UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেখ পরিবারের দুর্নীতি : বিচারের আওতায় আনতে হবে

ঊষার আলো রিপোর্ট
মার্চ ১৩, ২০২৫ ৫:২১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে প্রায়ই তার বক্তৃতায় নানা নীতিকথা শোনালেও গত কয়েক মাসের তদন্তে বেরিয়ে আসছে তার ও তার পরিবারের সম্পদের অবিশ্বাস্য তথ্য। প্রথমবারের মতো সোমবার সরকারের পক্ষ থেকে হাসিনা পরিবারের অবিশ্বাস্য সম্পদের ফিরিস্তি শুনে মানুষ বিস্মিত হচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একে একে শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও আশপাশের মানুষের নামে দেশ-বিদেশে থাকা বিশাল সম্পদের তথ্য সামনে আসছে। তারা এতটা সম্পদ করে ফেলছেন, যা ছিল অনেকের কাছে কল্পনাতীত।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তথ্যমতে, সংস্থাটি শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জব্দ করা ১২৪ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা পেয়েছে। এছাড়া ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দলিলমূল্যে রাজউকের ৬০ কাঠা প্লট এবং ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমিসহ আটটি ফ্ল্যাট অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, হংকং ও কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাশিয়ান ‘স্নাশ ফান্ডে’র অস্তিত্বও মিলেছে। হাসিনা পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের হওয়া ছয়টি মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে এবং পরিবারের সাত সদস্যের ওপর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও তাদের সন্তানদের নামে এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মিলে মোট প্রায় ৫৮৭ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে তাদের নামে মোট ১২৪টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৫৭৮ কোটি টাকা অবরুদ্ধ এবং সুধা সদনসহ ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বাড়ি ও জমি ক্রোক করা হয়েছে। গাজীপুরে একের পর এক রিসোর্ট ও বাগানবাড়ির সন্ধান মিলছে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যদের নামে। এর আগে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

বস্তুত এসব তথ্যই বলে দেয় বিগত সরকারের আমলে দেশে কী ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে। আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একে একে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং দলের সব পর্যায়ের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির সম্পদ প্রকাশ্যে আসে। অনেকে গ্রেফতার হন। কেউ কেউ আত্মগাপনে ও দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। খোদ শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরাই যেখানে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ করেছেন, সেখানে তার দোসররাও যে একই পথে গা ভাসাবেন, এটাই স্বাভাবিক। বস্তুত এটি দীর্ঘকালীন গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহিহীনতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের পরিণতি। হয়তো অধিকতর তদন্তে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের দুর্নীতির আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে। আমরা মনে করি, তাদের সব দুর্নীতির যথাযথ বিচার হওয়া উচিত। এজন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।

ঊষার আলো-এসএ