UsharAlo logo
শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রসালো আমে ভরপুর খুলনার বাজার

koushikkln
মে ১৬, ২০২২ ১১:৩৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আশিকুর রহমান : ঋতুভেদে শুরু হয়েছে জ্যৈষ্ঠ মাস। বাংলার সংস্কৃতিতে দেশী ফলের উৎস বা বাহন হিসাবে ঐতিহ্য আর পরিচিতি বহন আসছে এই জ্যৈষ্ঠ মাস। সাধারণত এই মাসেই বাজারে আম, জাম, কাঠাল, লিটু, জামরুল সহ হরের রকমের দেশি ফল হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়।

সম্প্রতি সময়ে খুলনার বাজারে আপেল, আঙ্গুর, বেদানা, মালটা, খেজুর, পেয়ারা, আনারস, কলাসহ নানা ধরনের দেশি ফলের পাশাপাশি দেখা মিলছে জ্যৈষ্ঠের টসটসে রসালো আমের। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে আসলে গাছ পাকা আম নাকি রাসায়নিক প্রয়োগে পাকানে। ক্রেতারা এ দু’য়ে মিলে বেশ শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। মনে আম কেনার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও রাসায়নিক প্রয়োগের ভয়ে সামনে এগিয়ে আবার পিছ পা হাটছেন।

জ্যৈষ্ঠ মাস শুরু হতেই ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ থাকে আম, জাম, কাঠাল আর লিচু কেনার উপর। ওই প্রথম সারির তালিকায় থাকে আম, যাকে ফলের রাজাও বলা হয়। সম্প্রতি মহানগরীর সর্বত্র ফল বাজারে আমের যথেষ্ঠ সরবরাহ রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, বাজারে সম্প্রতি সময়ে তিন জাতের আমের দেখা মিলছে। গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ আর গুটি আম। এই জাতের আম খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার স্থানীয় অঞ্চল গৌরিঘোনা, চুকনগর, কেশবপুর ও মনিরামপুর এলাকা হতে স্থানীয় ব্যাপারীরা নগরী খুলনা পাইকারি আড়ৎ বা বাজারগুলোতে এনে বিক্রি করা হচ্ছে।

সরেজমিনে, সোমবার নগরীর ডাকবাংলা, শিববাড়ী, পিকচার প্যালেস, কোর্ট চত্ত্বর, হেলাতলা, সোনাডাঙ্গা, নিরালা, গল্লামারি, ২৫০ শষ্যা হাসপাতাল সম্মুখ, বয়রা, বৈকালি, খালিশপুর, দৌলতপুর, ফুলবাড়ীগেট, শিরোমনি, আটরা ও ফুলতলা এলাকার ফল ব্যবসায়ীরা স্থানীয় পাইকারি বাজার হতে ক্যারট বা মণে কিনে এনে খুচরা বাজারে বিক্রি করছে। বর্তমান বাজারে যে আম সরবরাহকৃত আম সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে আসছে বলে জানিয়েছে খুচরাসহ পাইকারী বিক্রেতারা।

কুদ্দুস ফল ঘরের ব্যবসায়ী মোঃ আব্দুল কুদ্দুস জানান, তিন জাতের আমের দেখা মিলছে। গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ আর গুটি আম। এই জাতের আম খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার স্থানীয় অঞ্চল গৌরিঘোনা, চুকনগর, কেশবপুর, মনিরামপুর এলাকা হতে স্থানীয় ব্যাপারীরা সরাসরি পাইকারি বাজারে নিয়ে আসে। গত ২/৩ দিন শুরু হলো আমের কেনাবেচা। সোমবার (১৬ মে) পাইকারি বাজারে মানভেদে গোপালভোগ আমের মণ বিক্রি হচ্ছে ১২’শ হতে ১৬’শ টাকায় , গোবিন্দভোগ বিক্রি হ্েচ্ছ ২ হাজার হতে ২৬’শ টাকার মধ্যে আর গুটি আম বিক্রি হচ্ছে ৮’শ হতে ১৩’শ টাকার মধ্যে।

