ঊষার আলো রিপোর্ট : আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। পাঁচ আগস্ট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভেদাভেদ ভুলে বেশ কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা।
ইসলামী দলের বাইরেও কয়েকটি দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে জামায়াত নেতাদের অংশ নিতে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘পরিকল্পনা তো আছেই। আমাদের ইসলামিক দলগুলোর মধ্যে জোট হতে পারে। আবার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে মাঠে ছিল, দেশ ও জাতির স্বার্থে তাদের সঙ্গেও ঐক্যের পরিবেশ হলে আমরা সেখানে ঐক্যবদ্ধ হতে রাজি। আমরা ঐক্যের প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। জাতীয় ঐক্য এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতেই কেবল বিশেষ করে আগস্টের চেতনা ধারণ করে এটা করা সম্ভব। যারাই ঐক্য করতে আগ্রহী হবে তাদের সঙ্গে ঐক্য করতে আমাদের দ্বিধা নেই।’
আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়াটাকেই চ্যালেঞ্জ মনে করি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তাকে ডিস্টার্ব করার জন্য, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের যে অভিযাত্রা সেটাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দেশি-বিদেশি অনেক চক্র একটার পর একটা পরিস্থিতি তৈরি করছে। পালটা ক্যু, জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার-কাণ্ড, সিভিল সোসাইটি ও সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেনের অরাজকতা তৈরি করা। বিভিন্ন দাবি নিয়ে প্রশাসন ও সরকারকে বেকায়দার ফেলা ও হিন্দু সম্প্রদায়কে উসকে দিয়ে দেশের বাইরে একটা নতুন পরিস্থিতি তৈরি করা-এগুলোর কারণে সরকারের তো রোডম্যাপ, সংস্কার, নির্বাচনি দিনক্ষণ ঘোষণা বিলম্বিত হলো। এখন সামনের দিনগুলোতে নির্বাচনের যে আইডিয়া তার (অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান) সে পর্যন্ত পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এসব বাধা, চ্যালেঞ্জগুলো কতটা মোকাবিলা করতে পারবেন? জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন কতটা অবাধ, নিরপেক্ষ করতে পারবেন এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশনসহ সিভিল প্রশাসন, পুলিশ, জুডিশিয়ারি এসব সংস্কার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করে, অন্তত একটা নির্বাচন দিতে যতটুকু সংস্কার লাগে এগুলোই মনে হয় চ্যালেঞ্জ। আমরা এখনো আশাবাদী, সরকারের প্রতি আস্থা রাখি এবং আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। যাতে তারা আগামী নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করতে পারে।’
দেশের পটপরিবর্তনের পর আলোচনায় আসে অন্য ইসলামিক দলগুলোও। যাদের লক্ষ্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এজন্য দলগুলো নির্বাচনি জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও ইসলামী দলগুলোর মধ্যে আদর্শগত অমিল থাকায় সেই জোট গঠনে সফল হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্ট দলগুলো।
এর মধ্যে কয়েকটি দল বিভিন্ন জোটের সঙ্গে মিলে বিএনপির ডাকা যুগপৎ আন্দোলনেও সরব ছিল। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটে ভেড়াতে এসব দল ফের আলোচনায় উঠে আসছে। কেউ কেউ এও মনে করেন, ইসলামিক দলগুলোকে জোটে ভেড়াতে সক্ষম হলে ভোটের মাঠের সমীকরণ অনেকটা সহজ হবে।
জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট না হলে ভোটের মাঠে এটা তেমন কোনো ফলপ্রসূ হবে না। ইসলামী সংগঠনগুলোকে সাধারণ মানুষ আলাদা করে দেখে না। আমাদের মধ্যে হয়তো বিভিন্ন মতবিরোধ আছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ যারা তারা ইসলামী সংগঠনগুলোকে এক জায়গায় দেখতে চায়। বিশেষ করে ভোটের মাঠে। সেক্ষেত্রে জামায়াতের মতো একটা বড় শক্তি, তারা যদি আলাদা থাকে, তাহলে তো ঐক্য কোনো ফলপ্রসূ হবে না। এজন্য এটা নিয়ে আমাদের ভাবনা আছে।
ঊষার আলো-এসএ