ঊষার আলো প্রতিবেদক: খুলনা নগরীর রায়েরমহল এলাকায় শেখ আমির আলী (৭৫) নামের বৃদ্ধকে নিখোঁজের তিনদিন পর বটিয়াঘাটা পশুর নদী থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। লাশ গোপনে কাফন ছাড়াই দাফনের চেষ্টা করছিল। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এ হত্যা করে লাশ গুম করার চেষ্টা করে ঘাতকচক্র-দাবি নিহতের স্বজনদের।
নিহতের ভাগ্নি ও আনসার সদস্য নাসরিন আক্তার খুমেক হাসপাতালে মর্গের সামনে দাড়িয়ে বলেন, গত ২৩ নভেম্বর আছরের সময় রায়েরমহল বাজারের বড় মসজিদের পাশে যান আমির হোসেন। এরপর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাকে ঘাতকরা অটোতে(ইজিবাইক) উঠিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় হরিণটানা থানায় পরের দিন ২৪ নভেম্বর সাধারণ ডায়েরি করা হয়। নিহতের স্ত্রী জামিলা বেগম বাদী হয়ে এ জিডি করেন। কিন্তু পুলিশ কোন ভুমিকা পালন করেনি। একই সাথে তারাও বিভিন্ন এলাকায় খুঁজতে থাকে। সর্বশেষ শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সকালে বটিয়াঘাটায় গেলে এলাকাবাসী তার ছবি দেখে তাকে চিনতে পারে। সেই মতে, তারা বলে লাশ খুমেক হাসপাতালে রয়েছে। ওই খবর শুনে তিনি দ্রুত ছুটে খুমেক মর্গে আসেন। আসার আগেই লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে গোয়ালখালি কবরস্থানে দাফনের জন্য পুলিশ নিয়ে যায়।
নিহতের ছোট ভাই শেখ ইকরাম হোসেন বলেন, লাশটি কাফন ছাড়াই পলিথিন দিয়ে কাঁদামাটি মাখা অবস্থায় পুলিশ দাফনের উদ্যোগ নেয়। গোয়ালখালি কবরস্থানে গিয়ে লাশ দাফনে বাধা দেয়া হয়। পরে নৌ পুলিশ রফিকের কাছ থেকে লাশ বিকেল ৫টার দিকে স্বজনরা বুঝে নিয়ে পুনরায় লাশ খুমেক হাসপাতাল মর্গে এনে রাখা হয়েছে। বর্তমানে লাশটি লাশ ঘরের ফ্রিজে রাখা হয়েছে। নিহেতের এক মেয়ে ও দু’ ছেলে রয়েছে। তার ছোট ছেলে জাকির পুলিশের আইজি’র পিএ পদে চাকুরি করেন। কাটাখালি এলাকায় ৭৫ শতক জমি নিয়ে দীর্ঘ দিন প্রভাবশালী মহলের সাথে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তারা একাধিকবার ডুমুরিয়া থানায় মামলা করে। যা নিয়ে তারা হয়রানির শিকার হন। নিহতের বাড়ি রায়েরমহল এলাকার মোল্লাপাড়ায়। নতুন করে আবারো লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে নিহতের ছোটভাই জানান। তিনি বলেন, কোন লাশের পরিচয় পাওয়া না গেলে তাকে ২/৩দিন হাসপাতাল মর্গের ফ্রিজে রাখা হয়। এ সময় ছবি দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ করানো হয়। তারপরও যদি লাশের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব না হয় তবেই লাশ দাফনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এ লাশ পাওয়া মাত্রই তা গোসল, কাফনের কাপড় ছাড়াই পলিথিন মোড়ানো অবস্থায় দাফনের চেষ্টা। কোনভাবেই বিষয়টি স্বাভাবিক নয় বলে তিনি মনে করেন। আমিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে এ কাজটি করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। ঘাতকরা এতই প্রভাবশালী তাদের নাম পরিচয় বললে তিনিও লাশ হবেন বলে তাদের নাম পরিচয় বলেননি। তবে ঘাতকরা রায়েরমহল মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা।
লাশ দাফনের সময় দায়িত্বে থাকা রূপসা নৌ ফাঁড়ির পুলিশ কনস্টেবল রফিক জানান, তারা ২৫ নভেম্বর বেলা ১২টার দিকে বটিয়াঘাটা উপজেলার নারায়নখালি গ্রামে ওহিদুজ্জামানের বাড়ির উত্তরপাশে পশুর নদীর কিনারায় ভাসমান অবস্থায় রূপসা নৌ ফাড়ির পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এসআই আঃ মুন্নাফ লাশের সুরতহাল করে। লাশের পরিচয় সনাক্ত করতে না পেয়ে বটিয়াঘাটা আমিরপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চৌকিদার আঃ খালেক বাদী হয়ে বটিয়াঘাটা একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। যার নং-২৭/২১, তাং-২৫/১১/২১ইং। লাশ খুমেক মর্গে এনে ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমান মফিদুলের সহায়তায় গোয়ালখালি কবরস্থানে দাফন করতে গেলে নিহতের পরিচয় সনাক্ত হয়। পরে নিহতের স্বকজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হরিণটানা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, জিডি করার পরেই বেতার বার্তায় সারা দেশে নিখোঁজ ম্যাসেস দেয়া হয়। এলাকার প্রতিটি মসজিদে মাইকিং করানো হয়। নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রাখা হয়।
ভিডিও লিংক : https://www.youtube.com/watch?v=XSDHHWAc8sA