UsharAlo logo
শনিবার, ১৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি 

koushikkln
জুলাই ১৮, ২০২২ ১১:৪৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আশিকুর রহমান : সম্প্রতি সময়ে মৌসুম পরিবর্তনের কারনে নগরীর সর্বত্রজুড়ে প্রায় প্রতিটি বাসাবাড়ীতে সববয়সি মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে জ্বর-সর্দি গলাব্যাথার প্রবণতা। ঘন ঘন জ্বর আসছে, কিছু সময় পর চলে যাচ্ছে, ফের আবার কাঁপিয়ে আসছে জ্বর। সেই সাথে তীব্র মাথা ব্যাথাসহ গলা ব্যাথা তো লেগেই আছে। এমন ব্যবস্থা শঙ্কিত অভিভাবকগন। তীব্র জ্বর, সর্দি মাথা ব্যাথা আর গলা ব্যাথা নিয়ে সরকারি, বে-সরকারি হাসপাতাল, ব্যক্তিগত চিকিৎসকের চেম্বারে ছুটাছুটির শেষ নেই। সাধারণত প্রতি বছরই মৌসুম পরিবর্তনের সময় এমন উপসর্গ দেখা যায় সচারচর। তবে যেহেতু সম্প্রতি সময়ে আবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমন কিছুটা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই জ্বর, সর্দি, গলা বা মাথা ব্যাথা অনুভব করায় অনেকই শংঙ্কিত হয়ে পরছেন।

চিকিৎসক সূত্রে জানায়, মৌসুম পরিবর্তনের সময় রোমোটিক ফেভার তথা প্রাথমিক অবস্থায় যে সকল উপসর্গ জ্বর,সদি, কাশি, মাথা বা গলা ব্যাথা দেখা দেয়। ঠিক করোনার উপসর্গও একই। তাই জ্বর, সর্দি, মাথা বা গলা ব্যাথা কয়েকদিন অনুভব হলে চিকিৎসার পাশাপাশি করোনার নমুনা পরিক্ষাও করতে হবে। এ সময় বেশি করে পানি, তরল খাবার ও ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে।

মৌসুম পরিবর্তনের ফলে খুলনার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার বাসাবাড়ীতে প্রায় সকলেরই জ্বর, সর্দি , গলাব্যথা লেগেই আছে। পাশাপাশি শিশুদেরও জ্বর-সর্দি বা শ্বাস কষ্টের প্রবণতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দিন জুড়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসী গুলোতে পুরুষ-মহিলা সহ শিশুদের জ্বর-সর্দি কাশি নিয়ে হাজির হতে দেখা যাচ্ছে ভুক্তভোগীদের। অনেক শিশুদেরকে স্থানীয় ফার্মেসীগুলোতে চিকিৎসকের পরামর্শে দেয়া হচ্ছে নেবুলাইজার। নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়া করোনা আতংকের মধ্যে আবার ঘরে ঘরে জ্বর সর্দি মাথা বা গলা ব্যাথা বাড়িয়ে তুলছে বাড়তি আতংক।

শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর মৌসুম পরিবর্তনের কারণেই শিশু রোগের প্রবনতা বেশ বৃদ্ধি পায়। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের ফলে শিশুরা শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। আজ ১৮ জুলাই (সোমবার) নগরীর শিশু হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ বর্হিবিভাগ, খুলনা সদও হাসপাতাল, নগরীর বিভিন্ন বে-সরকারি ক্লিনিকসহ বয়রা, বাস্তহারা, বৈকালী, গোয়ালখালি, খালিশপুর, দৌলতপুর, দেয়ানা, পাবলা, ঋষিপাড়া, মধ্যডাঙ্গা, রেলিগেট, মানিকতলা, ফুলবাড়ীগেট, সেনপাড়া, শিরোমনি, আটরা, গিলাতলাসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ও বিভিন্ন ঔষুধ ফার্মেসীর সাথে কথা বলে জানা যায় ওইসমস্ত এলাকার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে শিশুসহ সব বয়সী মানুষেরা ভুগছেন জ্বর, সর্দি, কাশি গলা বা মাথা ব্যাথাতে। ছুটে আসছেন ফার্মেসীতে। অনেকেই টিকতে না পেরে সরণাপন্ন হচ্ছে সরকারি হাসপাতাল বা ব্যক্তিগত চেম্বারের চিকিৎসকগনের। মৌসুম পরিবর্তনের কারণে জ্বর-সর্দির ব্যাপক প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশুদেরকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে অভিভাবকগন সরকারী শিশু হাসপাতাল, বেসরকারী ক্লিনিক আর সন্ধ্যার পর শিশু বিশেষজ্ঞদের সরনাপন্নও হচ্ছেন।

