UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খুলনায় নিয়ম রক্ষার দ্বিতীয় ধাপের বইমেলা শুরু

usharalodesk
এপ্রিল ৬, ২০২১ ৮:৪৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিদায়ের ঘন্টা না বাজতেই অনেকে স্টল গুটিয়েছে

ঊষার আলো প্রতিবেদক : ঝড়-বৃষ্টি আর লকডাউনে সব কিছু উল্টেপাল্টে দিয়েছে খুলনার একুশে বই মেলার। গত দু’দিন আগে এ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া হানা দিলেও সোমবার (৫ এপ্রিল) তার ক্ষত পূরণ করা হয়নি। গার্ডিয়ান পাবলিকেশন ও কালান্তর প্রকাশনীর প্রতিনিধি মুনতাসির মামুন এমনই কথাগুলো বলছিলেন। তখন ঘড়ির কাটায় বিকেল ৫টা ছুই ছুই। কিছুক্ষণ পরেই কর্তৃপক্ষের বেধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী মেলা শেষ হবে। কিন্তু সারা মাঠ জুড়ে করছে খাঁ-খাঁ। চোখে পড়ার মত দর্শক বা ক্রেতা তেমন নেই। যা আছে তাও বেশী দর্শক।
তিনি বলেন, প্রতিদিন যা বিক্রি হচ্ছে তাতে খরচের টাকা উঠছে না। লোকসানের কারণে অনেকে স্টল গুটিয়ে ইতোমধ্যে মেলা ছেড়েছেন। তবে ঝড়ের কারণে তার দু’টি স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সোমবার (৫ এপ্রিল) বিকেল পর্যন্ত তা সংস্কার করা হয়নি। ওইভাবেই তিনি স্টলে বসে বই বিক্রি করে চলেছেন। তিনি আরও বলেন, এবার করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই বইয়ের বিক্রি নেই। তার মধ্যে আবার বৃষ্টিতে বই ভিজেছে। এ যেন ক্ষতির ওপর মহাক্ষতি। শুধু গার্ডিয়ান পাবলিকেশন ও কালান্তর প্রকাশনী একা নয় বরং রবিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যার হঠাৎ ঝড়ে এবং বৃষ্টিতে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় বইমেলার বয়রা সরকারি গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণের বেশকিছু স্টলকে। প্রচণ্ড ঝড়-বাতাসে ভেঙে পড়ে সাজসজ্জার বিভিন্ন কাঠামো। পর্দা ছিড়ে বাতাসের তোড়ে স্টলের ভেতরে ঢোকে বৃষ্টির পানি। ভিজে নষ্ট হয়ে যায় অনেক বই। আলফা বুক হাউজ স্টলের মালিক মনোজ দে ক্ষোভে ও কস্টে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে নারাজ। তবে সোমবার (৫ এপ্রিল) জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা মেলায় এসে তাদের শান্তনা দিয়ে যায় বলে তিনি জানান। মৌখিকভাবে মেলা ৫টার পরিবর্তে ৬টা পর্যন্ত খোলার রাখার অনুমতি দিয়ে যান এই কর্তাব্যক্তি।
আফিয়া বুক হাউজ স্টলের প্রতিনিধি কে এম তুহিন বাবু বলেন, যেখানে বইমেলার প্রাণ হচ্ছে বইপ্রেমী পাঠক-দর্শনার্থী সেখানে মেলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং গুটি শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যান্য মানুষের সংখ্যা ছিল তলানিতে। তিনি আরও বলেন, এই সংকটের আগে মেলা বেচাবিক্রি ভালই ছিল। তবে সময় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত করলে স্টল মালিকদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারতো বলে তিনি জানান। বঙ্গলিপি প্রকাশনী স্টলের প্রতিনিধি লেখক এসএম আঃ রহমান বলেন, ঝড়-বৃষ্টির ক্ষতির সঙ্গে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আরও যুক্ত হয়েছে লকডাউন। এতে করে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পাঠক-দর্শনার্থীর অভাবে বইমেলা প্রাঙ্গণ জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে স্তব্ধতার।
লেখাপড়া শেষ করে চাকুরি খুঁজছেন নগরীর ফুলবাড়িগেটের বাসিন্দা সায়মা মাসুদ নামের একজন তরুণী। মেলায় ঘুরে-ঘুরে পছন্দের তিনটি বই কিনেছেন তিনি। যার প্রত্যেকটি বইয়ের লেখক বিদেশী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেলায় স্টলগুলোতে আপডেট কোন বই নেই। যা আছে তা বেশীরভাগই ভাল লেখকের বই নয়। নতুন-নতুন লেখকের বই নেই মেলাতে। যেসব বই তিনি খুঁজছেন তা তিনি এ মেলাতে পাচ্ছেন না। এ মেলায় বই কালেকশন খুবই দুর্বল বলে তিনি অভিযোগ করেন।
অপরদিকে করোনা পরিস্থিতির অবনতি, লকডাউনসহ বিভিন্ন কারণে বইমেলায় মেলায় পাঠক-দর্শনার্থীর আশানুরূপ উপস্থিত না থাকা এবং বিক্রি কম হওয়ায় ছোট-বড় বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে মেলা ছাড়ছে। ইতোমধ্যে ৫/৬টি স্টল মেলা মাঠ ছেড়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে দাড়িকমা প্রকাশনী, মাকতাবাতুল হাসান স্টল, একটি চটপট্টির দোকান উল্লেখযোগ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খরচ কুলাতে না পেরেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এদিকে মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) ছিল বইমেলার ১৯তম দিন। মেলা শুরু হয় দুপুর ১২টায় এবং চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বয়রা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের উপ-পরিচালক ড. মোঃ আহছান উল্লাহ বলেন, লকডাউনের কারণে মূল মঞ্চে কোন অনুষ্ঠান চলছে না। এছাড়া ঝড়ে মঞ্চের ক্ষতি হলেও তা মেরামত করা হয়নি। তিনি বলেন, বই মেলা দু’ধাপে শুরু হয়। প্রথম ধাপ সোমবার (৫ এপ্রিল) শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপ বুধবার (৭ এপ্রিল) থেকে শুরু হবে। চলবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) থেকে শুরু হবে খুলনা বিভাগীয় বই মেলা। লকডাউনের আগে দ্বিতীয় ধাপের বই মেলার ব্যাপারে ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু সব কিছুই স্থগিত করে গতানুগতিকভাবে দ্বিতীয় ধাপের মেলাও চলবে।

(ঊষার আলো-এমএনএস)