মোঃ আশিকুর রহমান : দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যস্ত নগরী খুলনা। খুলনার জন্মলঘœ থেকে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী আর পরিচ্ছন্ন শহর হিসাবে পরিচিতি বহন করে আসলেও সম্প্রতি সময়ে সমৃদ্ধশালী শহরটি সুনাম নষ্ট হতে চলেছে অসচেতন নগরবাসীর কারণে আর তা হলো নগরীর গুরুত্বপূর্ন সড়কে যত্রতত্র ময়লা আর্বজনার স্তুপ গড়ে তোলা। যে কারণে খুলনা সড়ক যেন এখন উম্মুক্ত ডাস্টবিনে পরিনত হচ্ছে। কেসিসির কর্তৃক নগরবাসীকে পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে শহর উপহার দেওয়ার চেষ্টা অব্যহত থাকলে থামছেনা সড়কের পাশে গড়ে ওঠা যত্রতত্র ময়লার স্তুপ। যার দরুন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁেিকতে পড়ছে চলাচল পথচারীরা। আবর্জনার দূর্গন্ধ হতে বাঁচতে মাস্ক পরে কিংবা নাকে মুখে হাত চেপে হাঁটছেন ভোগান্তির শিকার নগরবাসী।
কেসিসি বর্র্জ্য ব্যবস্থাপনা সূত্র জানায়, প্রতিদিনই খুলনা মহানগর হতে ৮০০টন বর্জ্য সংগ্রহ সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করে নিয়ে ফেলা হয় খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের রাজবাঁধের শেষ ডাম্পিং পয়েন্টে। ২০০ টন শহরের খাল-বিলে পড়ে। কেসিসি’র ৩১টি ওয়ার্ডে স্থায়ী ও অস্থায়ী পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছে প্রায় ৭০০ জন। মহানগর এলাকায় কেসিসি’র পক্ষ হতে ৬০ টি স্থায়ী কন্টিইনার স্থাপনা করা হয়েছে শহরের গুরুত্বপূর্ন স্থানগুলোতে। ৩১ টি ওয়ার্ড হতে সংগৃহিত ময়লা আবর্জনা এই কন্টিইনারে ফেলে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এরপর বর্জ্য নিষ্কাশন পরিবহন এগুলো রাজবাধে নিয়ে ফেলে।
নগরীর গুরুত্ব¡পূর্ণ বানিজ্যিক স্থাপনা নিউমার্কেটের উত্তর-পশ্চিমে, পিটিআই মোড় সংলঘœ, গোয়ালখালী করস্থানের পাশে বিশাল ময়লার স্তুপ। প্রতিদিন শত শত মানুষকে এই এলাকা পেরিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। নোংরা আর্বজনার দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরে বা রুমাল ঠেসে কিংবা দমবন্ধ করে দৌঁড়ে পার হচ্ছে।
সরেজমিন, শনিবার নগরীর (১২ ফেব্রুয়ারি) বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, সড়কের ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে বর্জ্য। বিশেষ করে নগরীর কবিরবটতলা থানা নির্বাচন অফিস সম্মুখ, কবিরবটতলা বিডিআর সেক্টর ক্যান্টিন সম্মুখে, আবু নাসের হাসপাতাল লিংক রোড, একই মোড়ে নৌবাহিনী স্কুল সম্মুখের ড্রেনের বজ্য, বয়রা মোড়ের পূর্বপাশে, ছোট বয়রা আনোয়ারা হাসপাতালের বিপরীতে, সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যাড সংলঘেœ, মজিদ সরনী রোড সংলঘেœ, পৈ-পাড়াস্থ কয়েকটি মোড় সমূহে, ময়লাপোতা খুলনা গেজেট অফিসের বিপরীতে, পিটিআই মোড় সংলঘেœ, জেনারেল হাসপাতাল সড়ক সংলঘœ সহ কয়েকটি স্থানে পড়ে থাকা বর্জ্য থেকে উৎকট দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