ব্যবসায়ী আলামিন জানান, পরিবারের সকলেরই জ্বর। নিজের, বাচ্চার ও বাচ্চার মায়েরও। সকলেই ঔষুধ খাচ্ছি। শ্রাবন মাস চলছে, মাঝে মাঝে বৃষ্টি হবে। কিন্তু বর্ষার কোনো দেখা নেই। বর্ষাকালেও বেজায় গরম পড়ছে। ঘরের ভেতর ভ্যাপসা গরমের অনুভূতি। আমার মনে হচ্ছে অসময়ে এমন গরমের কারনে এই অবস্থা।

কথা হয় রিক্সা চালক শহিদুলের সাথে। তিনি কয়েক দিন ধরে গলাব্যাথা আর জ্বর নিয়ে রিক্সা চালাচ্ছেন, কারণ অসুস্থ হলেও সংসার দেখভাল করার কেউ নেই। তাই তাকে অসুস্থ শরীর নিয়েও রিক্সা চালাতে হচ্ছে। করোনার নমুনা পরিক্ষা করছেন কিনা জিজ্ঞাসা করতে উত্তর মেলে ভয় লাগে। যদি করোনা ধরা পড়ে। তাই নাপা আর এন্টিবায়োটিক খেয়ে যাচ্ছি।

চাকুরীজীবী উদ্ভব জানান, দিনের বেলা প্রচুর রোদ, আবার আকাশে কালো মেঘ। দু’ একফোটা বৃষ্টি, আবার প্রচুর রোদ। ঘরে বাইওে প্রচুর ভ্যাপসা গরম। এমন আবহওয়ার কারনেই মূলত জ্বর, সর্দি মাথা ব্যাথা হচ্ছে। অসুস্থ শরীর নিয়েও রাতে ডিউটি করতে হচ্ছে। কয়েকদিন ঘরে জ্বর আর কাশি। কমছেই না। ফার্মেসী থেকে ঔষুধ কিনে খেয়েছি, কমছেনা। ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে।

কথা হয় অভিভাবক সাদিরার সাথে। তিনি জানান, মেয়ের দু’দিন ধরে জ্বর-সর্দি। প্রথমে নাপা সিরাপ খাইয়েছি। কমছে না। তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছি, যেন দ্রুত হয়ে ওঠে। নইলে আর চিন্তার ঠিক থাকবেনা। এমন একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হয়, যারা জ্বর সর্দি কাশি গলা বা মাথা ব্যাথায় ভুগছেন।

খুলনা শিশু হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার নবজাতক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ এস আরফিন জানান, প্রতি বছরই মৌসুম পরিবর্তনের সময় শিশু রোগের প্রকোপ বাড়ে। বিশেষ করে জ্বর ও জ্বর-সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ ডায়রিয়ার। এ সময় শিশুদের বাড়তি যতœ আর খাবারের দিকে বিশেষ খেয়ালসহ অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন থাকা উচিত।

নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসীগুলোর ফার্মাসিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে জ্বর কাশি, সর্দি, মাথা বা গলা ব্যাথার প্রকোপ বাড়াতে এন্টিবায়োটিক, এন্টিহিস্টামিন, মন্টিলুকাস্ট, কিটোটোফেনসহ লিভোসালভিউটামল ঔষুধের চাহিদা বেশ বেড়েছে।

রিমি মেডিকেল হলের মালিক মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, মৌসুম পরিবর্তনে জ্বর, সর্দি, কাশি ডায়রিয়া রোগে ভূগছে অধিকাংশ শিশুসহ প্রাপ্ত বয়স্করাও। যেহেতু সম্প্রতি সময়ে কিছুটা করোনার সংক্রমনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাই এহেন পরিস্থিতিতে কারো জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা বা মাথা ব্যাথা হলে চিকিৎসা গ্রহনের পাশাপাশি ঘরে থাকা উচিত বলে জানান তিনি।