

এদিকে ঢাকা থেকে লংমার্চ শুরু হলে আখাউড়া রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা সড়কের দুপাশে জড়ো হন। তারা গাড়ি বহরে থাকা নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে, ফুল ছিটিয়ে স্বাগত জানান। এদিন লংমার্চে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে তিন সংগঠনের নেতাকর্মীরা গাড়ি ও মোটরবাইক নিয়ে অংশ নেন। এ সময় তাদের হাতে ছিল জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং নানা ফেস্টুন।

সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে লংমার্চের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি, এই স্বাধীনতা আমরা বিক্রি করে দেব? আমরা পিন্ডির কাছে থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি, এটা দিল্লির কাছে আমরা আত্মসমর্পণ করব, এই রক্ত আমাদের নেই। তিনি বলেন, আজকে দিল্লির যারা সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী তারা মনে রেখো, তোমরা একজন ভয়ংকর রক্তপিপাসু লেডি ফেরাউনকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমর্থন দিয়েছিলেন। আজকে ভারতের শাসকগোষ্ঠী গোটা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে সমালোচিত। অথচ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। ওরা (ভারত) বাংলাদেশের মানুষের রক্তের যে তেজ, আত্মশক্তি, বীরত্ব-এটা দিল্লির শাসকরা বুঝতে পারেনি।

সরেজমিন দেখা যায়, সকাল ৭টায় রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন তিন সংগঠনের নেতারা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। এরপর সকাল ৯টায় কয়েক হাজার প্রাইভেটকার, জিপ, ট্রাক, পিকআপ নিয়ে শুরু হয় লংমার্চ। এ সময় নেতাকর্মীদের হাতে নানা স্লোগান সংবলিত ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা ওড়াতে দেখা গেছে। নেতাকর্মীরা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারতের দালালেরা-হুঁশিয়ার সাবধান’সহ ভারতবিরোধী নানা স্লোগান দেন।

পল্টন-ফকিরাপুল-ইত্তেফাক মোড় ও ফ্লাইওভার হয়ে সাইনবোর্ড-চিটাগং রোড-কাঁচপুর মোড়-তারাবো-বরফা-ভুলতা, গাউছিয়া-চনপাড়া, মাধবদী-পাঁচদোনা-সাহেপ্রতাব, ভেলানগর-ইটখোলা-মারজাল-বারুইচা রুটে বেলা সাড়ে ১২টায় ভৈরব পৌঁছায় লংমার্চ। সেখানে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পৌনে ১টায় সভা শুরু হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা লংমার্চ করছি। ভারত নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণ-আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা, তার সব দোসরকে আশ্রয় দিয়েছে। আপনাদের (ভারত) জানিয়ে দিতে চাই-এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ না। এই বাংলাদেশ সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার ও তারেক রহমানের বাংলাদেশ। এদেশের এক ইঞ্চি মাটির দিকে তাকালে সেই চোখ উপড়ে ফেলা হবে।

ভারতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের বন্ধু না। বিশেষ করে সেখানে শেখ হাসিনা থাকে, বাংলাদেশের শত্রু থাকে-সেই ভারত বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না।

যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ পাশাপাশি রাষ্ট্র। আমরা বলেছি, ভারত বন্ধু রাষ্ট্র। কিন্তু সেখানে আমাদের হাইকমিশনে হামলা হয়েছে, পতাকা পুড়িয়েছে। সীমান্তে আমাদের দেশের নাগরিকদের গুলি করে মারছে, ফেলানিকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখে। এটা কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না।

ভৈরবে সংক্ষিপ্ত পথসভার পর বিকাল সাড়ে ৩টায় লংমার্চ আখাউড়ায় পৌঁছায়। গাড়িবহরের প্রথম প্রান্ত আখাউড়া স্থলবন্দর পৌঁছলেও শেষ প্রান্ত ভৈরব এলাকা অতিক্রম করতে পারেনি। পরে নেতাকর্মীরা ভারতীয় সীমান্তের ১০০ মিটারের কাছাকাছি স্থলবন্দরের ট্রাক স্ট্যান্ডে সমাবেশ করেন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত স্বাধীনচেতা জাতি। আমরা বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সেদেশের। তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর বাংলাদেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে দেখতে হবে। আমাদের কোনো প্রভু নেই। আমরা ভারতকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে দেখি। আর শেখ হাসিনা সরকারকে ভারত আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আপনারা ভারতকে বলেন, শেখ হাসিনাসহ তাদের দোসরদের ফিরিয়ে দিতে।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, দাসত্ব নয়, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য জীবনকে বাজি রাখতে হবে। প্রয়োজনে দেশের সম্মান রক্ষায় আবারও রক্ত দেব। তবুও দিল্লির দাসত্ব মানবে না এদেশের জনগণ।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, এই লংমার্চ সফল হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি, শেখ হাসিনা আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজারো নেতাকর্মীকে গুম ও খুন করেছে। সুতরাং যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন, তা সফল হবে না।

লংমার্চে অংশ নেন যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করিম পল, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, সাংগঠনিক কামরুজ্জামান জুয়েল, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

শতাধিক গাড়িতে তিন সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী লংমার্চে যোগ দিয়েছেন।

ঊষার আলো-এসএ