একই সাথে নগরীর ডাকবাংলা, শিববাড়ী, নিউমার্কেট, সোনাডাঙ্গা, ময়লামোতা মোড়, গল্লামারী, নিরালা, বয়রা, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর, দৌলতপুর, ফুলবাড়ী , শিরোমনি এলাকার বিভিন্ন বিদ্যুতের খুঁটির নিচে, খোলা স্থানে, বিভিন্ন ঝোপে ঝাড়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বসানো হয়েছে বড় আকারের ডাস্টবিন। কিন্তু ডাস্টবিনে না ফেলে ফুটপাতেই ময়লা ফেলছেন কিছু মানুষ। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
নগরবাসীর অভিযোগ, রাস্তাঘাট, অলিগলি, আবাসিক, বাণিজ্যিক এলাকা-সর্বত্রই ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি। ময়লার উৎকট গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে থাকছে। বাধ্য হয়ে রাস্তায় চলাচলকারী ও বাসিন্দাদের চরম দুর্গন্ধ সয়ে বাস করতে হচ্ছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীরা পড়ে যাচ্ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। সূর্য ওঠার আগে ময়লা নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নেয় দুপুরে। কোনো কোনো দিন পড়েও থাকে।
গোয়ালখালী কবরস্থান সংলগ্ন রাস্তার উপরের ময়লার স্তুপের বর্ণনা দিয়ে এ করে পথচারী রাকিব বলেন রাস্তাটি দেখলে মনে হয় উন্মুক্ত ডাস্টবিন। প্রতিদিনই শত শত মানুষ তাদের আত্মীয় স্বজনদের দাফন করার জন্য গোরস্থানে আসে। দুর্গন্ধে দাড়াতে পাড়ে না। তাছাড়া এই স্থানে ব্যাপারে একাধীক অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীরও।
ছোট বয়রা ময়না গ্যারেজে মালিক জানান, নিদিষ্ট স্থান থাকতেও আশপাশের বাসাবাড়ী হতে ময়লা আবর্জনা সরাসরি রাস্তার উপ্র এনে ফেলে। রাস্তাদিয়ে দিয়ে চলাচলরত পথচারীরা মুখে রোমাল দিয়ে যায়। তাছাড়া পাশেই ২৫০ শয্যা বেড। এখানের আর্বজনাও অনেকে এনে পেলে। যার দরুন চরম স্বাস্থ্যঝুকি বাড়ছে।
নাগরিক নেতা শাহিন জামাল পন জানান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নাগরিকদের মানসিকতার সঙ্গে যুক্ত। আমরা নাগরিকরা এ ব্যাপারে সচেতন নই। আমরা ময়লা-আবর্জনা থেকে মুক্ত থাকতে চাই, কিন্তু নিজেরাই ড্রেনে আবর্জনা ছুড়ে ফেলি। তবে নাগরিক অসচেতন হলেও কেসিসি’কে খুলনাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে তদারকী অব্যহত থাকতে হবে।
কেসিসি’র প্রধান নিবাহী (যান্ত্রিক) ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রধান মোঃ আব্দুল আজিজ জানান, প্রতিদিনই খুলনা হতে ৮০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৩১টি ওয়ার্ডে বিপুল সংখ্যক পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কাজ করছে। নাগরিকবৃন্দ আলসেমী আর অসচেনতার কারণে যত্রতত্র ময়লা আর্বজনার স্তুপ তৈরী হচ্ছে। কারণ শহরের মধ্যে সড়ক সহ বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট ডাস্টবিন দেওয়া হয়েছে। যেহেতু সড়কের পাশে নতুন করে ময়লার স্তুপ তৈরী করা হচ্ছে সেহেতু এ ব্যপারে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে কেসিসি’র মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, কেসিসি’র পক্ষ হতে প্রতিদিনই বাসা বাড়ীর হতে আসা আর্বজনা নির্দিষ্ট ডাস্টবিন হতে সরাসরি রাজবাধে নিয়ে ফেলা হয়। কেসিসি’র বর্জ্য নিষ্কাশনের পাশাপাশি নাগরিককেও সচেতন হতে হবে। সড়কের সে সকল স্থানে নতুন ময়লা স্তুপ তৈরী করা হয়েছে তা অপসারণে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।