বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের গুরুতর জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০১৩ সালে তৎকালীন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে পদ ছেড়ে দিলে পোপ পদে নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস। তার আগের নাম জর্জ মারিও বারগোগলিও। পোপের পদে আরোহণের পর তিনি ত্রয়োদশ শতাব্দীর দারিদ্র্য, নম্রতা ও শান্তির জন্য পরিচিত সাধক আসিসির সেন্ট ফ্রান্সিসের সম্মানে ফ্রান্সিস নামটি বেছে নিয়েছিলেন।
পোপ ফ্রান্সিস ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশ থেকে আসা প্রথম পোপ। উল্লেখ্য, সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া তৃতীয় গ্রেগরি ৭৪১ খ্রিষ্টাব্দে মারা যাওয়ার পর থেকে রোমে ইউরোপের বাইরে থেকে আর কোনো বিশপ ছিল না।
ক্যাথলিক গির্জার বেশকিছু উদারনীতি ও সংস্কারের জন্য পোপ ফ্রান্সিস চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ক্যাথলিক খ্রিষ্টান, নন-ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মের মানুষের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বলেছিলেন, ক্যাথলিক গির্জার দরজা সবার জন্য খোলা; গির্জার নিয়মনীতি মেনে সবাই গির্জায় এসে প্রার্থনা করতে পারবেন। ধর্মযাজকের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের এবং কানাডার আদিবাসীদের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চেয়ে তিনি আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। তিনি সবসময় শান্তির পক্ষে কথা বলতেন। প্রকৃতি ও ধরিত্রীকে বাঁচানোর কথা বলতেন। গরিব, দুঃখী ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের অধিকারের কথা বলতেন, তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলতেন। সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের প্রতি মনোযোগ দিতে ব্যর্থ সরকারগুলোর সমালোচনা করতেন তিনি।
একজন সরল রুচির মানুষ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। আড়ম্বর ও জাঁকজমকের চেয়ে নম্রতার প্রতি জোর দিয়েছিলেন তিনি। পোপের বাহন লিমুজিন গাড়ি পরিত্যাগ করে বাসে করে যাতায়াতের ওপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। বিমানযাত্রায় পোপ ফ্রান্সিস ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণ করতেন। তার নতুন পদের জন্য নির্ধারিত লাল ও বেগুনি রঙের গাউনের পরিবর্তে তিনি যাজকদের কালো গাউন পরতে পছন্দ করতেন তিনি।
পোপ ফ্রান্সিস ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর তিনদিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ওই সময়টিতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতন থেকে বাঁচতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে। রোহিঙ্গাদের অবর্ণনীয় দুর্দশা সারা বিশ্বকে আলোড়িত করে। বাংলাদেশ সফরের আগে পোপ মিয়ানমার সফর করেছিলেন। ওই সফরের সময় রাখাইনে নিপীড়নের সমালোচনা করলেও রোহিঙ্গাদের নাম উচ্চারণ না করায় কেউ কেউ তার সমালোচনা করেছিল। কিন্তু ঢাকায় এসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কয়েকজনকে সাক্ষাৎ দেন পোপ ফ্রান্সিস, বার্তা দেন সব শরণার্থীর প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর। এ সময় তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করে সবার পক্ষ থেকে তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলেন। সেই ঘটনাটিকে আজ আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। পোপ ফ্রান্সিসের মানবতার দীক্ষায় আলোকিত হোক পৃথিবী।
ঊষার আলো-এসএ