UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ব্যতিক্রম বৃক্ষ প্রেমিক দিনমজুর নকিম উদ্দীন

koushikkln
মে ১৪, ২০২২ ১১:৫৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মো. আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা : সমাজের প্রতি মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের অনেক দায় বদ্ধতা রয়েছে। ইচ্ছে করলেই প্রতিদিন কিংবা প্রতি মাসে না হলেও প্রতিবছর আমরা কিছু কিছু ভাল কাজ করতে পারি। যে কাজ গুলো করার জন্য খুব বেশি অর্থের যেমন প্রয়োজন হয় না, আবার কাজগুলো সমাজ, দেশ ও জাতির অনেক কল্যাণ হতে পারে। দিন মজুরের টাকা দিয়ে প্রতিবছর গাছ লাগিয়ে জনস্বার্থে এমন অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পাইকগাছার দিন মজুর নকিম উদ্দীন জোয়াদ্দার।

নকিম উদ্দীন উপজেলার বান্দিকাটী গ্রামের মৃত কামাল উদ্দীন জোয়াদ্দারের ছেলে। ৮০ বছরের বয়স বৃদ্ধ নকিম উদ্দীন পেশায় একজন দিন মজুর। কখনো তিনি দিন মজুরের কাজ করে, কখনো আবার ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। পেশায় দিন মজুর হলেও জনস্বার্থে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগানোর মতো মহৎ কাজ করে সমাজে অনেক অবদান রেখে চলেছেন বৃক্ষ প্রেমিক নকিম উদ্দীন। দিন মজুরের টাকায় যেখানে সংসার চালানোই কঠিন, সেখানে তিনি দিন মজুরের টাকা থেকে ১৯৯৮ সাল থেকে অধ্যাবধি প্রতিবছর এলাকার কোন না কোন প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগান। প্রথমে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাছ লাগান। এরপর তিনি উপজেলা পরিষদ, আদালত, থানা, ফসিয়ার রহমান মহিলা কলেজ, সিনিয়র মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ এবং সড়ক সহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফলদ, বনজ ও ঔষধী গাছ লাগিয়েছেন। এভাবেই তিনি বিগত ২৪ বছর এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাজারো গাছ লাগিয়ে মহত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তার লাগানো গাছ এখন সরকারের কোটি টাকার সম্পদে পরিণত হয়েছে।

ফসিয়ার রহমান মহিলা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী নুপুর মন্ডল জানান, ক্যাম্পাসে লাগানো গাছের ফল আমরা শিক্ষার্থীরা সবাই অনেক মজা করে খেয়েছি। কিন্তু এই গাছ গুলো যে একজন দিন মজুর লাগিয়েছেন জানতে পেরে তাকে নিয়ে গর্ব হয়। তার প্রতি রইল সম্মান ও শ্রদ্ধা।

ফসিয়ার রহমান মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক সেখ রুহুল কুদ্দুস জানান, আমি যখন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলাম ওই সময় নকিম উদ্দীন আমাদের কলেজে ফলদ, বনজ ও ঔষধী সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়েছিল। যে গাছ গুলো এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। অনেক গাছেই ফল হয়, যে ফল আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে খায়। এটি একটি মহৎ কাজ। এ গাছ গুলো যতদিন বেঁচে থাকবে নকিম উদ্দীনও ততদিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, শুধু নকিম উদ্দীন নয়, সমাজে আমরা যে যেখানে অবস্থান করছি সমাজের প্রতি আমাদের প্রত্যেকের দায় বদ্ধতা রয়েছে। ভাল কাজ করার জন্য খুব বেশি অর্থ সম্পদের প্রয়োজন যে হয় না সেটা দিন মজুর নকিম উদ্দীন দেখিয়ে দিয়েছেন। নকিম উদ্দীন যে একজন মহৎ ব্যক্তি এতে কোন সন্দেহ নাই। ইচ্ছে করলেই আমরা নকিম উদ্দীনের ন্যায় প্রতিদিন কিছু না কিছু ভাল কাজ করতে পারি। প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহ, মাস কিংবা বছরে অন্তত কিছু ভাল কাজ করা আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ। নকিম উদ্দীনকে অনুসরণ করে সমাজ, দেশ এবং মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসার জন্য এলাকার সকলের প্রতি আহ্বান জানান উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী এ কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে নকিম উদ্দীন জানান, গাছ লাগানোর ব্যাপারে আমার পিতা আমাকে উৎসাহিত করতেন। মানুষের মতো গাছও সমাজের অনেক উপকারে আসে। গাছ আমাদের ছায়া দেয়, ফল দেয় এবং পরিবেশ ভাল রাখে। এসব ভেবেই আমি নিজ উদ্যোগে জনস্বার্থে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেই। এ পর্যন্ত আমি উপজেলা পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফসিয়ার রহমান মহিলা কলেজ, আদালত চত্বর, থানা চত্বর, সিনিয়র মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ এবং আমার বাড়ির পাশে চেঁচুয়া মসজিদ হতে জহর চৌকিদারের বাড়ী পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ফলদ, বনজ ও ঔষধী গাছ লাগিয়েছি। আমি শুধু এলাকা নয় এলাকার বাইরে সুন্দরবনের হিরোন পয়েন্টেও গাছ লাগিয়েছি। আমি যেসব গাছ লাগিয়েছি সেগুলো প্রতিবছর কমবেশি পরিচর্যাও করি। গাছ গুলো অনেক বড় হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগিয়েছি সেখানে গিয়ে গাছগুলোকে জড়িয়ে ধরে আদর করি। গাছগুলোসব আমার সন্তানের মতো। নিজের সন্তান কতোটা মানুষ করতে পেরেছি জানিনা, তবে সন্তান সমুতুল্য গাছ গুলোকে বড় করতে পেরে নিজেকে অনেক ভাল লাগে। এখনো প্রতি বছর এভাবেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগানো অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন বৃক্ষ প্রেমিক দিন মজুর নকিম উদ্দীন জোয়াদ্দার।