UsharAlo logo
শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মজুরি বৈষম্যের শিকার আটরা শিল্প এলাকার নারী শ্রমিকরা

koushikkln
মে ৭, ২০২২ ১০:০৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শেখ বদরউদ্দিন, ফুলবাড়ীগেট : নারী শ্রমিকেরা সকাল-সন্ধ্যা পুরুষ শ্রমিকদের মতো কাজ করেন। কিন্তু তাঁদের মজুরি কম। গ্রামীণ জনপদে নারীরা এখন আর ঘরে বসে নেই। উপার্জন বাড়িয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে পুরুষের পাশাপাশি ক্ষেত খামারে শ্রম বিক্রি করছেন তারা। পুরুষদের মতো নারীদের ক্ষেত-খামারে কাজ করার তেমন একটা রেওয়াজ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে দব্যমুল্যের বাজারে শুধু পুরুষদের পরিশ্রমে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে পুরুষদের পাশাপশি নারীরাও ক্ষেত-খামার ও চাতালে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।

আটরা ও মিরেরডাঙ্গা শিল্প এলাকার নারী শ্রমিকেরা নিযুক্ত আছে কৃষি কাজে, ইটভাটার কাজে, দালান নির্মাণ ও জুট মিলের কাজে কিন্তু এ বিপুল শ্রমশক্তিকে স্বীকৃত দেয়া তো দূরে থাক তাদের সঠিক পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করছে মালিক পক্ষ। তবে নারীরা সমপরিমাণ পরিশ্রম করলেও পুরুষের তুলনায় মজুরি পাচ্ছেন কম।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেসরকারী জুট মিলের সঙ্গে যুক্ত নারী শ্রমিকের মজুরি আরও কম। মিলে ৮ ঘণ্টা কাজ করে তারা বেতন পান দেড় শ’ টাকা থেকে ১৭০ টাকা । নারী শ্রমিক ময়না , মমতা, জলি সহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, তারা দেড়শ’ টাকা মজুরিতে জুট মিলে কাজ করেন। আর পুরুষেরা কাজ করলে পান সাড়ে ৩শ’ টাকা। তারা কাজ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে কম মজুরি নিচ্ছেন।

আটরা গিলাতলা ইউনিয়নের নিউমাত্তমডাঙ্গা গ্রামে ধান ক্ষেতে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছেন পারভিন ও জোসনা মল্লিক। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গ্রামের ক্ষেত-খামারে কাজ করি। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গৃহস্থের (জমি মালিক) জমিতে নানা ধরনের কৃষি কাজ করতে হয়। গৃহস্থরা আমাদের মজুরি দেয় মাত্র ১৭০ টাকা থেকে ১৯০ টাকা অথচ একই কাজে পুরুষ শ্রমিকদের দেয়া হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।অ াটরা শিল্প এলাকাতে সহস্রাধিক নারী শ্রমিক রয়েছেন। তাঁরা জুট মিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কঠিন কাজে নিয়োজিত। কিন্তু পুরুষের তুলনায় প্রতিনিয়ত মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

কথা হয় শিরোমনি শিল্প এলাকার গাফফারফুড নামে একটি লবন কোম্পানির নারী শ্রমিকের সঙ্গে। তারা বলেন, পুরুষের পাশে বসে সমান কাজ করি। কিন্তু সমপরিমাণ কাজ করেও পুরুষেরা পাই ৩ শ” থেকে ৩ শ ৫০ টাকা আর আমরা সমান মজুরি পাই না আমাদেরকে দেয়া হয় ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা । নারীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কর্মজীবী নারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে কর্মক্ষেত্রে মজুরিবৈষম্য মেনে নিয়েই কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে হচ্ছে তাদের। ঘরের কাজ সেরে বাইরের কাজে শরিক হচ্ছেন তারা। এভাবে পুরুষের পাশাপাশি সংসারে আর্থিক সহায়তা দিতে অবদান রাখছেন তারা। এ জন্য তাদের তেমন কোনো অভিযোগ নেই। তবে এই নারীদের ভাষ্য, কারণে-অকারণে কর্মচ্যুতির শিকার হন তারা। অনেকসময় নির্যাতনের শিকারও হতে হচ্ছে তাদের।

নারীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন জানিয়ে বেসরকারী পাট সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি শেখ আমজাদ হোসেন জানান, নারীরা পুরুষের সমান কাজ করেও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আটরা ও মিরেরডাঙ্গা শিল্প এলাকার একাধিক নারী শ্রমিকরা বলেন, আমরা কোনোভাবেই পুরুষের চেয়ে কাজ কম করি না। পুরুষের সমান সমানই কাজ করি। পুরুষদের মতোই আমরা সকাল সাতটা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু এরপরও আমাদের মজুরি পুরুষের তুলনায় অর্ধেক।

নারী নেত্রী ও ফুলতলা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা ফৈরদোসী নিশা বলেন, কর্মক্ষেত্রে মজুরি বৈষম্যের কথা জেনেও নারী জীবন-জীবিকার তাগিদে কাজ করে যাচ্ছে। নারীর কর্মঘণ্টা পুরুষের চেয়ে বেশি আর কাজের গুণগত মানও পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে কম নয়। তাই প্রশ্ন উঠে, তবু কেন এই ভেদাভেদ? শুধু নারী বলেই কি সমাজ তার অবস্থানকে চিহ্নিত করেছে পুরুষের চেয়ে নিচের স্তরে? কাজের ধরন ও সময় অনুসারে মজুরি নির্ধারণ করে মালিক পক্ষ। একজন পুরুষ শ্রমিক দৈনিক ৩০০-৬০০ টাকা মজুরি পেলেও নারী শ্রমিককে দেয়া হয় ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা । প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও কাজের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে পারলে পুরুষের মতো তারাও কৃষিক্ষেত্রসহ সমাজের নানা কাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখেতে পারবে। তাতে একদিকে বেকার সমস্যার সমাধান হবে। অপরদিকে নারী পুরুষ মিলে দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন নারী পুরুষ শ্রমিকের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নাই। শ্রম আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে সকলকে সমমুজুরি দিতে হবে, যদি কোন প্রতিষ্ঠান এই নিয়ম লঙ্ঘন করে লিখিত অভিযোগ পেলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিপক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।