বিমল সাহা : আজ শনিবার (২৫ জুন) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলের দিন। সেই সাথে আধুনিক বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতিক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে দিনটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি আজ বহুল প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। এ সেতুর সাথে জড়িত রয়েছে কোটি কোটি মানুষের ভালবাসা ও আবেগ।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে অনলাইন দৈনিক ঊষার আলোতে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঞা তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ইতিহাসে নতুন এক দিগন্তের সৃষ্টি করবে। এই সেতুর প্রতিক্ষায় আমরা দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে বিশ^ ব্যাংকের সহায়তায় পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশি-বিদেশী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে তা প্রত্যাক্ষান করেছেন এবং সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ^বাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে আমরাও অসাধ্য সাধন করতে পারি। বাঙ্গালী বীরের জাতি সেটা তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন।
তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের যত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আশ্চর্যের বিষয় পদ্মা সেতু। যেটা আজ সফলতার মুখ দেখতে যাচ্ছে। এটা শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করবে না বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে। পদ্মার দক্ষিণ প্রান্তের ২১ জেলার মানুষসহ পদ্মা পাড়ের যত জনপদ আছে সকল মানুষ দারুণভাবে উপকৃত হবে। অর্থনীতি ও গ্রামীন জনপদের কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস ছিলো পদ্মা সেতু নির্মিত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ২ শতাংশ বাড়বে। সেটা সময় বলে দেবে ২ শতাংশ বাড়বে না আরও বাড়বে।
পদ্মা সেতুর সুফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন এবং লাখ লাখ মানুষের হাজার হাজার কর্মঘন্টা বাঁচবে। আগে আমাদের পদ্মা ফেরীর মাধ্যমে পাড় হয়ে ওপাড়ে যেতে যেকোন পথ দিয়ে ৬-৭ ঘন্টা সময় প্রয়োজন হতো। পদ্মা সেতু হওয়ায় সেটা কমে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৩ ঘন্টা খুলনা থেকে ঢাকা যেতে। শুধু সড়ক পথই নয় সেতুর সাথে যুক্ত হয়েছে রেল যোগাযোগ, ইন্টারনেট ফ্যাসিলিটি, ডাটা ট্রান্সফার, ফাইবার অপটিক কেবল, গাস ট্রান্সফারসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা। সেই সাথে পদ্মার দুই প্রান্তে ট্যুরিজম ব্যবসার প্রসার ঘটবে। বিশেষ করে পদ্মার দক্ষিণ প্রান্তে সেতুর কারণে যে সকল অর্থনৈতিক জোন আছে সেগুলো নতুন করে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, যখন অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেগবান হবে, মংলা পোর্টে ব্যবসা বাণিজ্য জোরদার হবে, বিদেশি পন্য বাহী জাহাজগুলো এখান থেকে মালামাল খালশ করবে, এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যেও পরিবর্তন ঘটবে। পাশাপাশি খুলনা বিভাগের সকল জেলায় অর্থনৈতিক যে কার্যক্রম আছে সেগুলোও বাড়বে। মালামাল বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। শুধু তাই নয় আমাদের এখানে যে সকল মাছ কোম্পানী আছে তারা দ্রæত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্টের মাধ্যমে বিদেশে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রফতানি করতে পারবে।
পুলিশি কার্যক্রম জোরদার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর সাথে সাথে নগরায়ন বাড়বে, পুলিশের কার্যক্রমও বাড়বে। যে সংখ্যক যানবাহন চলাচল বাড়বে, সে অনুসায়ী ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ঢেলে সাজাতে হবে। পদ্মা সেতু চালুর পরে আমরা নতুনভাবে পরিকল্পনা করব। যখন নগরায়ন বেড়ে যায় তখন পুলিশের সেবার প্রতি মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে থানা ও ফাঁড়ির সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি বটিয়ঘাটা, দিঘলিয়া ও ডুমুরিয়া থানাসহ বেশকয়েকটি থানা খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতায় আসবে।
নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরে তিনি বলেন, যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ে তখন অর্থনৈতিক কার্যক্রমও বেড়ে যায়। সেই সাথে অপরাধ বাড়ে না বরং অপরাধের ডাইমেনশন চেঞ্জ হয়। যেমন এখন সাইবার ক্রাইম অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সেটা অবশ্য আমাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ঊআ-বিএস