UsharAlo logo
সোমবার, ১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টুং টাং শব্দে মুখরিত কামারশালা

koushikkln
জুলাই ৪, ২০২২ ১১:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আশিকুর রহমান : মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযাহা অর্র্থ্যৎ কোরবানীর ঈদ। আগামী ১০ জুলাই খুলনাসহ সারাদেশে ধর্মীয় ভাবগার্ম্ভীযের সাথে উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে এই ঈদ উৎসব। আসন্ন ঈদকে ঘিরে নগরীর বিভিন্ন পশু ক্রয়ের হাটসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে একদিকে উৎসবমুখর পরিবেশে যেমনি চলছে পশু ক্রয়-বিক্রয় তেমনি অপরদিকে নগরীর কামারশালাগুলোতে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে পশু কোরবানী করার সরজ্ঞামাদী কাটারী, সুরাহ, দা, হাইসো, বিভিন্ন আকারের ছুরি, পটি, খাইটা, হোগলা পাটি, ঝুড়িসহ বিভিন্ন সাইজের খাট্টা তৈরীর কর্মযজ্ঞ। ঈদকে সামনে রেখে নগরীর কামারশালাগুলো টুং টাং, টুং টাং শব্দে এখন অনেকটাই মুখরিত।

কামারশালার ভাঁতির জলন্ত আগুনের পাশে বসা কামারের ঘাম ঝড়ছে দরদর করে, তবুও পুড়ানো থেমে নেই লোহা; কারণ কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে তৈরীকৃত কাটারী ছুরি-বঁটি-দা বা অন্যকোন ধাতব ভালো দামে বিক্রি হবে, মিলবে ভালো ক্রেতা সাড়া সেই আশায়। শিল্পনগরী হিসাবে পরিচিত খুলনা, এক সময়ের ইতিহাস খুলনায় চাঙ্গা ছিল পাট-কলকারখানা। পাটের যাচাই কাজের জন্য কাটারী বানানো, মেরামত, আর ধার করতে করতে এই পেশার মানুষগুলোর নাওয়া-খাওয়া থাকতো না, হাতুড়ি পেটানোর টুং টাং, টুং টাং আর ভাঁতির ফাঁসফুস শব্দে দিনরাত মুখরিত কামারশালা। কালের বিবর্তনে তা যেন ইতিহাস। এক সময়ের দাপেটে পেশার এই মানুষ গুলো এখন যেন অনেকটাই নীরব, তবুও বংশপরাক্রম ভাবে পাওয়া এই পেশার সাথে জড়িতরা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের জীবনযুদ্ধ।

আসন্ন কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে পশু কোরবানীর সরজ্ঞামাদী তৈরীর পাশাপাশি ভালো কেনাবেচার আশায় ব্যস্ত তারা, চলছে কেনাবেচা মহা কর্মযজ্ঞের মোহড়া। কামারশালার সম্মুখে সারি সারি করে সাজানো হয়েছে কাটারী, সুরাহ, দা, হাইসো, বিভিন্ন আকারের ছুরি, দা-বটি, পটি, খাইটা, হোগলা, ঝুড়ি, পাটিসহ বিভিন্ন সাইজের খাট্টা।

সোমবার (৪ জুন) নগরীর বিভিন্ন এলাকার কামারশালা গুলো ঘুরে দেখা যায় গেছে অধিকাংশ কর্মকাররা পশুর মাংস কাটাকাটি আর চামড়া ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত, ছুরি, বঁটি ও দাসহ কিছু ধারালো জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা দিনরাত বিরতীহীন াবে খাটছে মাংসকর্তন সরজ্ঞামাদি তৈরিতে দু’ পয়সা লাভের আশায়। তবে এ শিল্পে এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি, সেই আদী কালের পুরনো ঐতিহ্য মেনেই চলছে আগুনে পুড়িয়ে লোহা হতে ধারালো মাংসকাটার সরজ্ঞামাদী তৈরির কাজ।
নগরীর মের্সাস বিশ্বকর্মা ভান্ডারের মালিক সনজিত কর্মকার জানান, আসন্ন কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে অনেকটাই ব্যস্ততা বেড়েছে বর্তমান সময় জুড়ে। তিনি জানান মাংস কাটার সরজ্ঞামাদীর মধ্যে কাটারী কেজি ৭০০ হতে ৮০০ টাকা, দা-বটির কেজি ১০০০ টাকা, পশুর চামড়া ছাড়ানো বিভিন্ন আকারের ছুরি ১২০ হতে ২৫০ টাকা এবং পশু জবাইয়ের ছুরি ৭০০ হতে ১০০০ টাকা, হোগলাপাটি ১৫০ হতে ২০০ টাক, খাট্টা মানভেদে ২০০-১৫০০ টাকা, ডালা ২০০ হতে ৩০০ টাকার মধ্যে টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

কর্মকার সুমন জানান, কামার শালায় আগের সেই ব্যস্তরা আর নেই, এই শিল্প অনেকটাই বিলীন হওয়ার পথে। কারণ এখন মাংস কাটার অনেক আধুনিক যন্ত্রাংশ বের হয়েছে। সারা বছরই ধরতে গেলে এখন বসে বসে সময় কাটে। মাঝে মধ্যে দু’চার জন আসে দা-বটি পোড়ানো বা ধার করবার জন্য। তবে প্রতি বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বাড়তি পুজি খাটায়, একটু লাভের আশায়। বর্তমানে কয়লা, লোহা, স্টিলের মালামালের দামও বেশ বেড়েছে।

তুষার নামের অপর কর্মকার জানান, পৈতিৃক সূত্রে পাওয়া এই পেশা। বয়সের বোঝার পর হতেই এই কাজ করে জীবিকা হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন খুলনা অঞ্চলে দিনরাত পাটের কাজ হতো, তখন দম ফেলার মতো সময় ছিল না। নাওয়া-খাওয়া থাকতো না। এক ধ্যানে কাজ করে চলেছি, কখন বেলা গড়িয়ে গেছে টের পাইনি, আর এখন বলতে গেলে সম্পূর্ন নিস্তব্দতা। কোরবানি ঈদের সময় এলে কাজের চাপ বাড়ে। তাই আসন্ন কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে ধার দেনা করে ব্যবসায় নতুন বিনিয়োগ করেছি দু’পয়সা লাভের আশায়। এমনই কথাগুলো বলেছেন একাধীক কামারশালা কর্মকারেরা।

কোরবানি করার জন্য সরঞ্জামাদি মেরামত করতে আসা ক্রেতা রুম্মান জানান, কোরবানী জন্য ইতি মধ্যে গরু ক্রয় করা হয়ে গেছে। হাতে গোটা আর কয়টা দিন বাকি আছে, তাই কোরবানিতে পশুর মাংস কাটাছেঁড়া করার জন্য কামারের কাছে এসেছি দা, ছোরা, কাটারী, বঁটি, ছুরি, মেরামত করবার জন্য।

ব্যবসায়ী মিলন জানান, কোরবানি আনুসঙ্গিক হোগলা, মাদুর, ঝুড়ি সরবরাহ করেছি দোকানে। আশাবাদী ঈদের আগে ভালো মানের কেনাবেচা হবে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে গোটা নগরীর কামারশালগুলো এখন হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখরিত, প্রত্যাশা ভালো ক্রেতা সাড়ার।