যা পাইকারি বাজার ঘুরে খুচরা বাজারে গোবিন্দভোগ প্রতিকেজি মানভেদে বিক্রি ৮০ হতে ১০০ টাকায়, গোপালভোগ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০ হতে ৮০ টাকায় আর গুটি আম ৬০ হতে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতা শাহাবুদ্দিন।
তবে বাজারে আমের যথেষ্ঠ সরবরাহ থাকলে কেনাবেচা তুলনামুলক কম, কারণ রাসায়নিক প্রয়োগের আতংকে অনেকেই আম কিনতে শংঙ্কিত। আম খেতে মন চাইলেও সচেতন মহল মনে করছেন আম রাসায়নিক প্রয়োগের মাধ্যমে পাঁকানো হচ্ছে, সেই আতংকে আম কিনতে নারাজ।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট বিভিন্ন জাতের আম সংগ্রহের সময়সীমা নিধারণ করেছে সে অনুসারে, সকল প্রকার গুটি আম ১৫ মে, গোপালভোগ ২০ মে, লক্ষণভোগ/লক্ষনা ও রানীপছন্দ ২৫ মে, হিমসাগর/ক্ষিরসাপাত ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আ¤্রপালি ১৫ জুন, ফজলী ১৫ জুন, আশ্বিনা ১০ জুলাই, বারী আম-(৪) ১০ জুলাই। অনেক সময় চাষী বা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় আমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথি প্লাস, ইথোফেন, ইথোলিন রাসায়নিক পদার্থ স্প্রেসহ ধোয়া ব্যবহার করে আম পাঁকিয়ে বাজার জাত করে থাকে, যা মানব দেহের জন্য ক্ষতির কারণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আম বিক্রেতা জানান, জ্যৈষ্ঠ মাস পড়ে গেছে। সাধারণ এ সময় আম পাঁকে। তবে গাছ পাঁকা আম বাজারে পাওয়া দুস্কর। বর্তমান বাজারে যে আম পাওয়া যাচ্ছে তা হলো সাতক্ষীরা বিভিন্ন এলাকার আম। ফল ব্যবসায়ী আমের বাগান কেনে। তারপর গাছ হতে আম পেরে মাটিতে নেড়ে ঔষুধ স্প্রে করে। স্প্রে করার পর এই কাঁচা আম কাঁচা অবস্থায় ঝাঁপিতে সাজানোর পর বাজারে আসতে আসতে মাত্র ৬ ঘন্টায় সম্পূর্ন পক্ক বা পেঁকে লাল হয়ে যায়। আর ব্যবসায়ীরা দোকানে সাজালে গাছ পাঁকা আমের মতোই রং হয়ে ওঠে।

আম কিনতে আসা ক্রেতা মনিরা আক্তার লাভলি জানান, বাজারে প্রচুর রসালো আমের সমারহ, কিন্তু কিনতে ভয় লাগছে। বোঝার উপর নেই কোনটা ফরমালিন দিয়ে পাঁকানো আর কোনটা ফরমালিন ছাড়া ?

বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট সরেজমিন বিভাগ খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুন অর রশিদ বলেন, বারি কর্তৃক আম সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারন করা হয়েছে। তবে এ নির্ধারিত সময়ের আগে বাজারে আসা আমে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে আম পাঁকানো হয়। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির কারণ। পাঁকা আমে যথেষ্ঠ পরিমানে ক্যারেটিন বা ভিটামিন এ এবং খনিজ পদার্থ থাকে।

যে কারণে আমের স্থান পৃথিবীর যে কোন ফলের উপরে। তবে বর্তমানে আম পাঁকার আগে চাষীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় আমে রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে থাকে। যে কারণে সচেতন মানুষ আম কিনতে ভয় পাচ্ছেন।