UsharAlo logo
শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবারও খুলনায় বোরোর বাম্পার উৎপাদনে আশাবাদী কৃষি বিভাগ

usharalodesk
মার্চ ২২, ২০২১ ৬:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

এম এন আলী শিপলু : রোপনের পর থেকে গত দু’মাসে মাঠে বোরোর চেহারা অনেক ভালো। খুলনার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা ও দাকোপে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। মাজরা ও পাতাপড়া রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। সাথে লবণাক্ততা। কালবৈশাখীতে শিলাবৃষ্টি দেখা না দিলে জেলায় এবারে দু’লাখ মেট্টিক টন বোরো উৎপাদন হবে। যার মূল্য প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা। কৃষি অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক খুলনার বোরোর চেহারা দেখে খুশি হয়েছেন।
কৃষি বিভাগের সূত্র বলেছে, মৌসুমের শুরুতেই বীজ ও সারের সংকট দেখা দেয়নি। করোনা একটু দমন হলেও কৃষি শ্রমিকের মজুরি কম ছিল। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হলেও খুলনায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এখানে এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দু’লাখ মেট্টিক টনেরও ওপরে। ফলে কৃষক আশাবাদী জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র ধান বিক্রি করাও সম্ভব হবে। ব্যাপারীরা আগাম দিতে শুরু করেছে। তবে সামনে ভয় শিলাবৃষ্টির। নববর্ষের আগে শিলাবৃষ্টি হলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি হবে।
বটিয়াঘাটা উপজেলার সাত ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ৪৫০টি সুপেয় পানির উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে জনগণ খাওয়ার পানিসহ কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত পানীয় ব্যবহার করতে পারছে না। এর ফলে বহু তরমুজ চাষী বিপাকে পড়েছে, দীর্ঘক্ষণ ধরে কল চাপার ফলে অল্প-অল্প পানি উঠলেও অধিকাংশ কলে পানি ওঠে না ।এদিকে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য বটিয়াঘাটায় ১৯৯টি ট্যাংকি পদ্ধতি চালু রয়েছে। প্রতি ট্যাংকিতে তিন হাজার লিটার করে পানি ধরার কথা, প্রতি পরিবারে একটি করে ট্যাংকি সরকারিভাবে দেয়া হয়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী হাসিবুর রহমান বলেন, তার এলাকায় গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের কিছু অংশে নলকূপের পানি ওঠে না। সেখানে ট্যাংকিতে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে জনগণ পান করে। ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর মৌজায় ১৫শ’ ফুট গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি পাওয়া গেছে। তবে অন্যান্য স্থানে যেখানে চারশ’ থেকে পাঁচশ’ ফুটের মধ্যে পানি পাওয়া যেত, আর এখন সেখানে হাজার ফুটের উপরে পানি মিলছে। ফলে এলাকায় তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, এ মৌসুমে পাঁচ হাজার চারশ’ হেক্টর জমির মধ্যে তিন হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রীড জাতের চাষ হয়েছে। লবণ সহিষ্ণু এলাকা হওয়ায় চাষিরা হাইব্রীড জাতকে বেছে নিয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেন জানান, শোভনা, মাগুরখালী, শরাপপুর, সাহস ও সদর ইউনিয়নে হাইব্রীড জাতের বোরোর আবাদ বেশি হয়েছে। উপজেলায় ২১ হাজার ছয়শ’ চল্লিশ হেক্টরের মধ্যে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রীড জাতের চাষ হয়। ফলন বৃদ্ধি, চালের ঘাটতি কমানো এবং বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষে চাষী হাইব্রীড জাতের চাষে ঝুঁকে পড়ে। তিনি আরও বলেন, আগামী ২০-২২ দিনের মধ্যে শিলাবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে বাম্পার ফলন হবে।
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসানা খান জানান, ক্ষেতে মাজরা ও পাতাপোড়া রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে পানির সংকট রয়েছে। লবণাক্ততার প্রভাব দেখা দিয়েছে। উপজেলায় একশ’ ৯০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। তিনি আশাবাদী বাম্পার ফলন হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, এ মৌসুমে জেলায় ৫৭ হাজার পাঁচশ’ ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ হয়। লক্ষমাত্রার চেয়ে দুই হাজার ছয়শ’ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। মোট জমির মধ্যে ৩৬ হাজার আটশ’ ৬০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড জাতের বোরো চাষ হয়েছে। বোরো আবাদে ডুমুরিয়া উপজেলা শীর্ষে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশাবাদী দু’লাখ ৫৭ হাজার মেট্টিক টন চাল উৎপাদন হবে। গত বছর ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে দু’লাখ মেট্টিক টনেরও বেশি চাল উৎপাদন হয়।

(ঊষার আলো-এমএনএস)