UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হুমকিতে জননিরাপত্তা; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে

ঊষার আলো রিপোর্ট
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫ ৫:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না, জনমনে এ প্রশ্নটি জোরালো হচ্ছে। রাজধানীসহ সারা দেশে নানাভাবে চাঁদাবাজি ছাড়াও একের পর এক ছিনতাই, ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। উত্তরায় প্রকাশ্যে রিকশা আরোহীকে রামদা দিয়ে কোপানো, ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে বাসের মধ্যে তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতি ও ধর্ষণের মতো পৈশাচিক ঘটনা, এর একদিন পর রাতে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে বনশ্রীতে বাসার সামনে প্রকাশ্যে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে ছিনতাই, মোহাম্মদপুর ও আদাবরে দুই রিকশা আরোহীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট এবং ধানমন্ডিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এমন সিরিজ দুষ্কর্মের বেশকিছু ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় স্বাভাবিকভাবেই জনমনে আতঙ্ক বেড়েছে।

গেল ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতন হওয়ার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে। অবশ্য যে কোনো দেশেই গণ-অভ্যুত্থান হওয়ার পর কিছুদিনের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়ে থাকে। কিন্তু এদেশে গণ-অভুত্থানের ছয় মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও কেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে, এ প্রশ্নের সদুত্তর জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীরা তথা যারা ফ্যাসিস্ট সরকার পতনে মূল ভূমিকা রেখেছে, তারাও রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করেছে। শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিক্ষুব্ধ জনতা নানা কর্মসূচি পালন করেছে, করছে। জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কারণেই যে তারা পথে নেমেছে, তা বলাই বাহুল্য। প্রশ্ন হচ্ছে, জননিরাপত্তার এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কি সন্তোষজনক পদক্ষেপ নিতে পারছে?

আমরা দেখছি, রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো তো বটেই, অলিগলিতেও হরদম ছিনতাই হচ্ছে এবং এসব অপকর্ম করছে মূলত জেলফেরত আসামিসহ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, অপরাধীরা শুধু সম্পদই লুট করছে না, আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভুক্তভোগীকে আঘাতও করছে। কথা হচ্ছে, অলিগলির ছিনতাইকারীদের এলাকার প্রায় সবাই চেনে। আর যারা অচেনা, স্থানীয় সিসি ক্যামেরায় তাদের চেহারা ঠিকই ধরা পড়ছে। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে কেন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উল্লেখযোগ্য তৎপরতা না থাকার কারণে ছিনতাইকারীদের দমানো যাচ্ছে না। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় কোথাও কোথাও ছিনতাইকারীদের উপদ্রব সাময়িকভাবে কমে এলেও সুযোগ পেলেই তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে। ফলে অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, নগরবাসী রাস্তায় বেরোলেই সর্বক্ষণ ভীতসন্ত্রস্ত থাকে-কখন তারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়।

জানমালের নিরাপত্তা এভাবে হুমকিতে পড়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর দায় স্বাভাবিকভাবেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার ওপরই বর্তায়। জনগণের করের টাকায় বেতনভুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং সমাজে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখবে, এটাই কাম্য। সেক্ষেত্রে এই ব্যর্থতার পেছনের কারণ কী, কেনইবা অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে, এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র কাজ করছে কি না, তা জানার প্রয়োজন রয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাদের, তারা ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হলে আইনের শাসন মারাত্মক হুমকিতে পড়তে পারে। রাজধানীসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

ঊষার আলো-এসএ