ঊষার আলো ডেস্ক : পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে বুধবার (০৬ জুলাই) দুপুর ১২টায় সিপিবি খুলনা জেলা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের আহ্বায়ক নাগরিক নেতা এড. কুদরত-ই খুদা।
বক্তব্যে বলা হয়, গত ২ জুলাই ২০২০ তারিখ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় দেশের ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল পিপিপি’র মাধ্যমে বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে এবং শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসায়ন করা হবে। বিশ্ব বাজারে যখন পাটের চাহিদা বেড়েছে, বেসরকারিভাবে পরিচালিত পাটকলগুলোর যখন লাভবান হচ্ছে এবং পরিবেশ রক্ষার্থে বিশ্বব্যাপী পাটপণ্য ব্যবহারে উপযোগিতা বেড়েছে ঠিক সেই মুহূর্তে লোকসানের অজুহাতে রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো বন্ধের ঘোষণায় দেশবাসী হতবাক হয়। সেই থেকে অদ্যাবধি খুলনার সচেতন নাগরিক, বাম রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠন রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালুর দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। এজন্য তাদের অনেককে জেল-জুলুম ও হয়রাণির শিকার হতে হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ঢাকা-খুলনায় একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান, বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিয়ে সেমিনারের মাধ্যমে পাট মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বার বার যৌক্তিক ও মানবিক দাবি উত্থাপন করা হয়েছে এবং খুলনাসহ ঢাকায় বড় বড় শ্রমিক সমাবেশ ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধের সুযোগে খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা পাটকালসহ ছোট-বড় ১৮টি বেসরকারি পাটকল রয়েছে। কিন্তু বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে ঐ সব মিলে শ্রমিকদের নামমাত্র পারিশ্রমিক দেয়া হচ্ছে। চাকুরিচ্যূত শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে ঐ সকল মিলে চাকুরি করছে। অমানুষিক পরিশ্রম করেও তারা বেঁচে থাকার মত ন্যূনতম মজুরী পাচ্ছে না। অন্যদিকে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী চাকুরিচ্যূৎ শ্রমিকরা বেতন ও আনুষঙ্গিক পাওনা ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৫টি মিলের শ্রমিকরা কোনো পাওনা অর্থ পায়নি। বদলি শ্রমিকরা তাদের পাওনা আদৌ পাবে কিনা তা অনিশ্চিত। আসছে ঈদুল আজহাসহ পর পর ৪টি ঈদ চলে গেলেও এখন পর্যন্ত তারা বোনাস পায়নি। অথচ বিজেএমসি মাথাভারি প্রশাসন নিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছে, পাচ্ছে বেতন-বোনাস সবকিছু। অন্যদিকে মিলের যন্ত্রাংশসহ মূল্যবান সামগ্রী অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে, চুরি হচ্ছে।
বক্তব্যে বলা হয়, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায় পিপিপি’তে মিল পরিচালনা মোটেই ভালো না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, অতীতে যে সকল মিল কলকারখানা বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হয়েছে তার একটি চলেনি। বর্তমানে পরিবহণ, নগরায়ন, পর্যটন, ইকোনমিক জোন, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, শিক্ষা ও শিল্পখাতে মোট ৫৬টি প্রকল্প পিপিপি’তে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকগুলো চুক্তি অনুযায়ী সরকারি পাওনা পরিশোধ করছে না। বরং স্বার্থান্বেষীমহল এসব মিল দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লোন নিয়ে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করছে। সরকারকে এ কথা অনুধাবন করা প্রয়োজন, লক্ষ লক্ষ কর্মঠ মানুষকে কর্মহীন করে দিলে দেশে কেবল ধনি-দরিদ্র বৈষম্যই বাড়বে না, তা দেশের উন্নয়নের ধারাকেও রুদ্ধ করে দেবে। সরকার শ্রমিকদের কারণ পাটকলগুলো লোকসানের যে কথা বলছে তা মোটেই সত্য নয়, লোকসানের জন্য কোনোভাবে শ্রমিকরা দায়ী নয়। বিজেএমসি’র ভুলনীতি, দুর্নীতি এবং তাদের অদক্ষতাই মিলগুলো লোকসানের জন্য দায়ী। সরকারের একটি স্বার্থান্বেষীমহল মিল বন্ধের সকল দায়ভার শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে রাষ্ট্রীয় মিল কলখানা বন্ধ করে ব্যবসায়িক ধনিকশ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করছে। তাদের হাতে তুলে দেয়াই এই ষড়যন্ত্রের মূল কারণ।
বহুল কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ তৈরি হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সকল রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধসহ বিভিন্ন কলকারখানা বন্ধ রেখে কিভাবে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হবে তা প্রশ্নবিদ্ধ। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালুর দাবি জানিয়ে বর্তমান সংকট নিরসনে ৮ দফা দাবি করা হয়। দাবিসমূহ (১) অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু (২) আসছে ঈদের পূর্বে শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ (৩) মিলসমূহ আধুনিকায়ন (৪) বিজেএমসি’কে ঢেলে সাজিয়ে নতুন ব্যবস্থার মধ্যে আনা এবং ইউনিট লেভেলে মিলগুলোকে ক্ষমতায়িত করা (৫) পাটকলসমূহ লোকসানের কারণ চিহ্নিত করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে তা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ (৬) পাটপণ্যের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং নতুন বিশ্ববাজার অনুসন্ধান (৭) সরকারি খাতে পাটশিল্পকে ধ্বংস করার জন্য যারা অশুভ পায়তারা চালাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর হাতে দমন (৮) শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার।
এসময়ে উপস্থিত পরিষদের সদস্য সচিব এস এ রশীদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলÑবাসদ খুলনা জেলা আহ্বায়ক জনার্দন দত্ত নাণ্টু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) খুলনা জেলা সভাপতি মোজাম্মেল হক খান, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) জেলা সম্পাদকম-লীর সদস্য সুতপা বেদজ্ঞ, মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান বাবু, বাসদ জেলা কমিটির সদস্য সচিব কোহিনুর আক্তার কনা, সদস্য আব্দুল করিম, প্রলয় মজুমদার, গণসংহতি আন্দোলন ফুলতলা উপজেলা আহ্বায়ক অলিয়ার রহমান, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন মহানগর সভাপতি আফজাল হোসেন রাজু, রবিউল ইসলাম রবি, শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম, ফারুখ হোসেন, জাহাঙ্গীর সরদার, আবুল হোসেন, নওশের আলী,বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন শেখ প্রমুখ।